দেওয়ানি লাভের পটভূমি ও তাৎপর্য লেখো অথবা, দেওয়ানি লাভের পর্যায়ে গুলি চিহ্নিত কর এবং এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য গুলি আলোচনা করো
মিরকাশিসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে 1763 খ্রীঃ কোম্পানি তাকে পদচ্যুত করে দ্বিতীয় বারের জন্য মীরজাফরকে সিংহাসনে বসায় । 1763 খ্রিঃ মিরজাফরের সঙ্গে ইংরেজদের এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, নবাবের সৈন্যের সংখ্যা সীমিত করে এবং শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের অনুমতি দেয় । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে মিরজাফরের মৃত্যুর পর তার পুত্র নাজাম-উদ-দৌল্লা সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন । তিনি ব্রিটিশদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যাতে বলা হয়েছিল যে (1)। কোম্পানি নবাবের নিরাপত্তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেবে এবং নবাব তার সেনাদল ভেঙে দেবে । (2)। কোম্পানি নায়েব নাজিম রেজা খানকে মনোনীত করেছিল, যাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল (3)। এই 'নায়েব নাজিম' শুধুমাত্র ব্যবসার মাধ্যমে মনোনীত এবং অপসারণ করা হবে । এছাড়াও, নাজাম-উদ-দৌল্লা মুকুটের বিনিময়ে কলকাতা কাউন্সিলের সদস্যদের ১৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
এ ক্ষেত্রে বাংলার কেন্দ্র সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়েছিল । নবাব কোম্পানির হাতে সমস্ত প্রশাসনিক কর্তৃত্ব হারান । অন্যভাবে বললে, বাংলায় তখনকার শাসক কাঠামোর বৈশিষ্ট্য ছিল সীমাহীন বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, স্থানীয় জনগণের উপর অত্যাচার এবং দস্তকের অপব্যবহার । এই দুর্নীতির অবসান ঘটাতে ইংল্যান্ডের পরিচালনা পর্ষদ ক্লাইভকে দ্বিতীয়বার বেঙ্গল গভর্নর পদে মনোনীত করেন । বলা যায় যে ক্লাইভ নিজেও ছিলেন একজন ঘোর দুর্নীতি গ্রস্ত ব্যক্তি ছিলেন এবং যিনি ও অবৈধ পথে অর্থ সংগ্রহ করে । ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বিখ্যাত ধ্বনিতে পরিণত হন । আর অরকম দুর্নীতিগ্রঙ্গ বৃক্তির পরিণত ওপরেই কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
1765 খ্রিস্টাব্দে ক্লাইভ যখন বাংলায় আসেন, তখন তিনি বেশ সমস্যার সমুখীন হয় তার মতে, (1) ব্যবসায়িক সংগঠন হওয়ায় কর্পোরেশন বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে ভৌগোলিক সাম্রাজ্যবাদের পথ অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেয় । ব্যবসায় এত বিশাল অঞ্চলের তদারকি করার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী এবং দক্ষতার অভাব ছিল । (2).কোম্পানি রাজনৈতিক আধিপত্য অর্জনের চেষ্টা করলে ফরাসি এবং ডাচদের সাথে লড়াই করবে ৷ (3). তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে সাম্রাজ্য বাংলার বাণিজ্যকে দুর্বল করে ফেলবে যদি কোম্পানির উন্নতি অব্যাহত থাকে । কোম্পানি অযথা উত্তর ভারতের রাজনৈতিক গোলযোগে জড়িয়ে পড়বে । এরফলে তার বানিজ্য সম্পদ এবং লোক ক্ষয় হবে । ফলস্বরূপ, কোম্পানির লক্ষ্য হওয়া উচিত সাম্রাজ্য বৃদ্ধির পরিবর্তে বাংলায় ব্রিটিশ শক্তিকে দৃঢ় করা, যেহেতু বাংলা অবশেষে সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ শাসনের কেন্দ্রে পরিণত হবে । এইভাবে, ক্লাইভ দিল্লির রাজা এবং অযোধ্যার নবাবের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রথম চেষ্টা করেন ।
কোম্পানি এবং অযোধ্যার রাজা সুজা-উদ-দৌল্লা 1765 খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদের প্রথম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন । এই চুক্তির মাধ্যমে- (a).সুজা-উদ-দৌল্লাকে তার রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়া হয় ও (b).যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে ৫০ লাখ টাকা বঞ্চিত করা হয়। (c). সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, অযোধ্যা যদি কোনো শত্রু রাজ্য রাজ্য দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে কোম্পানি তাকে সাহায্য করবে আনেকে ক্লাইভের এই আচরনকে উদারতা বলেছে ৷ আসলে এটি একটি ক্লাইভের রাজনৈতিক চাল I
কোম্পানি ইচ্ছা করলেই দিল্লি দখল করতে পারত কারণ দিল্লির সম্রাটের বিন্দুমাত্র ক্ষমতা ছিল না তবে, আইনত মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ-আলম ছিলেন ভারতের সর্বময় কর্তা । কোম্পানি এবং দ্বিতীয় শাহ আলমের মধ্যে দ্বিতীয় এলাহাবাদ চুক্তি 1765 খ্রিস্টাব্দে সমাপ্ত হয় । এই চুক্তির মাধ্যমে শাহ আলম কোম্পানিকে বার্ষিক ২৬ লাখ টাকার বিনিময়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি দেন । 1765 খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানী লাভ ভারতীয় ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ।
গুরুত্ব/তাৎপর্য
প্রথমতঃ - কোনো আনুষ্ঠানিক ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও, বক্সারের যুদ্ধে কোম্পানির বিজয় এটিকে একটি সার্বভৌম ক্ষমতায় উন্নীত করে । জাতির মালিক যতই দুর্বল হোক, দিল্লির আইনানুগ শাসক ছিলেন । রাজা তাদের নিয়ন্ত্রণকে বৈধতা দেওয়ার জন্য কোম্পানিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যা তারা বলপ্রয়োগ ও কূটনীতির মাধ্যমে তৈরি করেছিল । ফলস্বরূপ, কোম্পানীর সার্বভৌমত্বের ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং কোম্পানী একটি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে রাপান্তরিত হয় ।
দ্বিতীয়তঃ - দেওয়ানী লাভের ফালে সমকালীন রাজন্যবর্গ জনসাধারণের চোখে কোম্পানীর অবস্থানকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে।
তৃতীয়তঃ - ক্লাইভ ওলন্দাজ, ফরাসি ইত্যাদিকে তুষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন । কর্পোরেশন ঈর্ষা থেকে অংশ নিলে তারা সরাসরি শাসনের বিরোধিতা করবে । ঐতিহাসিক ফার্মিঙ্গার একটি উপমার সাহায্যে বলেন যে- " লেবুর সব রসটুকু চুসে পান করে নিয়ে লেবুর খোলা ও সাস টেবিলে সাজানো ছিল যাতে বিদেশীদের ধার না হয় লেবুটির অবশিষ্ট অংশে তখনও কিছু আছে "।
চতুর্থতঃ - এই নাগরিক সুবিধা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট যথেষ্ট ছিল । এর আগে, ব্যবসা এবং এর শ্রমিকরা শুল্কমুক্ত ব্যবসায় নিযুক্ত ছিল । নাগরিক লাভ অনুসরণ করে বাংলায় ইছামত আয় সংগ্রহের ব্যবসা শুরু হয় । তারা এই অর্থ দিয়ে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করেছিল এবং বাণিজ্য পরিচালনা করেছিল । দেওয়ানী লাভের পর কোম্পানী ভারতের পন্য কেনার জন্য ইংল্যান্ড থেকে অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেয়, অর্থাৎ বাংলার রাজস্বে পন্য কেনা শুরু হয় । এর নাম সম্পদের নির্গমন ৷ অন্য কথায়, মুঘল সম্রাটের ছদ্মবেশে কাজ করার সময় ক্লাইভ কোম্পানির বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্যের ঊর্ধ্বে বাংলার নবাবকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন । ভিন্নভাবে বলা হয়েছে ,এটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে নাগরিক মর্যাদা দেয় এবং পরবর্তী 250 বছরের ভারতীয় আধিপত্যের দরজা খুলে দেয় ।
সম্ভাব্য প্রশ্নঃ -
(১). দেওয়ানি লাভ কি
(২). দেওয়ানি লাভ কত সালে হয়
(৩). ১৭৬৫ সালের দেওয়ানি লাভ
(৪). ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করে কত সালে
(৫). দেওয়ানি লাভ টিকা
(৬). কোন চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানির দেওয়ানি লাভ করে