অষ্টাদশ শতকে কি অবক্ষয়ের যুগ বলা হয় নাকি পরিবর্তনের অথবা,অষ্টাদশ শতক কি অন্ধকারময় যুগ অথবা অষ্টাদশ শতক কি অবক্ষয়ের যুগ

অষ্টাদশ শতকে কি অবক্ষয়ের যুগ বলা হয় নাকি পরিবর্তনের অথবা,অষ্টাদশ শতক কি অন্ধকারময় যুগ অথবা অষ্টাদশ শতক কি অবক্ষয়ের যুগ

 অষ্টাদশ শতকে কি অবক্ষয়ের যুগ বলা হয় নাকি পরিবর্তনের  অথবা,অষ্টাদশ শতক কি অন্ধকারময় যুগ অথবা অষ্টাদশ শতক কি অবক্ষয়ের যুগ

অষ্টাদশ শতকে কি অবক্ষয়ের যুগ বলা হয় নাকি পরিবর্তনের

ভারতের ইতিহাসে অষ্টাদশ শতকের বৈশিষ্ট্য নিয়ে ঐতিহাসিক দের মধ্যে নানা বিতর্ক দেখা যায় ৷ কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন এই সময় ভারত বর্ষ সমৃদ্ধির যুগ ৷ আবার কারোর মতে এই সময় ভারতবর্ষের অর্থনীতি ও সমাজ অবক্ষয়ের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল ৷ ওপর একজন ঐতিহাসিক মনে করেন যে অতীতের সঙ্গে কোন ভারতীয় ইতিহাসে অষ্টাদশ শতকে পরিলক্ষিত হয়নি ৷ ব্যার্টনস্টাইল , ব্রেইলি,সতীশচন্দ্র প্রমুখো ইতিহাসবিদ অষ্টাদশ শতাব্দীর ধারাবাহিকতার উপরে জোর দিয়েছেন ৷ অন্যদিকে ইরফান হাবিব,আতাহার আলি প্রমুখ এই শতাব্দী ধ্বংস ও ভাঙ্গনের লক্ষ্য করেছেন ৷ ঐতিহাসিক ইরফান হাবিবের মতে লুণ্ঠন, অরাজকতা,বিদেশীদের রাজ্য জয়ের শতাব্দী ৷


আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

ড. মোজাফর আলম তার পাঞ্জাব ও অযোধ্যা সংক্রান্ত গবেষণা পত্রে দেখেছেন যে,"সপ্তদশ শতকে মুঘল শাসনে এই দুই অঞ্চলের যে আর্থিক সমৃদ্ধি দেখা দিয়েছিল অষ্টাদশ শতকে সেই ধারায় পরিলক্ষিত হয়েছিল ৷" কোন কোন ঐতিহাসিক এই শতককে অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ বলে চিহ্নিত করেছেন ৷ এদের মতে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের ফলে রাজনীতির সর্বস্তরে প্রশাসনিকের এক অরাজকতা ও নৈরাজ্য দেখা দিয়েছিল ৷ এর ফলে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছিল,কেন্দ্রীয় দুর্বলতা ও ঘনঘন বৈদেশিক আক্রমণের ফলে দিল্লির অর্থনৈতিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছিল ৷ অনেকেই এই শহর ছেড়ে চলে যায় এবং পন্যদ্রব্যের বাজার হিসাবে দিল্লির গুরুত্ব হ্রাস পায় ৷ জীবিকার সন্ধানে অনেক শিল্পী ও কারিগর দিল্লি ছেড়ে অন্য শহরে ভিড় করতে থাকে ৷


আগ্রা,পাঞ্জাব,লাহোরের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয় বাংলাতেও অবস্থা ভালো ছিল না । কারণ এই সময় মারাঠা আক্রমণের ফলে ভারতীয় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয় ৷ সুতী ও রেশম বস্ত্র তৈরীর কারিগররা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যেতে থাকে, ফলে উৎপাদন আরও কমে যায় । এর ফলে জায়গিরদারী সংকট বেড়ে যায় ইজারা প্রথার ব্যাপক প্রসার ঘটে, একদিকে মুদ্রাস্ফীতি ভয়ংকর রূপ নিলেও অন্যদিকে ভারতীয় সম্পদ নিগমনের প্রক্রিয়া তীব্রতর হয় ৷ অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে অবশিল্পায়নের বিকাশ ঘটতে থাকে ৷ ইরফান হাবিব এর মতে প্রাক অবশিল্পায়ন ভারতে পুজিসাম্রাজ্য ও উৎপাদন ব্যবস্থার পুঁজিবাদী বিকাশ সম্পর্কে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি । উপনিবেশিক অর্থনীতির বিকাশ স্বাভাবিক ভেষজ বাণিজ্যিক পুজির প্রসারের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৷


কিন্তু সাম্প্রতিককালের অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে ভারতবর্ষের ইতিহাসে অষ্টাদশ শতক অবক্ষয়ের যুগ নয়,অরজ কথার শতবর্ষ নয়, সামগ্রিক ও অবক্ষয়েরও যুগ নয়, এই সময় অবক্ষয়ের পরিবর্তে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেখা দিয়েছিল ৷ ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মনে করেন স্বাধীন প্রাদেশিক রাষ্ট্র কাঠামোর উত্থান ঘটেছিল তারা তার ফলে সর্বত্র অরাজকতার সূত্র সূত্রপাত ঘটেছিল ৷" এ কথা বলা ঠিক নয় ভারতের নানা জায়গায় সুদক্ষ ও শক্তিশালী আঞ্চলিক শাসনব্যবস্থার উত্থান ঘটেছিল ৷ সাম্প্রতিক কালের গবেষণায় দেখা গেছে যে,"এই সময় মুঘলদের সেনাবাহিনী ও কেন্দ্রীয় প্রশাসন ভেঙ্গে পড়লেও তা সাধারণভাবে আর্থরাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের সূচিত করেননি ৷"


কালিকিঙ্কর দত্তের মতে,"এই অষ্টাদশ শতক ছিল দুঃসাহসিক ভাগ্যান্বেষীদের যুগ, এই যুগের সামান্য তরবারির সম্বল করে মুঘল সাম্রাজ্যের উপর একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন ৷" বাংলার কৃষি শিল্প বাণিজ্য খুব উন্নত ছিল ৷ ধর্ম কুমার মনে করেন," আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধকে বিভাজন রেখা বলে চিহ্নিত করা যুক্তিযুক্ত নয় ৷" সতীশ চন্দ্র মনে করেন," ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের আগে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের প্রভাব তেমন ভাবে ভারতে পড়েন নি ৷" মোজাফর আলম এর মতে,"এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে অযোধ্যা , বৈরলী,বেনারস প্রভৃতি অঞ্চলে কৃষি জমির পরিমাণ ৮-২৭% হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল।"


অষ্টাদশ শতকে কৃষির মতই অভ্যন্তরীণ ও বর্হিবাণিজ্য ক্রমাগত সম্প্রসারণ এর ফলে গ্রামীণ কারিগরি শিল্পের বাণিজ্যিকরণ আরম্ভ হয়েছিল ৷ এই সময় ভারতের নগরায়নের বড় রকমের ক্ষতি হয়নি ৷ বহিঃ শত্রুর পুনরুত্থান আক্রমণ সত্ত্বেও দিল্লি,আগ্রা ও লাহোরের মতো পুরনো শহর ছিল কিন্তু অষ্টাদশ শতকের সমাজ ও সংস্কৃতিতে রক্ষণশীল অবক্ষয়ের লক্ষণ স্পষ্ট ৷ মুঘল যুগের শেষ পর্বে শিক্ষা ও সংস্কৃতিক চরম অবনতি ঘটে ৷ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিচার বুদ্ধিতে পাশ্চাত্য জীবনধারার আমূল পরিবর্তন ঘটলেও এই সময় ভারতের শিক্ষার উন্নতি ঘটেনি । এই সময় শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্লভ দিক ছিল পশ্চিমী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যায় শিক্ষার অনুগ্রসরতা ৷


তবে আধুনিক গবেষণার ভিত্তিতে বলা যায় অষ্ঠাদশ শতকে ভারতের অর্থনীতির যথেষ্ট সরল ও গতিশীল ছিল ৷ ডক্টর সতীশ চন্দ্র লিখেছেন যে," ভারতের শিল্প বিপ্লব ঘটানোর উপযোগী সবকিছুর উপকরণ ছিল ৷ উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদকে শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হতে দেয়নি ৷ যে ভারতবর্ষ এশিয়ার অগ্রণী উৎপাদককে পরিণত হতে পারত তাকে পুঁজিবাদী অর্থনীতির কাঁচামাল সরবরাহকারী ও শিল্প পণ্যের বাজার করে রেখেছিল ৷"

                             ~সমাপ্ত~

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟