দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ আলাউদ্দিন খলজির ভূমিকা আলোচনা কর

দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ আলাউদ্দিন খলজির ভূমিকা আলোচনা কর

দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ আলাউদ্দিন খলজির ভূমিকা আলোচনা কর 

                    অথবা, 

আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপ পর্যালোচনা 

দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ আলাউদ্দিন খলজির ভূমিকা আলোচনা কর                      অথবা,  আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপ পর্যালোচনা


ক্ষুদ্র দিল্লি কেন্দ্রিক সুলতানি ভারতকে যিনি প্রায় অসমুদ্র হিমাচল ব্যাপী ব্যাপ্ত ও প্রসারিত করেছিলেন তিনি হলেন সুলতানি সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ ভারতের দ্বিতীয় আলেকজান্ডার বা আলাউদ্দিন খলজী ৷ যিনি ১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে অনুষ্ঠিত হন আলাউদ্দিন ছিলেন অসীম সাহসী চতুর ও সুনিপুণ যোদ্ধা ৷ সুলতান জালালউদ্দিন খলজির সময় এলাহাবাদের কারা প্রদেশের শাসনকর্তা থাকাকালীন তিনি বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের চেষ্টা করেন ৷ তাই সুলতান হবার পর তিনি সর্বশক্তি নিয়ে তার সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপ আত্মনিয়োগ করেন ৷ সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ ভারত আলাউদ্দিনের সেনাবাহিনীর পদতলে পিষ্ট হয় ৷



আলাউদ্দিনের উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন ভিন্নতর ৷ উত্তর ভারতের অভিযানগুলির মধ্যে দিয়ে আলাউদ্দিন খলজি প্রত্যক্ষ সীমারেখা দিয়ে সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটাতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু দক্ষিণ ভারতের অভিযানের পশ্চাতে এই অঞ্চল গুলির অফুরন্ত ধন-সম্পদ লাভই ছিল সুলতানের প্রকৃত উদ্দেশ্য ৷ তাই দক্ষিণ ভারত অভিযানের সফল সম্পত্তির পর সেই অঞ্চলগুলিকে প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের না এনে সেখানে শাসনকর্তা নিয়োগ করেন নির্দিষ্টকরের বিনিময়ে ৷ তবে উভয় ক্ষেত্রেই তার আক্রমণের লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদ ।


আলাউদ্দিন খলজি উত্তর ভারতের গুজরাট রাজ্যটি প্রথম আক্রমণ করেন ৷ ঐতিহাসিক হেগ বলেন গুজরাট বিজয়ের মধ্যে দিয়ে দিল্লি সাম্রাজ্যের সম্পসারনের শুরু হয় গুজরাটের শাসক রাজা কর্ণদের বিশাল সৈন্যবাহিনীর সম্মুখে যুদ্ধ না করেই কন্যা দেবলাসহ দক্ষিণ ভারতের রামচন্দ্র দেবের নিকট পালিয়ে যান ৷ ফলত আলাউদ্দিন সহজেই গুজরাট বিজয় সম্পন্ন করেন এবং তাকে বিবাহ করেন ৷ এরপর তেরোশো এক খ্রিস্টাব্দে রণথম্বর অভিযান করেন এবং জয় করেন ৷ এরপর ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি চিতর অভিযান করেন চিতরের রাজা রতন সিং প্রায় সাত মাস ধরে চিতার অবরোধের পরেও রাজপুতরা আত্মসমর্পণ না করেই তীব্র যুদ্ধের পান বিসর্জন দেন এবং রানা রতন সিংহ নিহত হন। এরপর আলাউদ্দিন রাজ্য নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন ৷ এরপর কাশ্মীর নেপাল এবং উত্তর-পশ্চিম পাঞ্জাবি কিছুটা ব্যতীত সমগ্র উত্তর ভারত সুলতানি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে ৷


উত্তর ভারত বিজয় সম্পন্ন করে আলাউদ্দিন খলজী দক্ষিণ ভারত বিজয়ের দিকে অগ্রসর হন । তিনি দক্ষিণ ভারতের দেবগিরি,তেলেঙ্গানা প্রভৃতি রাজ্য জয় করেন ৷ এরপর গুজরাটে পলায়ন রাজা কর্ণদেব কে আশ্রয় দেওয়ার অজুহাতে আলাউদ্দিন খলজী বিশাল সৈন্যবাহিনী সহ দেবগিরি রাজা রামচন্দ্র দেব কে আক্রমণ করেন এবং পালিয়ে আসার রাজা কর্ণদেব এবং তার কন্যার দেবলা দেবীকে বন্দী করে রাখা হয় ৷ আলাউদ্দিন এরপর তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান পাঠিয়ে শেষ পর্যন্ত এক সন্ধির দ্বারা তেলেঙ্গানা রাজ্য থেকে ১,০০০ হাতি ১,০০০ এবং প্রচুর ধনসম্পদ দিল্লিতে নিয়ে আসেন ।


আলাউদ্দিনের সেনাপতি মালিক কাঁপুর এরপর হৈশল রাজ্য আক্রমণ করেন হৈশল রাজ্য জয় করে প্রচুর ধনরত্ন নিয়ে মালিক কাফুর সন্তুষ্ট হন এবং বাৎসরিক কর প্রদানের শর্তে হৈশল রাজ্যের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয় ৷ এরপর মালিক কাফুর পাণ্ডু রাজ্য আক্রমণ করেন ৷ আমির খসরুর বিবরণ থেকে জানা যায় মালিক কাফুর রামেশ্বরম পর্যন্ত অগ্রসর এবং সেখানকার বিখ্যাত মন্দির ধ্বংস করে প্রচুর সম্পদ লুট করেন ৷


এইভাবে উত্তর ভারতের পর সমগ্র দক্ষিণ ভারতকে একে একে সুলতানি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন ৷ তবে কর প্রদানের বিনিময়ে ও যুক্তির দ্বারা আলাউদ্দিন দক্ষিণী রাজ্যগুলির তাদের শাসকদের হাতে ফিরিয়ে দেন ৷ আলাউদ্দিন দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিকে করদ রাজ্যে পরিণত করতে অধিক মাত্রায় উৎসাহী ছিলেন ৷ তবে বহু ঐতিহাসিক আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য অভিযানকে নিষ্ফল বলে মনে করেন ৷এ প্রসঙ্গে বলা হয়," it was neither complete not permanent"। তবে দক্ষিণ ভারত বিজয় আলাউদ্দিনকে অফুরন্ত সম্পদ প্রদান করে যা সুলতানি সাম্রাজ্যের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধি করে ৷



About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟