শক-সাতবাহন দ্বন্দ্ব আলোচনা কর / শক-সাতবাহন সংঘর্ষ সম্পর্কে যা জানো তা লেখ

শক-সাতবাহন দ্বন্দ্ব আলোচনা কর / শক-সাতবাহন সংঘর্ষ সম্পর্কে যা জানো তা লেখ

 শক-সাতবাহন দ্বন্দ্ব আলোচনা কর / শক-সাতবাহন সংঘর্ষ সম্পর্কে যা জানো তা লেখ

শক-সাতবাহন দ্বন্দ্ব আলোচনা কর / শক-সাতবাহন সংঘর্ষ সম্পর্কে যা জানো তা লেখ


শক-সাতবাহন দ্বন্দ্ব

 মৌর্য পরবর্তী যুগে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক নাগাদ সাতবাহন বংশের উত্থানে মধ্য দিয়ে দাক্ষিণাত্যে সর্বপ্রথম রাজতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। যদিও অধ্যাপক ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায় তাঁর "Studying Early India" গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে সাতবাহনদের উত্থানের পূর্বেই দাক্ষিণাত্যে রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল। লেখগত ও মুদ্রাগত প্রমাণাদি এবং পুরাণ গ্রন্থসমূহ থেকে সাতবাহনদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। পুরাণ গ্রন্থে এই বংশকে বলা হয়েছে "অন্ধ্র" বা "অন্ধ্রভৃত্য"। অন্যদিকে লেখমালায় এই বংশকে সাতবাহন নামে উপস্থাপিত করা হয়েছে। অধ্যাপক রণবীর চক্রবর্তী সাতবাহন বংশের রাজত্বকালকে খ্রিস্টপূর্ব ৫০ অব্দ থেকে খ্রিস্টীয় ২২৫ অব্দের মধ্যবর্তী সময়কালকে নির্দিষ্টকরছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণাদির ভিত্তিতে বোঝা যায় যে, প্রাথমিক পর্যায়ে সাতবাহনদের কাজ করার শক্তিশালী কেন্দ্র ছিল মধ্য ও পশ্চিম বাক্ষিণাতো।


পুরাণ প্রথানুসারে অন্ত বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সিমূক যিনি পৈঠান ও নানাঘাট সরিইত অঞ্চলে রাজত্ব করতেন। এর পরবর্তী শাসক প্রথম কৃষ্ণ-এর লেখ নাসিক অঞ্চলে বাওয়া গেছে। তাই বোঝা যায় যে, নাসিক সাতবাহন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তী শাসক রংকণীর নাম কলিশারাজ খারবেলের প্রশস্তিতে পাওয়া যায়। সাঁচীতে সাতকর্ণীর লেখ অস্থির এবিষ্কৃত হয়েছে। তাই মনে করা হয় যে, পূর্ব মালবের বিদিশ্য অঞ্চল তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন নাতাও ইল। অজ্ঞাতনামা গ্রিক নাবিক রচিত "পেরিপ্লাস মরিস এরিয়াই প্রথানুসারে এসময় ৎপরাস্ত বা উত্তর কোক্ষন উপকূলে সাতবাহনদের প্রাধান্য প্রসারিত হয়। যে উপকূলের শালী গাশ ছিল ক্যালিয়েনা বা বর্তমান মুম্বইয়ের নিকটবর্তী কল্যাণ বন্দর।


সাতবাহনদের সমসাময়িক পর্বে পশ্চিম ভারতে ক্ষমতাসীন ছিল মধ্য এশীয় শর মিক। গোষ্ঠীর "ক্ষহরাত" শাখা। সাতবাহনদের সমসাময়িক শক্তিশালী ক্ষহরাত শাসক ছিলেন। সৃষ্টি নরূপন। নহপান শব্দের অর্থ জনগণের রক্ষক। পশ্চিম ও মধ্য দাক্ষিণাত্য এবং নর্মদা নদীর উত্তরে বিদিশা অঞ্চলব্যাপী সাতবাহনদের উত্থান, নহপানের শাসনাধীন রাজ্যের পক্ষে। শঙ্কার কারণ হয়। নহপানের তিনটি লেখ নাসিক থেকে পাওয়া গেছে। এইসময় এলাকাই উয়িত্বে কিন্তু ইতিপূর্বে সাতবাহনাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। নাসিক লেখতে ভূগুকচ্ছ, দশপুর (পশ্চিম ছিল মালবের মান্দাসোর) অঞ্চলের ওপর নহপানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত থাকার কথা বর্ণিত প্রণিক হয়েছে। এই অঞ্চলগুলির কয়েকটি নহপান নিঃসন্দেহে সাতবাহনদের পরাস্ত করে জয় করেন।


 "পেরিপ্লাস" গ্রন্থে লেখা হয়েছে যে, বয়োজ্যেষ্ঠ সারগানুসের রাজত্বকালে ক্যালিয়েনা একটি শৃঙ্খলাপূর্ব বন্দর ছিল। কিন্তু 'সান্তানেস' এর রাজত্বকালে এটির অবক্ষয় ঘটে। সস্তানেসকে সাতবাহনরাজ সুন্দর সাতকর্ণীর সঙ্গে অভিন্নরূপে শনাক্ত করা হয়। পেরিপ্লাসে উল্লেখিত হয় যে, সান্তানেসের রাজত্বকালে বারিগাজার রাজা ন্যামবানুস ওই বন্দরের চারপাশে নৌ-অবরোধ জারি করেন এবং ওই বন্দরে আগত জাহাজগুলি জোর করে। বর্তিগাজা বন্দরে পাঠিয়েছেন। ফলে ক্যালিয়েনা বন্দর হিসাবে গুরুত্ব হারায়। এর পরবর্তী প্রদিও গাঁয়ে টলেমি তাঁর প্রশ্নে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলির যে তালিকা দিয়েছেন তাতে। এ যে. আালিয়েনা বন্দরের নাম অনুপস্থিত। নহপান সম্ভবত খ্রিস্টীয় প্রথম শতক থেকে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তাঁর রাজত্বকালে যে শক সাতবাহন পুরাণ দ্বন্দ্বের সূচনা হয় তা পরবর্তীকালে দাক্ষিণাত্যের রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের প্রথমভাগে সাতবাহন বংশের সর্বোত্তম শাসক গৌতমীপুত্র শের উচকণীর সিংহাসনারোহণের পর শক সাতবাহন দ্বন্দের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়। নাসিকে অর্দিষ্ট অত গৌতমীপুত্রের দুটি লেখ প্রমাণ করে যে, তিনি এই অঞ্চলটিকে শকদের কাছ থেকে গুলার করেন। তবে এ সংক্রান্ত সর্বাপেক্ষা স্পষ্ট প্রমাণ "নাসিক প্রশক্তি'তে বিধৃত আছে। এই প্রশস্তিতে ক্ষহরাত বংশের দ্বারা উৎখাত হওয়া সাতবাহন বংশের গৌড় পুনরুদ্ধারকারী গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর মহিমা কীর্তন করা হয়েছে। গৌতমীপুত্রের ক্যা নহপানের পরাস্ত হওয়ার সর্বাপেক্ষা বিশ্বস্ত প্রমাণ নাসিকের কাছে জোগলথেন্বিতে আসিদ মুদ্রা ভাণ্ডারের মাধ্যমে পাওয়া যায়। এখানে প্রাপ্ত হাজারের বেশি নহপানের ফু গৌতমীপুত্র নিজের কিংবদন্তি ও প্রতীকসহ পুনর্মুদ্রিত করেন। গৌতমীপুত্র সাতক অষ্টাদশ রাজ্যাঙ্কে জারি করা একটি লেখতে উল্লেখ আছে নাসিকে একটি বৌদ্ধবিহসা তিনি ভূমিদান করেন যেটি পূর্বকাল পর্যন্ত নহপানের জামাত "উসবদাত"র নিয়ন্ত্রণী, ছিল। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, তাঁর রাজত্বকালের আঠারো বছরের আগেই গৌতমীয় শকদের ওপর তাঁর বিজয় সম্পন্ন করেন। এইভাবে শক সাতবাহন দ্বন্দ্বের দ্বিতীয় পর্যা সাতবাহনদের বিজয়ের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।


গৌতমীপুত্রের রাজত্বকালে সাতবাহনরা শকদের বিরুদ্ধে যে সাফল্য পায় ২ "কাদ্দমক"। নামক শকদের আরেকটি শাখার প্রাবল্যে অন্তর্হিত হয়। শকদের এই গোঁ ক্ষত্রপ "চষ্টন"-এর সময়কাল থেকে পরিচিতি লাভ করে। গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলে প্রা অম্লাউ লেখ থেকে জানা যায় যে, চষ্টন তাঁর পৌত্র প্রথম রুদ্রদামনের সঙ্গে যৌথভাে ৫২ শকাব্দ বা ১৩০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ রাজত্ব করতেন। উলেমীর ভূগোল গ্রন্থে টিয়াক্টেকে নামে উল্লেখিত চষ্টনের রাজ্যের রাজধানী অবন্তী রাজ্যের উজ্জয়িনীতে অবস্থিত ছিল নাসিক প্রশস্তি থেকে ইতিপূর্বে পশ্চিম মালবের উজ্জয়িনী অঞ্চলে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী নিয়ন্ত্রণের কথা জানা যায়। শকরা নিশ্চিতভাবেই সাতবাহনদের কাছ থেকে উজ্জয়িন অন্যলটি জয় করেন। এইভাবে শক সাতবাহন দ্বন্দ্ব তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করে।


এই পর্যায়ে প্রথম রুদ্রদামনের সামরিক দক্ষতার কারণে শকরা সাতবাহনদের বিরুষে অসাধারণ সাফল্যলাভে সমর্থ হয়, ৭২ শকাব্দে বা ১৫০ খ্রিস্টাব্দে জারি করা প্রণ রুদ্রদামনের জুনাগড় লেখ অনুসারে প্রথম রুদ্রদামন আকরাবস্তী। আনও (কাথিয়াবানে উত্তরাংশ) সুরাষ্ট্র (কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ), কচ্ছ, সিন্ধু, কুকুর, অপরান্ত, নিষাদ (বিখ্য পারিযাত্র পর্বতের মধ্যবর্তী কোনো স্থানে অবস্থিত) ইত্যাদি অঞ্চলের ওপর প্রাধন স্থাপন করেন। নাসিক প্রশস্তি অনুসারে প্রথম রুদ্রদামনের দ্বারা জয় করা এই অঞ্চলগুলি। বেশিরভাগই ইতিপূর্বে সাতবাহনদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। নিশ্চিতভাবেই এই তথ্য থেরে সাতবাহনদের মধ্যে সংঘর্ষকে প্রমাণিত করে। জুনাগড় প্রশস্তির উল্লেখানুযায়ী প্রথম বুদ্রদাম দাক্ষিণাত্যের অধিপতি সাতকর্ণীকে দুবার পরাস্ত করেন কিন্তু সম্পর্কগত নৈকট্যের কারা তিনি তাঁর কোনো ক্ষতিসাধন করেননি। প্রথম রুদ্রদামনের কাছে পরাস্ত রাজা সাতল নিঃসন্দেহে একজন সাতবাহন রাজা। কিন্তু তাঁর পরিচয় সংশয়াতীতভাবে প্রমাণিত না কোনো কোনো ঐতিহাসিক বাশিষ্টপুত্র পুলুমায়ী হিসেবে শনাক্ত করেন। কানহেরীতে প্রার একটি ভগ্ন লেখতে উল্লেখিত হয়েছে যে, বাশিষ্টপুত্র পুলুমায়ী মহাক্ষত্রপ "ব্লু"-এর কন্যাং বিবাহ করেন। 'ব্লু'-কে যদি প্রথম রুদ্রদামনের সঙ্গে শনাক্ত করা হয়, তাহলে তিনি বাশিষ্ট পুত্র পুলুমায়ীকে নিশ্চিতভাবে পরাস্ত করেন এবং সম্পর্কে জামাতা হওয়ার কারণে তিনি বাশিষ্ট পুত্রকে উৎখাত করেননি। শক সাতবাহন দ্বন্দ্বের তৃতীয় পর্যায়ে শকদের নিঃসংশয় প্রাধান্যকে সূচিত করে।


শকদের দ্বারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সাতবাহনরা নিজেদের প্রাথমিক শক্তিকেন্দ্র নাসিক ও পশ্চিম দাক্ষিণাত্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হয়। বাশিষ্টপূত্র পুলমায়ীর উত্তরসূরী যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী একজন পরিচিত শাসক ছিলেন যাঁর আমলে পশ্চিম ও পূর্ব দাক্ষিণাত্য এবং বিদর্ভ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। এর উত্তরসূরী বিজয় সাতকর্ণী, চন্দ্রস্বতী সাতকর্ণী এবং পুলুমায়ীর রাজত্বকালে সাতবাহন রাজ্য ক্ষুদ্রাকৃতি হয়ে যায় এবং অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটকের বেলারি জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে প্রথম রুদ্রদামনের নেতৃত্বে শক গোষ্ঠীর যে চিত্তাকর্ষক উত্থান ঘটে তা তাঁর উত্তরসূরীদের রাজত্বকালে অব্যাহত থাকেনি। যদিও এঁরা পঞ্চম শতক পর্যন্ত পশ্চিম মালব গুজরাট, কাথিয়াবাড় অঞ্চলে নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়।


About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟