নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চায় ভারতীয় জাতীয়বাদের ব্যাখ্যা সংক্ষেপে বিবৃত করে।

- রণজিৎ গুহ তার "এলিমেন্টারি এসপেক্ট অফ পিসেন্ট ইনসারজেনসি ইন কেলানিয়াল ইন্ডিয়া" গ্রন্থে নিম্নবর্গের ইতিহাসচোর বিচার বিশ্লেষণ ও তাত্ত্বিক প্রয়োগ ঘটান ৷ উপনিবেশিক ভারতের সমাজ সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নিম্নবর্গের ভূমিকার নির্ধারণ এবং এই সময় বিদেশী শাসনের প্রেতি তাদের মনোভাব এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠিত সংগ্রামের বৈশিষ্ট্যগুলিকে ব্যাখ্যা করা হল নিম্নবর্গের ইতিহাসের প্রধান কাজ ৷ এই গোষ্ঠীর ঐতিহাসিকেরা হলেন- পার্থ চট্টোপাঝায় -দীনেশ চক্রবর্তী, সৌতম ভদ্র, ডেভিড আর্নল্ড,শাহিন আমিন, সুমিত সরকার, প্রমুখ। 'রণজিৎ গুহ মনে করেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিম্নবর্গের মানুষই হল প্রধান ৷ তাদের আশগ্রহনের ফলে ভোরতের বৃহৎ বৃহৎ আন্দোলন গুলি সাফল্য লাভ করেছে । অথচ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তাদের কোনো স্থান নেই, আছে শুধু উচুশ্রেণির নেতৃত্বের কর্মকান্ত ।
সাবালর্টান ঐতিহাসিকরা দেখিয়েছেন, নিম্নবর্গেয় মানুদের আন্দোলনের একটি স্বতন্ত্র ধারা ছিল যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভীত কাপিয়ে দিয়েছিল । চম্রারণ সত্যাগ্রহ, রাওলাট সত্যাগ্রহ বা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জনগণের ভূমিকাকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়নি । নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চায় রাজনেতিক বিশ্লেষণ অপেক্ষা প্রাধান্য পেয়েছে সাধারণ মানু্ষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্রিয়া কলাপ আত্মবিশ্বাস, শ্রেণিচেতন্য ইত্যাদি, নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চায় উঠে এসেছে কৃষক শ্রেণী ও তাদের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম দরিদ্র শ্রমিক কৃষকদের মজুরী রিন্ড বেকারি বর্জন ও বিদ্রোহ ৷
জয়নেন্দ্র পান্ডে দেখেছেন উত্তরপ্রদেশের গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে নিজস্ব চেতনা থেকে তারা রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠেছিলেন কংগ্রেস দলের সংগঠনিক কাজ শুরু হওয়ার আগে ৷" শাহিদ আমিন, গোরখপুর জেলার দরিদ্র অশিক্ষিত মানুষদের ওপর গান্ধীজীর প্রভাব আলোচনা করেন ৷ গৌতম ভদ্র ১৮৫৭ বিদ্রোহ বিশ্লেষণ করে আন্দোলনের রাজা-রানী জমিদার ও ভূস্বামীদের বদলে শাহমল, দেবী সিংহ গুনু ও মৌলবী আবদুল্লাহ সাহেবের ভূমিকা বিশ্লেষণ করে, এই বিদ্রোহকে নিম্নবর্গের বিদ্রোহ পরিণত করেছেন ৷
ঐতিহাসিক রনজিত গুহ তার গ্রন্থে দেখিয়েছেন নিজস্ব গুণ ও বৈশিষ্ট্য নিম্নবর্গ উচ্চ শ্রেণীর কাছে নগণ্য বলে মনে হয়েছে ৷ নিম্নবর্গের ইতিহাসের সমগ্র বৈশিষ্ট্যতায় চিহ্নিত হয়েছে হিংস্র আদি ও সেকেলে এবং ধর্মীয় উন্মাদনা হিসেবে ৷ ফলে ইতিহাসের নিম্নবর্গ এবং তাদের সংগ্রামী মানসিকতা অনুপস্থিত , এই প্রয়োজন নিম্নবর্গীয় ঐতিহাসিকদের ইতিহাস কে পুনরনির্মাণ করা ৷ পুরানো দলিল দস্তাবেজে নিম্নবর্গের কার্যকলাপ উচ্চ কঠিন লেখকদের পদে তুচ্ছ বলে মনে হয়েছে ৷ তাকে লিখিত আকারে প্রকাশ করেও নিম্নবর্গের ইতিহাস ও তাদের অবদানকে জনগণের দৃষ্টিগোচর করা, নিম্নবর্গের ঐতিহাসিকদের মৌলিক কর্তব্য ৷
ভারতের একটি ইতিহাস চর্চায় নিম্নবর্গের ইতিহাস নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী চিন্তা ধারা ৷ কিন্তু যেভাবে তারা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস কে মেকী এবং উচ্চ কোঠির কার্যকলাপ বলে তাকে "Elilist" আখ্যায়িত করে সমালোচনা করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয় ৷, এদিক থেকে বিচার করলেন নিম্নবর্গের ইতিহাস আসলে সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসের নবরূপ ৷ ভারতের নিম্নবর্গের আন্দোলন যে জাতীয় ও আন্দোলনকে দৃঢ়তা প্রদান করেছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই ৷ কিন্তু এই আন্দোলনের হিংসতাকে যেভাবে করিমন্ডিত করা হয়েছে তা ভারতের অহিংস জাতীয়তাবাদী এই আন্দোলনে পরিপন্থী ৷ সেহেতু বলা যায় নিম্নবর্গের ঐতিহাসিকরা বহুদিনের অন্ধকারে জমে থাকা অজানা-অচেনা ইতিহাসকে এরা লোকচক্ষুর সামনে হাজির করেছেন ৷ এডওয়ার্ড শহীদ লিখেছেন যে,"উচ্চ বর্গের ইতিহাসে জানে নিম্নবর্গের ঐতিহাসিক তা জুগিয়ে ইতিহাসকে পূর্ণতা দিয়েছেন ৷"