দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে কী বোঝ?
![]() |
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যের ক্ষতের সাথে যুক্ত। এটা সত্যিই সহজভাবে একটি উপমা. দাক্ষিণাত্যের ক্ষত বলতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের দীর্ঘকাল ধরে দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধে জড়িত থাকার এবং পরবর্তী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক যন্ত্রণাকে বোঝায় যা শেষ পর্যন্ত তার পতনে অবদান রাখে । নেপোলিয়ন বোনাপার্টের স্পেনীয় সমস্যা বা স্পেনীয় ক্ষত পতনের দিকে নিয়ে গিয়েছিল ঠিক তেমন ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বের প্রথম দিকে মহারাষ্ট্রের উত্থান একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের বিষয় ছিল । দাক্ষিণাত্যের মুঘল সম্রাটরা তাদের শাসনের প্রথম বিশ বছরে খুব বেশি সাফল্য পাননি । দাক্ষিণাত্য ও মহারাষ্ট্রের সুলতানারা প্রায় স্বাধীনভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে । ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে শিবাজীর মৃত্যুর পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি । তারপর, যুবরাজ আকবরের বিদ্রোহ এবং মারাঠা সেনাপতি শম্ভুজির সহায়তার কারণে আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হন । যদিও তিনি মারাঠাদের কিছু কিছু দুর্গ পুনরায় অধিকার করে, তথাপি মারাঠাদের সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করতে তিনি ব্যর্থ হন । এরপর তিনি গোলকুন্ডা ও বিজাপুরে মনোযোগ দেন । দাক্ষিণাত্যের বিরুদ্ধে তার জোরালো অভিযান ছিল সাম্রাজ্যবাদী নীতি এবং শিয়া জনগণের নির্বাসন উভয়েরই ফল, উভয় রাজ্য জয় করা সত্ত্বেও তিনি দাক্ষিণাত্যের দ্বন্দ্বের সমাধান করতে পারেননি।
এলফিনস্টোন এবং ভিনসেন্ট স্মিথের মতো কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, দাক্ষিণাত্যের সুলতানি শাসনের ধ্বংস সাধন ঔরঙ্গজেবের ভ্রান্ত নীতি ছিল বা অরাজনৈতিক পদক্ষেপ ছিল । এই ভ্রান্ত কৌশলটি মারাঠাদের বিরোধিতা থেকে স্থানীয় কোনো প্রতিরোধকে বাধা দেয় । তারা সম্রাট আওরঙ্গজেবের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে লাভবান হবে । যাইহোক, স্যার যদুনাথ সরকার উল্লেখ করেছেন যে,"মারাঠাদের মধ্যে সেই সময়ে যে নতুন শক্তির সঞ্চার করেছিল তা দুর্বল ও পতন মুখো দাক্ষিণাত্যের সুলতানদের সাহায্য নিয়েও সম্রাট ঔরঙ্গজেবকে দমন করতে পারতেন না। দাক্ষিণাত্যের সুলতানদের দিক থেকেও তা কোনমতেই সম্ভব ছিল না ৷"
সম্রাট আওরঙ্গজেব 1690 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় সমগ্র ভারত শাসন করেছিলেন । দুপুরের সূর্য গগনে অবস্থানের মত ছিল । যাইহোক, তার বিশাল সাফল্যও তার পতন ঘটায় । তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের সমস্ত সমস্যা নিজে থেকে সমাধান করতে পারেননি । স্বায়ত্তশাসিত স্থানীয় শাসকদের বিকাশ, আর্থিক দুর্ভিক্ষ, অভিজাতদের অসন্তোষ এবং বিদ্রোহ সবই বিস্তৃত সমস্যায় অবদান রাখে । দাক্ষিণাত্যে দীর্ঘ বিশ বছর অতিবাহিত করার পরও তিনি সমস্যার সমাধান করতে পারেননি । তাই বলা হয়েছে যে, দাক্ষিণাত্য ক্ষত ঔরঙ্গজেবের পতনের জন্য অনেকখানি দায়ী।