চার্বাক দর্শন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।
চার্বাক দর্শন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।
যখন প্রতিবাদী ধর্মীয় আন্দোলন জোর কদমে এগিয়ে চলছিল তখন বৈদিক মেহে ধর্মের প্রগতিবাদী প্রবক্তারা আর নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে পারলেন না। বৈদিক ধর্মকে কালোপযোগী ও জনপ্রিয় করার জন্য তাঁরা প্রচলিত বৈদিক ধর্মের সংস্কার সাধন করেন।এর্থৈতিহাসিক যুগ থেকে খ্রি.পূ. ৩০০ অব্দ পর্যন্ত ভারতের সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিবর্তন ১৬৯ যারা যোষণা করলেন, ধর্মে যাগযজ্ঞের বিশেষ উপযোগিতা নেই, সভক্তি আরাধনায় ঈশ্বর এসম হন, ভক্তের বাসনা পূর্ণ হয়। এজন্য বিভিন্ন দার্শনিক চিন্তাধারা গড়ে ওঠে তাদের মান। এই চিন্তাধারার অন্যতম দর্শন ছিল চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন, এই দর্শন ও সম্প্রদায় বার্হস্পত্য নামেও পরিচিত। বৃহস্পতি থেকে বার্হস্পত্য। সম্ভবত বৃহস্পতি এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা।
চার্বাক দার্শনিকদের মতে-যা প্রত্যক্ষ হয় না, তার অস্তিত্ব এই দর্শন স্বীকার করে না। ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। সুতরাং, ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকৃত হয় না। পরজন্মের কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। তাই পরজন্মও স্বীকৃত নয়। কর্মফলও স্বীকৃত হয় না। আত্মা বা চৈতন্য দেহাতীত কোনো বস্তু নয়, তা দেহেরই গুণ, গুড়, চাল ইত্যাদি থেকে যেমন মাদকতা উৎপন্ন হয়, দেহ থেকে তেমনি চৈতন্যের উদয় হয়। দেহ চারটি মৌলিক জড় পদার্থে সমন্বয়ে গঠিত। যথা-ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ইত্যাদি। দেহের বিন্যাসের সঙ্গে আত্মা বা চৈতন্য বিনষ্ট হয়। তার আর পুনর্জন্মের কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
যেহেতু আত্মা বলে কোনো পৃথক সত্তা নেই, ঈশ্বর ও পরজন্মের যখন কোনো অস্তিত্ব নেই, তখন পাপ-পুণ্যের কোনো তাৎপর্য থাকে না। অতএব যথাসম্ভব ইন্দ্রিয় সুখ ভোগ করে নেওয়াই হল মানুষের পুরুষার্থ। চার্বাক দার্শনিকদের মতে-
"যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ।"
এই দর্শনে মানবিক মূল্যবোধের কোনো কথা নেই, সংযম ও নীতির কোনো ভূমিকা নেই। আছে উদরপূর্তি ও ভোগের আহবান। তবে চার্বাক দর্শনও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়, কারণ এই দর্শন কেবল পার্থিব সুখ ও ভোগকে সমর্থন করে, নৈতিক সত্তার ওপর এখানে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না।