ইউরোপীয় শিল্প স্থাপত্যের উপর রেনেসাঁস মানবতাবাদের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর । অথবা, ইউরোপের শিল্প স্থাপত্যের উপর রেনেস্বর মানবতাবাদের প্রভাব আলোচনা কর
পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের নবজাগরণের ফলে নতুন করে জীবনে যে জাগরন শুরু হয়েছিল তার প্রধান কারণ ছিল মানবতাবাদ ও মানবতাবাদী দার্শনিক ৷ মানবতাবাদীরা এই সময় থেকে মানুষকে নতুন করে তার নিজের স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে । রেনেসাঁ শব্দের অর্থ ব্যাপক ও বিস্তৃত ৷ রেনেসাঁ বলতে বোঝায় নবজাগরণ বা পুনর্জন্ম ৷ মহিষী অন্নদাশঙ্কর রায় রেনেসাঁ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, "আধিকারের মত প্রথম লক্ষ্য হলো দিব্যচেতনার পরিবর্তে মানবিক চেতনা, ব্রহ্ম জ্ঞানের পরিবর্তে বস্তু জ্ঞান, পরলৌকিক বা অলৌকিক কার্যক্রম পূরণ করার পরিবর্তে ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক কার্যকরণ, ভক্তির পরিবর্তে যুক্তি বাক্যের পরিবর্তে প্রমাণ সিদ্ধ বাক্য এবং অথোরিটির পরিবর্তে রিকারটি ৷"
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
রেনেসাঁ সর্বব্যাপী প্রভাব শিল্প জগৎকেও আলোক বৃত্তে পরিস্ফুট করে তোলে ৷ শিল্প জগৎকে করে তুলেছিল জীবন্ত ও মানবিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ৷ আর এই নতুন ধারাই শিল্প স্থাপত্যে যাদের চেতনে, মননে সংবেদনে সর্বোপরি শৈল্পিক হস্তে সমৃদ্ধ হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন লিওনার্দো-দ্যা-ভিঞ্চি, রাফায়েল, মাইকেল এঞ্জেলো,দোনাতলে,ম্যাসাচিত্ত প্রমূখ ৷
মানব মানবিক পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে চিত্রায়িত করা শুরু হয়েছিল রেনেসাঁসের আলোকে ৷ শরীর সৃষ্টিতে মধ্যযুগীয় যে কৃত্রিমতা ছিল তা থেকে বেরিয়ে এসে স্বাভাবিক মানব অবক্ষয় সৃষ্টি করা হয় ৷ মাইকেল অ্যাঞ্জেলো নির্মিত 'ডেভিড' এবং লিওনার্দো-দ্যা-ভিঞ্চির নির্মিত 'মোনালিসা' মানব মানবের দৈহিক সৌন্দর্যের বাস্তব রূপ হয়ে ফুটে ওঠে ৷ রাফায়েলের 'ম্যাডোনা'- তে যে নারী সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে তার যুগ যুগ ধরে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের নয়ন যুগল কে আনন্দ প্রদান করে আসছে ৷
ভাস্কর্য শিল্প সৃষ্টিতে দোনাতলে ছিলেন অবিস্মরনীয় ৷ গির্জা প্রাসাদের বহিরঙ্গ এবং পাথরের যে মূর্তিগুলো সৃষ্টি করেন তার দ্বারা একাধারে যেমন মানব শরীরের বাস্তব ফুটে ওঠে তেমনি এতে ধ্রুপদী স্থাপত্য রীতির প্রভাব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে ৷ ম্যাসাচিত্তর শিল্পে যে মানবদেহ ফুটিয়ে তুলেছেন তার মধ্যে যেমন শারীরিক বাস্তব অনুরাগ ছিল পাশাপাশি তার সৃষ্টির মধ্যে পরিপার্শ্বিক বোধ বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায় ৷ ম্যাসাচিত্তর সৃষ্টি তে পাত্র-পাত্রী ও পারিপার্শ্বিক অনেক জীবন্ত ও গতিশীল করতে সক্ষম হয়েছিল ৷ আসলে মানুষের শরীরে সৌন্দর্যকে বোঝার এক অদম চেষ্টা রেনেসাঁস শিল্পীদের মধ্যে লক্ষ্য করা গিয়েছিল ৷
রেনেসাঁ শিল্পের ইতিহাসে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ছিল এক বিশেষ অধ্যায় ৷ মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে তার জ্ঞান-বিজ্ঞান ছিল অসাধারণ ৷ তার কালজয়ী সৃষ্টি এবং মোনালিসার মধ্যে রহস্যময়ী নারীর জীবন্ত উপিকৃতি সৃষ্টিতে আলো-আঁধারি প্রয়োগ তার সৃষ্টিকে প্রদান করে ৷
রেনেসাঁ পর্বের শিল্পীরা সমাজের ধনী অভিজাত শাসকের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়ে তাদের শিল্পী সত্তার পরিপূর্ণতা ঘটিয়েছিলেন ৷ আর শিল্পীদের এই নিয়ন্ত্রণ মুক্তির মধ্য দিয়ে সর্বপরি রেনেসাঁর মানবতাবাদী আদর্শের স্পষ্ট হয়ে তাদের শিল্পে যে মাধুরী ঢেলে দিয়েছিল তা শিল্প জগত কে দিয়েছিল অনাবিল সৌন্দর্য আচ্ছাদন ৷ এইকম কয়েকটি অতি উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হল- ফ্রান্সিসকো স্থপতি, আলবার্টি গির্জা, দোনা তলের সেন্ট মেরি, ম্যাকডোনাল্ডের মূর্তি, মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর মেডনা এন্ড চাইল্ড, ম্যাসাচিত্ত-র দেওয়াল চিত্র, 'The tribute money", লিওনার্দো-দ্যা- ভিঞ্চির "The lady with the Ermine" সর্বোপরি রাফায়েলের 'School of Athens','Galatea transfiguration' প্রভৃতি ৷