ইলতুৎমিস সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, তুমি কি ইলতুৎমিসকে দিল্লি সুলতানির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করো?
ইলতুৎমিস সম্পর্কে আলোচনা কর
![]() |
ইলতুৎমিসের ছবি (কাল্পনিক) |
মহম্মদ ঘুরি ভারতবর্ষের সুলতানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা কল্পে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন কুতুবুদ্দিন আইবকের হস্তে তাবাসার সম্পূর্ণতা লাভ করেন ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে ৷ কিন্তু কুতুবুদ্দিনের মৃত্যু হলে দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্য এক নির্ধারণ সংকটের মধ্যে পড়ে ৷ সাম্রাজ্যের চারিদিকে বিদ্রোহ এবং বিক্ষোভ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে ৷ ক্রমবস্তায় দিল্লির কিছু আমির ওমরাহ দের সহায়তায় কুতুবুদ্দিনের জামাতা ইলতুৎমিস অগ্নিগর্ভ দিল্লি দাসত্ব গ্রহণ করেন ৷ ১২১০ থেকে ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত তিনি সাহসিকতা,দূরদর্শী কথা এবং বাস্তবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কে কাজে লাগিয়ে তিনি কেবল দিল্লির শিশু সুলতানি সাম্রাজ্য কে রক্ষা করেননি তাকে অতি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন ৷
ইলতুৎমিস ছিলেন তুর্কিস্তানের ইলবেরি গোষ্ঠীভুক্ত ইলম খানের পুত্র ৷ নানা ঘাত প্রতিঘাত ও জীবনের তীব্র জলোচ্ছ্বাসে তিনি সুলতান কুতুবুদ্দিনের নিকট উপস্থিত হন তার কর্মদক্ষতা, বিশ্বস্ততা ও রূপমাতাই তিনি অচিরেই কুতুব উদ্দিন এর প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন ৷ তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে কুতুবুদ্দিন নিজ কন্যার সহিত ইলতুৎমিসের বিবাহ দেন ৷ কিন্তু সিংহাসন আরোহণের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়েছিল ৷ তাই তার ২৬ বছরের রাজত্বকাল কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় ৷ যথাঃ- প্রথম পর্যায়ে (১২০১১ থেকে ১২২০) তিনি প্রধানত ব্যস্ত ছিলেন বিরোধীদের দমন কল্পে ,দ্বিতীয় পর্যায়ে (১২২০ থেকে ১২৩০ খ্রিস্টাব্দ) তিনি মূলত ব্যস্ত ছিলেন মঙ্গল আক্রমণ প্রতি বিধানকল্পে এবং তৃতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ (1230 থেকে 1236 খ্রিঃ) তিনি আত্মনিয়োগ করেন সাম্রাজ্যের সুদৃঢ় করনে ৷
ইলতুৎমিস প্রথমে দিল্লির পদায়ন অযোধ্যা,বেনারস, শিবালিক প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহী আমিরদের দমন করে ওই সকল অঞ্চলে নিজ কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন ৷ ১২৮৭ খ্রিস্টাব্দে নাসির উদ্দিন কুবাচাকে মনসুরার যুদ্ধে পরাজিত করেন ৷ মঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান খার হাত থেকে ভারতবর্ষকে রক্ষা করেন ৷ বিচক্ষণ ইলতুৎমিস এরপর তিনি একে একে গোয়ালিয়ার আলমগীর প্রভৃতি অঞ্চল পুনরায় সুলতানি সাম্রাজ্যভুক্ত করেন ৷
ইলতুৎমিস কেবল সাম্রাজ্যকে রক্ষাই করেননি,সেই সঙ্গে একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণের মাধ্যমে দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যকে মধ্যযুগের ইতিহাসে কেবলমাত্র ভারতবর্ষের ক্ষেত্রেই নয় তথা বিশ্ব ইতিহাসের দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রের বৈধ অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেন ৷ তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশৃঙ্খলা শাসক শ্রেণীর প্রতিষ্ঠা করেন ৷ ইক্তা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন ৷ ঐতিহাসিক নিজামী বলেন," ইলতুৎমিস ইক্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন ভারতবর্ষ থেকে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য ৷"
ইলতুৎমিস ছিলেন জ্ঞানীগুনি পৃষ্ঠপোষক ঐতিহাসিক মিনহাজ বলেন ইলতুৎমিস এর সময় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক জ্ঞানী গুণী মানুষ দিল্লিতে উপস্থিত হতেন যা সুলতানের মর্যাদা বৃদ্ধি করতো তিনি ছিলেন আদর্শনির্মত নির্মাতার শাসক দিল্লির উপকণ্ঠে একাধিক শিল্প স্থাপত্যের নিদর্শন দিল্লির সুলতানি উৎকর্ষতা প্রদান করেছিলেন ঐতিহাসিক ত্রিপাঠি মন্তব্য করেছেন," the history of Muslim soverently in India begain property speaking with Iltutmish."
ইক্তা ব্যবস্থার প্রবর্তন সাম্রাজ্যের সংহতি বিধান আর্থিক পরিকাঠামো তৈরি এবং সর্বোপরি দিল্লির কুতুব মিনারের সম্পাদিত তার অবদান স্মরণীয় ৷ কুতুব মিনারের নির্মাণ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক হেক বলেন," ইলতুৎমিস তার প্রভু কুতুব উদ্দিন এর স্মৃতিরক্ষাতে এই পরিকল্পনা করেন ৷" ঐতিহাসিক নিজামী ইলতুৎমিসের নির্মাণ মানসিকতার দিকে লক্ষ্য রেখে বলেন," Iltutmish the real architect of the medieval Delhi."
উপরিউক্ত আলোচনা শেষে এই কথা বলা যায় যে ইলতুৎমিস কুতুবুদ্দিন আইবক প্রতিষ্ঠিত দিল্লির শিশু সুলতানি সাম্রাজ্যকে অভ্যন্তরীণ এবং নানাঘাত প্রতিঘাত থেকে কেবল রক্ষা করেনি, সেই সঙ্গে দিল্লির শিশু সুলতানি সাম্রাজ্যের চারা গাছটিকে পত্রে পল্লবে শাখা-প্রশাখায় বিকশিত করে, ভারতবর্ষের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা প্রদান করেছিলেন ৷ তাই ঐতিহাসিক নিজামী বলেন,"কুতুবউদ্দিন কেবল দিল্লির সুলতানি রূপরেখাটি ভেবেছিলেন কিন্তু ইলতুৎমিশ তার বাস্তব অবয়ব প্রদান করেন ৷"
~~🔹সমাপ্ত🔹~~