ভীমবেটকা গুহাচিত্র সম্পর্কে টীকা লেখ।

 ভীমবেটকা গুহাচিত্র সম্পর্কে টীকা লেখ।  

 

ভীমবেটকা গুহাচিত্র সম্পর্কে টীকা লেখ।

মধ্যপ্রদেশের রায়সেন জেলায় ভূপাল শহরে 45 km দক্ষিণে বিন্ধ পর্বতের দক্ষিণ ঢালে ভীমবেটকার অবসান । ভীমবেটকাকে ২০০৪-এর অন্যতম ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান বলে ঘোষনা করা হয়েছে । ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুযায়ী 1888 খ্রীঃ ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের নথিতে এই কথাটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়, একটি বৌদ্ধ মঠ জাতীয় নিদর্শন হিসাবে । জেরোম জ্যাকসনের গবেষণায় উল্লেখ আছে ভীমবেটকা অঞ্চলে গুহাগুলি পর্বতের গায়ে 1600-2051 ফুট গড় উচ্চতায় আবিষ্কৃত হয়েছে । গুহাগুলির মুখের কাছে 4 থেকে 16 ফুট উঁচু, 10-16 ফুট - লম্বা এবং 5 থেকে ১০ ফুট গভীর । এখানে এক বা একাধিক পরিবার বসবাস করত । বিশ্বের প্রাচীনতম পাথরের মেঝে ও দেওয়ালও এখানে দেখা গেছে । ভীমবেটকার সবচেয়ে প্রাচীন ছবিগুলি আনুমানিক ১০ হাজার বছরের প্রাচীন । এখানে উদ্ভিজ উপাদান থেকে রং তৈরী করা হয় । এছাড়া গুহাচিত্রগুলি যেহেতু গুহার গভীর অংশের দেওয়ালের গায়ে আঁকা হয়েছিল, তাই সময়ের সাথে সাথে রং খুব বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়নি । ভীমবেটকায় প্রাপ্ত ছবিগুলিকে সময়ের স্মরণীয় অনুযায়ী বর্ণনা করা হয়েছিল-


ভীমবেটকা গুহাচিত্র সম্পর্কে টীকা লেখ।
ভীমবেটকা রক পেইন্টিং


প্রথম যুগ (উচ্চ পুরাপ্রস্তর যুগ)


এই পর্বের ছবিগুলি আঁকা হয়েছে সবুজ ও গাড়ো লাল রেখাচিত্র দ্বারা । এই ছবিগুলির বিষয়বস্তু ছিল মূলত বৃহৎ আঁকারের পশু, যেমন- বাইসন, বাঘ,গন্ডার ইত্যাদি ।


দ্বিতীয় যুগ (মধ্য প্রস্তর যুপ)


এই পর্বের প্রাপ্ত ছবিগুলি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকার, নকশা দ্বারা সজ্জিত । বিষয়বস্তুতে জীবজন্তু এ রেখার ছাড়াও মানুষের ছবি ও শিকারের ছবি আঁকা হয়েছিল । শিকারে দৃশ্যে ব্যবহৃত  কাঁটাওয়ালা বর্শা,ছুঁচালো লাঠি ও ধনুবার্নের নিদর্শন পাওয়া যায় । এছাড়াও গোষ্ঠীগত নাচ, বাজনা, মা ও শিশু, গর্ভবতী মহিলা, মৃত পশুর কাঁধে পুরুষ ও মৃতের সমাধিস্তকরনের ছবি অঙ্কিত হয়েছে ।


 তৃতীয় যুগ (তাম্র যুগ)


এই পর্বের ছবিগুলি থেকে বোঝা যায় সমসাময়িক গুহা বাসীদের সাথে কৃষিজীবীদের একটি নিবিড় যোগাযোগ ছিল।


চতুর্থ যুগ (প্রাথমিক ঐতিহাসিক যুগ)


এই পর্বের ছবিগুলিতে প্রথম নান্দনিক লাঙলন যুক্ত হয়েছে । ব্যবহৃত রঙ প্রধানত লাল, সাদা ও হলুদ । ভীমবেটকায় চিড়িয়ানার পাথর রূপে পরিচিত একটি পাথরে হাতি, বাইসন, হরিণ, ময়ূর, সাপ ও সূর্যের ছবি পাওয়া গেছে ।

ভীমবেটকা গুহাচিত্র সম্পর্কে টীকা লেখ।
মানুষ পশু শিকার


 ভীমবেটকায় প্রায় 16 টি রঙের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । প্রধান ব্যবহৃত রঙ ছিল সাদা ও হালকা লাল তবে গাড়ো লাল, বাদামি হলুদ, পার্পেল, পান্না সবুজ, কালো, কালচে বাদামি, কমলা ইত্যাদি রঙের উপঙ্খিত লক্ষ্য করা গেছে । মূলত অজৈব প্রাকৃতিক পদার্থকে গুড়ো করে তাতে জল বা চর্বি বা ডিম মিশিয়ে রঙ তৈরী করা হত । গেরু মাটি থেকে লোল, চুনাপাথর দিয়ে সাদা কৃত তৈরী করা হত বলে পুরাতত্ত্ববিদরা মনে করেন । চিত্রগুলিতে এক বা একাধিক রঙের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । পশুর লোম বা কাঠবেড়ালির লেছ দিয়ে রঙ করার তুলি তৈরী করা হত। 


 ভীমবেটকার অধিকাংশ চিত্রে প্রাণীর ছবি পাওয়া গেছে । ভীমবেটকায় মোট ২৭ ধরনের প্রাণীর ছবি পাওয়া গেছে । যেমন- বাঘ, চিতাবাঘ, হাতি, গন্ডার, সিংহ, বুনো মহিষ, কালো হরিণ, কাঠবেড়ালি ইত্যাদির ছবি লক্ষ্য করা যায়, পাখি, মাছ, ব্যাঙ, গিরগিটি, কাঁকড়া ইত্যাদির ছবি পাওয়া গেলেও সাপের ছবি পাওয়া যায়নি । পশুপাখির চিত্রগুলি কখনও বাস্তবধর্মী কখনও অবাস্তব । চিত্রে পশুর দেহের ভেতরের অস্থি ও অঙ্গগুলি প্রকাশিত হয় । ভীমবেটকায় শিশুদের সঙ্গে বাঘ না চিতাবাঘের চিত্র, খরগোশ লাফানোর দৃশ্য, হনুমান খোলার দৃশ্য দৃষ্টি আকর্ষন করে ।


ভীমবেটকা গুহাচিত্র সম্পর্কে টীকা লেখ।
অস্ত্র হাতে ঘোড়ায় চড়ে মানুষ


ভীমবেটকায় মানুষ, পশু ও শিকারের ছবিগুলি গতিময় । এককভাবে বা যৌথভাবে মানুষ লাঠি, বর্ষা, তীরধনুক হাতে বা খালিহাতে শিকার করছে এমন ছবি পাওয়া গেছে । কোথাও কোথাও শিকারির সঙ্গে কুকুর চিত্রিত আছে । ভীমবেটকায় মানুষ ও পশুর  অবয়ব ত্রিভুজ বা চতুর্ভুজ সৃষ্টি করে তৈরী করা হয় । পুরুষদের চুল খোলো, মেয়েদের চুল বাঁধা এরকম ছবির  দৃশ্য দেখা গেছে । এমনকি দেখানো হয়েছে পোষাকগুলি গাছের ছাল, পশুর ছাল বা পাতার ছাল দিয়ে তৈরী । ভীমবেটকার চিত্র থেকে দেখা যায় পুরুষরা শিকার করে এবং নারী খাদ্য তৈরি করে । এমনকি মানুষের ফল ও মধু সংগ্রহের চিত্র এবং নাচের চিত্র দেখতে পাওয়া যায় । তবে ভীমবেটকার গুহার গায়ে হাত, আঙুল বা হাতের তেলোর ছাপ এখনকার মতোই কোনো সংস্কার বা বিশ্বাসের প্রতীক কিনা সে বিষয় নিশ্চিতভাবে কিছু অনুমান করা যায় নি ।


তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ভীমবেটকা গুহাচিত্র সম্পর্কে টীকা লেখ। এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟