মুঘল যুগে ভারতের কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর
ভারতের মৃত্তিকা যেহেতু কৃষি উপযোগী তাই ভারতের অর্থনীতির ভিত্তি ছিল কৃষি ৷ মুঘল সম্রাটদের সময়ও এই কৃষি নির্ভরতা আরও অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায় ৷ ভারতের উর্বর মৃত্তিকার মূলত উৎপাদিত হত ভোগ্যপণ্য ৷ কিন্তু মুঘল আমলে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এর হাত ধরে বাণিজ্যিক ও অর্থকরী কৃষি উৎপাদনের প্রতি কৃষকদের ঝোঁক ক্রমশ বাড়তে থাকে ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
ভারতবর্ষের মৃত্তিকায় একাধিক বৈচিত্রপূর্ণ কিছু উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হলেও এর মধ্যে প্রধান ছিল ধান ৷ এছাড়াও ভারতবর্ষের যুগে একাধিক বৈচিত্রপূর্ণ সবজি পাওয়া যেত ৷ আবার সবজির পাশাপাশি একাধিক ফলেরও চাষ হতো যার মধ্যে অন্যতম হলো আঙ্গুর,আম,কলা,আমলকি,খেজুর ডালিম, কাঁঠাল,বাদাম প্রভৃতি ৷ ভারতবর্ষের সঙ্গে আম উৎপাদনের সম্পর্ক সুপ্রাচীন কাল থেকেই কলা উৎপাদন ছিল বিপুল ও বৈচিত্র পূর্ণ ৷ তবে চাপা কলার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ৷
ভারত বর্ষ মশলা উৎপাদনের জন্যও ছিল বিখ্যাত ৷ ভারতবর্ষের মুঘল আমলে খাদ্যরচনার উৎপাদনেও ঐতিহ্যগত মশলার পাশাপাশি নতুন ধরনের মশলার দিকেও নজর দেয়া হতো ৷ এখানে যে সমস্ত মসলা উৎপাদিত হতো তার মধ্যে অন্যতম হলো আদা, এলাচ, কাবাবচিনি,জিরা,লবঙ্গ,জাফরান,হরিতকী, দারুচিনি প্রভৃতি ৷ এছাড়াও কিসমিস কাজু উৎপাদন ও মোগল ভারতে ব্যাপকতা লাভ করে ৷
ঐতিহাসিক আবুল ফজল ১৬ ধরনের রবি ফসলের উপর খাজনার কথা বলেছেন ৷ পাট ছিল এদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী উপাদান ৷ মুঘল আমলে ফল বাগিচায় যথেষ্ট উৎসাহ দেয়া হতো ৷ কতগুলি ফসল কেউ যেমন তুলো,নীল,পাট,আঁখ,পান,আফিম কে বাজারে ফসল বলা হত ৷ এর বাজার মূল্য ছিল অনেক বেশি । আঁখ মারাইয়ের জন্য মারাই যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয় ৷ মুঘল আমলে সারা উত্তর ভারতেই কম বেশি তুলোর চাষ হতো ৷ বাংলা ছিল এদেশের নতুন এক বড় কেন্দ্র বাংলা ঢাকা ও মনমোহন সিংহ জেলায় তুলো দিয়ে মুসলিহ তৈরি করা হত ।
মুঘল আমলে সবথেকে বেশি রেশম উৎপাদন হতো বাংলায় । অসাম, কাশ্মীর পশ্চিম উপকূলে রেশনের চাষ চলত । অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছিল নীল । তবে সপ্তদশ শতকে নীল চাষের জন্য বাংলা ভিশন খ্যাতি লাভ করেছিল ৷ কাশ্মীরের চেরির ফলন শুরু হয় আকবরের সময় থেকে ।
ঐতিহাসিক আবুল ফজল এক পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছেন যে মুঘল আমলে বিঘা প্রতি গম উৎপাদন হত ১২.৯৬ মন ষোলা ১০.৯৩মন বাজরা ২১.৬২ মণ ৷ ঐতিহাসিক ইরফান হাবিব বলেন ," আকবরের সময় বিঘা প্রতি খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান যা ছিল তা ইংরেজ আমলেও মোটের উপর অপরিবর্তিত হতো ।" অধ্যাপক ইরফান হাবিব বলেন ইংরেজ আমলের তুলনায় মুঘল আমলেও জনপ্রতি উৎপাদন বেশি ছিল কারণ ইংরেজ আমলের তুলনায় মুঘল আমলের জনপতি জমির পরিমাণও ছিল বেশি ।
মুঘল আমলে খাদ্যশস্যর উপর রাজস্ব অপেক্ষা অর্থকরী ফসলের রাজস্ব ছিল অনেকটাই বেশি ৷ খাদ্যশস্যের মধ্যে গমের ক্ষেত্রে রাজস্ব বিঘা প্রতি ৬২.০৪ দাম, চালের ক্ষেত্রে ৬০.৩৬ দাম সেখানে বাণিজ্যিক ফসল নিলের ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি রাজত্ব ছিল ১৫৬.৫২ দাম আর আখ ১৪৭.৭ দাম ৷ খাদ্যশস্য অপেক্ষা অর্থকরী ফসল থেকে রাজশ্য যেহেতু অনেক বেশি তাই এই মুঘল শাসকরা অর্থকরী ও বাণিজ্যিক ফসল উৎপাদনের বেশি আগ্রহ দেখায় ।
উপরিক্ত আলোচনার শেষে এই কথা বলা যায় মোগল ভারতে অর্থ করি ও বাণিজ্যিক কৃষি সম্পন্নের চালিকাশক্তি ছিল ৷ মুঘল ভারতের শিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো কৃষিজাত শিল্প ৷ এই শিল্পের ফলে কাঁচামাল হিসেবে কৃষি যত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায় ফলে মুঘল ভারত থেকে স্বল্প আকারে হলেও কৃষির বাণিজ্যিকরণ প্রক্রিয়া বিকশিত হতে থাকে ৷ আর এই সমস্ত কিছুর ফলেই মুঘল ভারত অর্থ করে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ৷