কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট সম্পর্কে কী জান? এর গুরুত্ব কী ছিল। || অথবা, কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও || অথবা , কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট বলতে কি বোঝো? ঠান্ডা লড়াইকে এটি কত দূর প্রভাবিত করেছিল?

কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট সম্পর্কে কী জান? এর গুরুত্ব কী ছিল। || অথবা, কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও || অথবা , কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র স

কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট সম্পর্কে কী জান? এর গুরুত্ব কী ছিল। || অথবা, কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও || অথবা , কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট বলতে কি বোঝো? ঠান্ডা লড়াইকে এটি কত দূর প্রভাবিত করেছিল? 

কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট সম্পর্কে কী জান? এর গুরুত্ব কী ছিল। || অথবা, কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও || অথবা , কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট বলতে কি বোঝো? ঠান্ডা লড়াইকে এটি কত দূর প্রভাবিত করেছিল? || What do you know about the Cuban Missile Crisis? What was its Importance?  


কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বীপ কিউবার ক্ষেপণাস্ত ঘাঁটি নির্মাণকে কেন্দ্র করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক স্বল্পকালীন দ্বন্দ্ব শুরু হয় যার নাম কিউবার ক্ষেপণাস্ত সংকট ৷ এই সংকটকে কেন্দ্র করে বিশ্ব এক আণবিক যুদ্ধের মুখোমুখী এসে উপস্থিত হয় । শেষপর্যন্ত সোভিয়েত রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্রশ্চেভ- এর তৎপরতায় সমগ্র বিশ্ব একটি বিশ্বংসী আণবিক যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল ।

 ১৮৯৮ সালে স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকেই কিউবা আমেরিকার মুখাপেক্ষী ছিল । এই সুযোগ নিয়ে মার্কিন প্রজাপতিরা কিউবার অর্থনীতির মূল ভিত্তি আক্কের খেতে ৪০ ভাগ দখল করে নেন ৷ ১৯০৩ সালে প্ল্যাট চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকা সরকার কিউবার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সকল ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে থাকে । ১৯৩৪ সালে এই চুক্তি বাতিল হলে কিউবা অর্থনৈতিক ভাবে একটি মার্কিন উপনিবেশে পরিণত হয় । ফলে কিউবার সাধারণ মানুষ প্রবল দুর্দশার মধ্যে পড়ে । কিউবার উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখার লক্ষ্যে আমেরিকা তার অনুগামী ফ্যালজেনিকো বাতিস্তাকে 1945 খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি পদে বসান ৷ 

 বাতিস্তা সরকারের পিছনে কোনো জনসমর্থন ছিল না । তাঁর স্বৈরাচারী শাসনে জনগন অতিষ্ট হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে কিউবার ছাত্রনেতা ফিদেল কাস্ত্রো তীব্র সরকারি আন্দোলন গড়ে তোলেন কোমর সহ জনসমর্থন আদায় করে এক বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের দ্বারা বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটিয়ে কাস্ত্রো ক্ষমতা দখল করেন ৷ ক্ষমতা লাভের পর কাস্ত্রো সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার সাথে মৈত্রী স্থাপন করেন।


কিউবার রাষ্ট্রপতি ফিদেল কাস্ত্রো জনগনের উন্নতির জন্য বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেন । তিনি বড়ো বড়ো খামার বৈদেশিক শিল্প ও ব্যাকস্যকে জাতীয়করণ করেন । কাস্ত্রোর এই সকল কার্যকলাপে আমেরিকা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে কিউবার সাথে সমস্ত বাণিজ্যিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে । এদিকে এই সময় সোভিয়েত রাশিয়া কিউবাকে সর্বপ্রকার সাহায্য করে ।


আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে এরকম কার্যকলাপে অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয়ে নানাভাবে কাজ তো সরকারের পতনের পরিকল্পনা নেন মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের গোপনীয়তা ১৪ ভাড়া মার্কিন জাহাজে করে কিউবার ক্লোরাইডো উপকূলের কাছে পিগ উপসাগরে পৌঁছায় ৷  তাদের সাহায্যের জন্য মার্কিন--বি-২৬ বোমারু বিমান প্রস্তুত ছিল । কিন্তু কিউবান সেনাবাহিনী এই বিদ্রোহ খুব সফলভাবে দমন করে । সারা বিশ্ব এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করলেও মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেনেডি ঘোষনা করেন যে, কিউবাকে কমিউনিস্টদের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না ।  এই পরিস্থিতিতে কিউবাকে রক্ষা করতে ফিদেল কাস্ত্রো সরকার ৫০ লক্ষ কিউবাবাসীকে রক্ষা করার জন্য রাশিয়ার সাহায্যে কিউবা একটি ক্ষেপণাস্ত ঘাঁটি করার সিদ্ধান্ত নেন । সোভিয়েত রাশিয়াও এই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল ।

 ১৯৬২ সালে আমেরিকা তার গুপ্তচর বিমানের তোলা চিত্রের মাধ্যমে কিউবার সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র খাঁটি সম্বন্ধে জানতে পারে । মার্কিনরা বিভিন্ন দেশে এর পূর্বে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মান করেছিল । সোভিয়েত রাশিয়া এই প্রথমবার এই কাজ করেছিল। তাহা সত্ত্বেও মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেনেডি এই সংবাদে বিচলিত হয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি অপসারণের জন্য সচেষ্ট হন।  মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেনেডি এই উদ্দেশ্যে এক বেতার ঘোষণার দ্বারা কিউবার চারদিকে নৌ-অবরোধের আদেশ দেন। তিনি ঘোষণা করেন, কিউবাগামী সোভিয়েত রাশিয়া সহ সমস্ত দেশের জাহাজ যথাযথ অনুসন্ধানের পরেই তাহা কিউবায় প্রবেশের অনুমতি পাবে।

এই মার্কিন ঘোষণায় রাশিয়া প্রবল ক্ষিপ্ত হয় । রাশিয়া স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে, কিউবাগামী যে-কোনো সোভিয়েত জাহাজ বাধাপ্রাপ্ত হলে যেন সাথে সাথে গুলি চালানো হয় । এভাবে বিশ্বে এক যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি হয় । এই সংকটাপন্ন অবস্থায় কিউবা, রাশিয়া ও আমেরিকা- এই তিনটি দেশই বিষয়টি রাষ্ট্রপুঞ্জে উত্থাপন করে । জাতিপুঞ্জের মহাসচিব উ থান্ট ও বিশ্বের জোটনিরপেক্ষ বিভিন্ন রাষ্ট্র শান্তির জন্য দুপক্ষের কাছে অনুরোধ করে । অবশেষে ক্রুশ্চেভ কেনেডিকে জানান যে তাঁরা কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র অপসারণ করবে, যদি এই শর্তগুলি মানা হয়- 
ক) আমেরিকা কিউবা আক্রমণ করবে না।
খ) কিউবা থেকে নৌ- অবরোধ প্রত্যাহার করে।
গ) তুরস্ক থেকে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি অপসারণ করে।




■ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সকল দাবি না মানলেও রাশিয়া কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । আমেরিকাও কিউবা থেকে অবরোধ তুলে নেয় । 

কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের গুরুত্বঃ

  1. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হয় । এর ফলে আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হয়।
  2. উভয় দেশের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের বরফ কিছু পরিমাণে হলেও গলতে শুরু ৷
  3. রুশ এবং মার্কিন উভয় পক্ষ পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পরে। এর ফলে বিশ্ব ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়।
  4. ঠান্ডা লড়াইয়ের দুর্বলতাগুলি এই দুই শক্তিধর দেশের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে ৷
  5. এই সংকটের এক গুরুত্বপূর্ণ পরিণত হলো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিরোধ যুক্তির স্বাক্ষর ৷ ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকা ও ফ্রান্সের মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ৷
  6. কিউবার রাষ্ট্রপতি কাস্ত্রো কমিউনিষ্ট ছিলেন না। কিন্তু এই সংকটের পর তিনি নিজেকে মার্কসবাদী বলে ঘোষণা করেন। এভাবে আমেরিকার একেবারে কাছাকাছি একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়।


অবশেষে সোভিয়েত রাশিয়া কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত ঘাঁটি সরিয়ে নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার বিরুদ্ধে নো অবরোধ তুলে নেন এইভাবে দুই মহাশক্তিদার রাষ্ট্রের শুভ বুদ্ধির প্রভাবে বিশ্বে একটি সর্বনাশা মহাযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা পায়।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟