তুমি কি মনে কর যে বিজয়নগর এবং বাহমনী রাজ্যের মধ্যে যে যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক
অথবা,
বাহমনী ও বিজয়নগর দ্বন্দ্ব সম্পর্কে কি জানো
মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালের প্রায় শেষ দিকে তার দূরদর্শীর অভাবে দাক্ষিণাত্যের দিকে যে সকল স্বতন্ত্র রাজ্যের উত্থান ঘটেছিল বাহমনী রাজ্য ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম । দাক্ষিণাত্যের বিজয়নগর এর রাজারা ছিলেন বাহমনী রাজ্যের প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী ৷ বিজয়ীনগর ও বহমনি রাজ্যের সঙ্গে দীর্ঘ সংগ্রামের পরিণত হয়েছিল এই সংঘর্ষের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বহু মতবিরোধ আছে । ঐতিহাসিক sewell তার "A forgotten Empire" গ্রন্থে ধর্মকে সংগ্রামের কারণ হিসেবে দায়ী করেন কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকেরা রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কারণ কি এই সংঘর্ষের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
প্রায় ২০০ বছর ধরে বিজয়নগর এবং বাহমনী দ্বন্দ্ব চলেছিল ৷ বাহুমনি সুলতানদের ও বিজয়নগরের রাজাদের স্বার্থে সংঘাত হয়েছিল প্রধানত তিনটি পৃথক এলাকা জনিত কারণে ৷ এই তিনটি পৃথক এলাকা হল কৃষ্ণা এবং গোদাবরী নদীর বদ্বীপ এলাকা, তুঙ্গ ভদ্রা দোয়াব এবং মহারাষ্ট্র ৷ হরিহারের মৃত্যুর পর এই সংঘাত শুরু হয় ৷ বাহমনী ও বিজয় নগরের দ্বন্দ্বে মূলত ধর্ম এই বিষয়টি নির্ভর করেননি, মূলত অর্থনৈতিক গুরুত্বের জন্য এই সংঘাত তৈরি হয়েছিল ৷ মূলত তুঙ্গভদ্রা দোয়াব অঞ্চল কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ অন্যতম বড় কারণ হয়ে উঠেছিল ৷ কোঙ্কন কে কেন্দ্র করে মারাঠাওয়াড়া অঞ্চল বিজয়নগর ও বাহুমনি রাজ্যের মধ্যে প্রবাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছিল । কৃষ্ণা গোদাবরী উপকূল অঞ্চলটি ছিল অত্যন্ত উর্বর ও বাণিজ্য সমৃদ্ধ ৷ তাই এই অঞ্চলের অনেকগুলি সমৃদ্ধ ও ব্যস্ত বন্দর থাকার ফলে ব্যাপক বহির্বাণিজ্য সম্ভব হতো এবং কৃষিজ অঞ্চলের ক্ষেত্রে অঞ্চলটি ছিল লাবনীয় ৷ তাই বিজয়নগর ও বাহমনী রাজ্যের দুটি এই অঞ্চলের নিজ আধিপত্য স্থাপনের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন সংঘর্ষে লিপ্ত থাকে ৷
এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলির কারণে বিজয়নগর এবং বাহমানি রাজ্যগুলি প্রায় সামরিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল । এই যুদ্ধের ফলে উভয় রাজ্যই আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ও জীবন নাশ হয়েছিল । বিজয়নগর রাজা বুর্ক রাইচুর দোয়াবের মুদগল দুর্গ আক্রমণ করলে এই দীর্ঘ সংঘর্ষের সূচনা হয় । বাহমনী সুলতান প্রথম মহম্মদ শাহ দুর্গটি উদ্ধারের জন্য প্রতি আক্রমণ করেন দীর্ঘদিন যুদ্ধের পর ও ফলাফল অমীমাংসিত থেকে যায় ৷
প্রথম মহম্মদ শাহের পর তার পুত্র মুজাহিদ শাহ সিংহাসন আরোহন করেন তিনি তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন ৷ কিন্তু বিজয়নগর রাজ্যকে উৎখাত করার তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল । সুলতান দ্বিতীয় মহাম্মদ শাহের রাজত্বকালে বিজয়নগর রাজ্যের সঙ্গে বাহমনী রাজ্যের যে সংঘাত শুরু হয় তা সমায়িত বিরোধী ব্যতীত বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সমগ্র অস্তিত্ব কাল পর্যন্ত চলেছিল । তিনি বিজয়নগর ও তেলেঙ্গানার শাসকদের পরাজয়ের সঙ্গে বিপুল ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করেছিলেন । ডক্টর সতীশ চন্দ্রের মতে, বাহমনী রাজ্যের যে সাংস্কৃতিক ঐক্য গড়ে ওঠে পরবর্তী বাহমনী রাজ্য থেকে উদ্ভূত রাজ্য সমূহেও তা অনুসৃত হয় এবং মধ্যযুগের মুঘল সংস্কৃতি গঠনেও তা প্রভাব বিস্তার করে।"
বাহুবলি রাজ্য দিল্লির সুলতানদের শাসন কালে সমগ্র উত্তর ভারতে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে অক্ষম হয়েছিল বিজয়নগর রাজ্যের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সঙ্গমের কারণে । তাছাড়া বাহমনী রাজ্যের এই দুর্বলতা তাদের পারিবারিক অন্ত কে বাড়িয়ে তুলতে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায় যে বিজয়নগর ও বাহমনী রাজ্যের মধ্যে সংঘাতের প্রধান কারণ গুলি ছিল রাজনৈতিক সামরিক বাণিজ্যিক তথা অর্থনৈতিক। এই যুদ্ধ কোনদিনই ধর্মভিত্তিক বা ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেনি, হ্যাঁ তবে এটি বলা যেতে পারে যে এই সংঘাতে ধর্ম ইন্ধন হিসাবে কাজ করেছিল ।