নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চায় ভারতীয় জাতীয়বাদের ব্যাখ্যা সংক্ষেপে বিবৃত করে।

নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চায় ভারতীয় জাতীয়বাদের ব্যাখ্যা সংক্ষেপে বিবৃত করে।

নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চায় ভারতীয় জাতীয়বাদের ব্যাখ্যা সংক্ষেপে বিবৃত করে । 

ভারতীয় ইতিহাসে স্বাধীনতা সংগ্রামের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নিম্নবর্গের এক আধুনিকতম সংযোজন, বিংশ শতাব্দীর নব্বই এর দশকে ভারতে নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চার সূচনা হয় ৷ ঐতিহাসিক রনজিৎ গুহ -এই ইতিহাস চর্চার প্রবক্তা । নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চার সূচনা হয় ইতালীয় লেখক এন্টোনিও গ্রামশির "The prison Notebook" গ্রন্থ থেকে ৷ এর আক্ষরিক অর্থ হলো সেন্যবাহিনীর অধীনস্ত বা নিম্ন পদের অফিসার'। গ্রামশি সার্বালটার্ন বলতে - প্রলেতারিয়েত বা নিম্নবর্গের মানুষের কথা বুঝিয়েছেন।

- রণজিৎ গুহ তার "এলিমেন্টারি এসপেক্ট অফ পিসেন্ট ইনসারজেনসি ইন কেলানিয়াল ইন্ডিয়া" গ্রন্থে নিম্নবর্গের ইতিহাসচোর বিচার বিশ্লেষণ ও তাত্ত্বিক প্রয়োগ ঘটান ৷ উপনিবেশিক ভারতের সমাজ সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নিম্নবর্গের ভূমিকার নির্ধারণ এবং এই সময় বিদেশী শাসনের প্রেতি তাদের মনোভাব এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠিত সংগ্রামের  বৈশিষ্ট্যগুলিকে  ব্যাখ্যা করা হল নিম্নবর্গের ইতিহাসের প্রধান কাজ ৷ এই গোষ্ঠীর ঐতিহাসিকেরা হলেন- পার্থ চট্টোপাঝায় -দীনেশ চক্রবর্তী, সৌতম ভদ্র, ডেভিড আর্নল্ড,শাহিন আমিন, সুমিত সরকার, প্রমুখ। 'রণজিৎ গুহ মনে করেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিম্নবর্গের মানুষই হল প্রধান ৷ তাদের আশগ্রহনের ফলে ভোরতের বৃহৎ বৃহৎ আন্দোলন গুলি সাফল্য লাভ করেছে । অথচ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তাদের কোনো স্থান নেই, আছে শুধু উচুশ্রেণির নেতৃত্বের কর্মকান্ত ।



সাবালর্টান ঐতিহাসিকরা দেখিয়েছেন, নিম্নবর্গেয় মানুদের আন্দোলনের একটি স্বতন্ত্র ধারা ছিল যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভীত কাপিয়ে দিয়েছিল । চম্রারণ সত্যাগ্রহ, রাওলাট সত্যাগ্রহ বা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জনগণের ভূমিকাকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়নি । নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চায় রাজনেতিক বিশ্লেষণ অপেক্ষা প্রাধান্য পেয়েছে সাধারণ মানু্ষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্রিয়া কলাপ আত্মবিশ্বাস, শ্রেণিচেতন্য ইত্যাদি,  নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চায় উঠে এসেছে কৃষক শ্রেণী ও তাদের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম দরিদ্র শ্রমিক কৃষকদের মজুরী রিন্ড বেকারি বর্জন ও বিদ্রোহ ৷



জয়নেন্দ্র পান্ডে দেখেছেন উত্তরপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে নিজস্ব চেতনা থেকে তারা রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠেছিলেন কংগ্রেস দলের সংগঠনিক কাজ শুরু হওয়ার আগে ৷" শাহিদ আমিন, গোরখপুর জেলার দরিদ্র অশিক্ষিত মানুষদের ওপর গান্ধীজীর প্রভাব আলোচনা করেন ৷ গৌতম ভদ্র ১৮৫৭ বিদ্রোহ বিশ্লেষণ করে আন্দোলনের রাজা-রানী জমিদার ও ভূস্বামীদের বদলে শাহমল, দেবী সিংহ গুনু ও মৌলবী আবদুল্লাহ সাহেবের ভূমিকা বিশ্লেষণ করে, এই বিদ্রোহকে নিম্নবর্গের বিদ্রোহ পরিণত করেছেন ৷


ঐতিহাসিক রনজিত গুহ তার গ্রন্থে দেখিয়েছেন নিজস্ব গুণ ও বৈশিষ্ট্য নিম্নবর্গ উচ্চ শ্রেণীর কাছে নগণ্য বলে মনে হয়েছে ৷ নিম্নবর্গের ইতিহাসের সমগ্র বৈশিষ্ট্যতায় চিহ্নিত হয়েছে হিংস্র আদি ও সেকেলে এবং ধর্মীয় উন্মাদনা হিসেবে ৷ ফলে ইতিহাসের নিম্নবর্গ এবং তাদের সংগ্রামী মানসিকতা অনুপস্থিত , এই প্রয়োজন নিম্নবর্গীয় ঐতিহাসিকদের ইতিহাস কে পুনরনির্মাণ করা ৷ পুরানো দলিল দস্তাবেজে নিম্নবর্গের কার্যকলাপ উচ্চ কঠিন লেখকদের পদে তুচ্ছ বলে মনে হয়েছে ৷ তাকে লিখিত আকারে প্রকাশ করেও নিম্নবর্গের ইতিহাস ও তাদের অবদানকে জনগণের দৃষ্টিগোচর করা, নিম্নবর্গের ঐতিহাসিকদের মৌলিক কর্তব্য ৷


ভারতের একটি ইতিহাস চর্চায় নিম্নবর্গের ইতিহাস নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী চিন্তা ধারা ৷ কিন্তু যেভাবে তারা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস কে মেকী এবং উচ্চ কোঠির কার্যকলাপ বলে তাকে "Elilist" আখ্যায়িত করে সমালোচনা করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয় ৷, এদিক থেকে বিচার করলেন নিম্নবর্গের ইতিহাস আসলে সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসের নবরূপ ৷ ভারতের নিম্নবর্গের আন্দোলন যে জাতীয় ও আন্দোলনকে দৃঢ়তা প্রদান করেছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই ৷ কিন্তু এই আন্দোলনের হিংসতাকে যেভাবে করিমন্ডিত করা হয়েছে তা ভারতের অহিংস জাতীয়তাবাদী এই আন্দোলনে পরিপন্থী ৷ সেহেতু বলা যায় নিম্নবর্গের ঐতিহাসিকরা বহুদিনের অন্ধকারে জমে থাকা অজানা-অচেনা ইতিহাসকে এরা লোকচক্ষুর সামনে হাজির করেছেন ৷ এডওয়ার্ড শহীদ লিখেছেন যে,"উচ্চ বর্গের ইতিহাসে জানে নিম্নবর্গের ঐতিহাসিক তা জুগিয়ে ইতিহাসকে পূর্ণতা দিয়েছেন ৷"

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟