নকশবন্দি সুফি ধারা টীকা লেখো?

 নকশবন্দি সুফি ধারা টীকা  লেখো?

নকশবন্দি সুফি ধারা টিকা  লেখো?


মধ্যযুগে মুসলিম সমাজে নতুন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। এই সম্প্রদায়গুলিকে  বলা হতো শিলশিলাহ। এই সম্প্রদায়গুলির মধ্যে এমন কিছু সন্ত ছিলেন যারা বিশেষ কিছু আচরণবিধি প্রবর্তন করেন। আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে বলা হয়েছে আকবরের আমলে এইরকম ১৪ টি ধর্মীয় সম্প্রদায় ভারতে ছিল যার মধ্যে অন্যতম ছিল ৪টি। চিস্তি, সুরাবর্দী, কাদিরি এবং নকশবন্দী। এরাই ছিলেন ভারতে সুফিবাদের প্রভাব প্রবক্তা। সুফী ধর্মের কয়েকটি বিশেষ চরিত্র আমরা এই সময় দেখতে পাই। সুফিদের যিনি ধর্মীয় গুরু ghar হতেন তাকে পীর বা মুর্শিদ বলা হত এবং  শিষ্যরা ছিলেন মুরিদ। সূফীরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত হলেও তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আদান-প্রদান ছিল।


নকশবন্দি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ। তিনি তুর্কিস্তানে বাস করতেন। তবে ভারতে নকশবন্দীকে প্রতিষ্ঠিত করেন খাজা বাকি বিল্লাহ (১৬০৩)। অপর একটি মত হল শেখ আহমদ ফারুক শিরহিন্দ ভারতের নকশবন্দীদের প্রতিষ্ঠা দেন (১৬২৫)। পাঞ্জাব ও ও কাশ্মীর অঞ্চলে নকশবন্দী সম্প্রদায়ের প্রভাব সব থেকে বেশি দেখা যায়। যাইহোক শেখ আহমেদ ফারুক শিরহিন্দ এর নেতৃত্বে নকশবন্দী সম্প্রদায়ের প্রভাব বাড়তে থাকে। 


শেখ আহমদ শিরহিন্দ সমন্বয়বাদী, মানবপ্রেমী, ধর্ম সমন্বয় ও নীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি মনে করতেন যে এই নীতি অবলম্বন করলে ইসলামের মূল আদর্শ ভেঙ্গে যাবে। তিনি ছিলেন ঘোর মৌলবাদী, তিনি আধ্যাত্মবাদ ও ভাববাদকে ইসলামের বিচ্যুতি বলতেন। চিশতি সম্প্রদায়ের রাষ্ট্র ও রাজনীতি হতে দূরে থাকার নীতিকে ও তিনি সমর্থন করতেন না, কারণ তার মতে ইসলামে ধর্ম ও রাষ্ট্র কখনো আলাদা হতে পারে না। রাষ্ট্রকে ইসলামের জন্যই কাজ করতে হয়। তিনি বলতেন যে, যদি আত্মা শুদ্ধ  হয়- দেহ শুদ্ধ হবে, সুলতান যদি খাঁটি মুসলিম হন তবে ইসলামের উন্নতি হবে। আকবরের ধর্ম সহিষ্ণুতা ও সমদর্শী নীতির তিনি বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন যে এর ফলে ইসলামের বিচ্যুতি ঘটতে বাধ্য । 


শেখ আহমদ শিরহিন্দ ইসলামে সমন্বয়েবাদের তীব্র বিরোধিতা করেন। তার এই মতের বিরুদ্ধে অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুরা প্রতিবাদ জানান। বার্নিয়ে ১৭ শতকের মাঝামাঝি ভারতে আসেন তখন তিনি এই মতভেদ লক্ষ্য করেন। লাহোরের মিঞা মির, এলাহাবাদের শাহ মুহিবুল্লাহ এবং যুবরাজ দারাশিকো এই গোড়ামির বিরোধিতা করেন। দারাশিকো উপনিষদের ফারসি অনুবাদ শির-ই-আকবর এবং হিন্দু মুসলিম ধর্ম সমন্বয়বাদের উপর তার বিখ্যাত রচনা  মাজমা-উল- বাহরিন প্রকাশ করেন।


 নকশবন্দ শব্দের অর্থ হলো চিত্রকর, এই সম্প্রদায়ের সন্তরা আল্লাহর মহিমার চিত্র হৃদয়ে ধারণ করেন এই অর্থে  তাদেরকে বলা হতো নকশবন্দী। মূলত এইসম্প্রদায় ছিল সুন্নি ইসলামের একটি প্রধান তারিকা, এই সম্প্রদায়ের সন্তরা হৃদয়ের নিরব ধ্যান অনুশীলন করতেন তাই তাদের নীরব সুফি ও বলা হতো । ভারত উপমহাদেশে এবং মুসলিম বিশ্বের অনেক অঞ্চলে এখনো এই তারিকা বিদ্যমান।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ নকশবন্দি সুফি ধারা টীকা লেখো? এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟