মুঘল যুগে প্রযুক্তির উপর সংক্ষিপ্ত টিকা লেখো?

 মুঘল যুগে প্রযুক্তির উপর সংক্ষিপ্ত টিকা লেখো?  

মুঘল যুগে প্রযুক্তির উপর সংক্ষিপ্ত টিকা লেখো?


মুঘল যুগে একাধিক সম্রাটদের হাত ধরে শিল্প, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা যেভাবে খ্যাতি অর্জন করেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কিন্তু ততটা খ্যাতি অর্জন করতে পারেনি বা উন্নত ছিল না। লক্ষ্যনীয় যে, ইউরোপে ধর্মের থেকে দূরে যুক্তিকতার একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেই ১৫ শতক থেকে বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। ধর্ম এবং অতীন্দ্রিয়বাদ থেকে নিজেকে পৃথক করতে না পারার কারণেই ভারতবর্ষ এবং ইসলামীয় বিশ্বের অন্যত্র বিজ্ঞানের অগ্রগতি থেকে ব্যাহত হয়েছে। 



সামরিক ক্ষেত্রে, রাসায়নিক খাতে, জাহাজ নির্মাণ, ধাতু বিদ্যায় বেশ কিছুটা অবদান থাকলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তেমন একটা ছিল না। মুঘল শাসকদের মধ্যে আকবরের সময়ে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান ভিত্তিক উদ্ভাবন দেখা গিয়েছিল। আবুল ফজল লিখেছেন, বন্দুকের ব্যারেল পরিষ্কারের জন্য আকবর একটি চাকা আবিষ্কার করেছিলেন, যার গতি দ্বারা খুব অল্প সময়ে ষোলটি ব্যারেল পরিষ্কার করা যেতে পারে। চাকাটি একটি বলদ দ্বারা ঘোরানো হয়। আবুল ফজল দাবি করেন আকবরের অস্ত্রাগারে ম্যাচকর্ড ছাড়াই হ্যান্ডগান তৈরি করা হয়। ইউরোপীয়রা ভারতীয়দের উপহারে পিস্তল দিয়েছে। কিন্তু ভারতীয়রা চাকা লক করার শিল্প শিখেনি। ভারতীয়রা বাঁকা তলোয়ার পছন্দ করত। মুঘল সম্রাট আকবর সর্বোত্তম মানের তলোয়ার ব্লেড তৈরি করে বড় ফাউন্ড্রি তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। আকবর নিজে দামেস্ক স্টিলের তালওয়ার পছন্দ করতেন।


জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে এ সময় মুঘলরা ইউরোপীয়দের কাছ থেকে লোহার ব্যবহার শেখে। লোহার নোঙ্গর, আয়রন চেইন পাম্প প্রভৃতি অনুকরণ করা হয়। সুরাট হয়ে ওঠে জাহাজ নির্মাণের অন্যতম কেন্দ্র। ঔরঙ্গজেবের সবচেয়ে বড় জাহাজ গঞ্জ-ই- সওয়াই ৮০টি কামান এবং ৪০০ টি মাস্কেট দিয়ে সজ্জিত: ছিল। আবুল ফজল আকবরের অস্ত্রাগারে লোহার কামান এবং হ্যান্ডগানের ব্যারেল তৈরির কৌশল বর্ণনা করেছেন। সম্ভবত এই কৌশলগুলি নতুন উদ্ভাবিত হয়েছিল। কামানগুলো ছিল ব্রোঞ্জ, পিতল ও লোহার তৈরি। 



মীর ফতুল্লাহ শিরাজী যিনি ১৫৮৩ সালে আকবরের আদেশে একটি সৌর ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। আবুল ফজল ইউরোপীয়দের দ্বারা আমেরিকা আবিষ্কার সম্পর্কে সচেতন ছিলেন । বাবরের সময় থেকেই মুঘলরা ভারতে মধ্যে এশিয়ার ফল চাষ শুরু করেছিল। বাবরের আমলে অজু পুল নির্মিত হয়েছিল। শাহজাহানের সময় সেচ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছিল। লাহোর আগরা এবং ফতেপুর স্বীকৃতিতে আকবরের পৃষ্ঠপোষকতায় কার্পেট বুনন সিল্ক ও সিল্ক কাপড়ের উৎপাদন শুরু হয়েছিল। বাবুর নামায় কামান নিক্ষেপের, জল ঘড়ির বর্ণনা পাওয়া যায়। জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে হুমায়ুন দিল্লির কাছে একটি ব্যক্তিগত মান মন্দির নির্মাণ করেন। 



বাস্তবে মুঘল আমলে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন কিছু উদ্ভাবন হয়নি বললেই চলে। যা কিছু হয়েছিল ইউরোপীয় প্রযুক্তির অনুকরণ মাত্র। তবে এ সময় মুঘল শাসকগণ সর্বক্ষেত্রে ইউরোপীয় প্রযুক্তি অনুকরণ করেন নি, এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছিল। ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি, কৃষি প্রযুক্তি ও জ্যোতির্বিদ্যা ছিল। অন্যদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞান গ্লাস প্রযুক্তি জল উত্তোলন প্রগতি ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ বা উদাসীনতা লক্ষ্যণীয় ছিল যেমন সময় পরিমাপ  যন্ত্রের ক্ষেত্রে (ঘড়ি), প্রিন্টিং প্রেস প্রভৃতি।



জয়সিংহ লিখেছেন ধর্মবোধ কুয়াশার মতো  মিলিয়ে যায়, সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায় কিন্তু বৈজ্ঞানিকদের অবদান চিরকালই অটুট থাকে। নিকদের অবদান চিরকাল মুঘল আমির ওমরাহ গন আরাম প্রিয় জীবন যাপনে ব্যস্ত, সমুদ্র বক্ষে ইউরোপীয়দের শ্রেষ্ঠত্ব তাদের মনে আশঙ্কা সৃষ্টি করেনি, ঘরের বাইরে পা ফেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জনের কোনো স্পৃহা দেখান নি। এই ধরনের পরিবেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কখনোই বেড়ে উঠতে পারে না। প্রযুক্তিতে প্রধান উদ্ভাবন তখনই ঘটতে পারে যখন প্রযুক্তিগত জ্ঞান ভালোভাবে বিকশিত হয়। যা মুঘল যুগে ছিল প্রায় গৌণ।


তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মুঘল যুগে প্রযুক্তির উপর সংক্ষিপ্ত টিকা লেখো? এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟