আধুনিক ইউরোপে যুগ সন্ধিক্ষণ বিতর্ক পর্যালোচনা কর ?
অথবা,
সামন্ততন্ত্র থেকে পুঁজিবাদের উত্তরের যুগ সন্ধিক্ষণ বিতর্ক পর্যালোচনা কর ?
চতুর্দশ শতকে সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতির সংকটের মধ্যে দিয়েই বাণিজ্যিক দিগন্তে যে সম্প্রসারণ শুরু হয়েছিল তার ফলে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে এক সার্বিক ব্যবস্থা হিসেবে ধনতন্ত্র বা পুঁজিবাদের উদ্ভব হয় বলা হয় ৷ ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে প্লেগ রোগের দাপটে ইউরোপের বহু মানুষের মৃত্যু,কৃষি উৎপাদনের গতি প্রায় শূন্য হয়ে যাওয়া এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন প্রথম যুগ সন্ধিক্ষণের সূচনা করেন ৷ সামন্ততান্ত্রিক অর্থনৈতিক কাঠামো এই সময় সর্বোচ্চ সম্পূর্ণ অদৃশ্য না হলেও সর্বোচ্চ ধনাত্মিক কাঠামোর মধ্যেই পড়ে তা লীন হয়ে যায় ৷ পঞ্চদশ শতকের সময়কালের সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল বলে এই সময়ে সামন্ততান্ত্রিক এবং ধণতান্ত্রিক যুগের সন্ধিক্ষণের সময় বলা হয় ৷
Related Posts
সামন্ততন্ত্র থেকে পুঁজিবাদ উত্তরণ পর্যায় ও প্রকৃতি নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে নানা মতবাদ রয়েছে । কাল মার্কসের ধনতন্ত্রের উত্থান বিষয়ে আলোচনা কে যুগসন্ধিক্ষণের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু বলে ধরা হয় । তিনি মনে করেন,"পুঁজিবাদের সূচনা হয়েছিল কৃষিক্ষেত্রে উদ্বর্তী বিনিয়োগের ফলস্বরূপ ৷" তার মতে এই প্রক্রিয়ার মূলে ছিল কৃষি সমাজের অন্তর্গত এবং নগর অঞ্চলের বনিক শ্রেনি ৷ যারা কৃষি ও শিল্পে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পুঁজি বিনিয়োগ করেছিলেন ৷
ঐতিহাসিকদের মধ্যে মরিস ডব সর্বপ্রথম মার্কসীয় অবস্থানে ঐতিহাসিক রূপ দেন ৷ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের মরিস ডব তার বিখ্যাত গ্রন্থ "Stddies in the development of Capitalism" প্রকাশ করে তার মতামত তুলে ধরেছেন ৷ তিনি দেখান চতুর্দশ শতকে খাজনা নগদ করন শুরু হলে খাজনা মেটানোর তাগিদে কৃষকরা তাদের উৎপাদনের বড় অংশ নগদের বিনিময়ে বাজারে বিক্রি করতে শুরু করে ৷ সেই বাণিজ্য থেকে যে মুনাফা হয় তা দিয়ে অন্যান্য গ্রামবাসীর থেকে তাদের ফসলের একটি অংশ কিনে নিয়ে আবার বাজারে যেত ৷ ডবের এই মত এই ভাবেই সচ্ছল বা সাধারণ কৃষক, পুঁজিপতি কৃষক-বণিকে পরিণত হয়েছিল ৷ তবে তিনি আরো বলেন এই ধণতন্ত্রের উদ্ভব ইউরোপের সর্বত্র সমানভাবে ব্যক্তিগত লাভ করে ৷
মরিস ডবের এই উপরিক্ত ব্যাখ্যা অনেকেই মেনে নিয়েছেন ৷ আবার পোস্টান লাদুড়ি মনে করেন পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে ইউরোপের জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে পেলে সেই বিপুল সংখ্যক মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে ইউরোপীয় অর্থনীতিতে যেসব কাঠামোগত পরিবর্তন হতে শুরু করে তারই পরিণাম হলো এই ধণতন্ত্র ৷
উল্লেখ্য এক্ষেত্রে রবার্ট ব্রেনার তার প্রবন্ধে একদিকে পল সুইজি বাণিজ্যিক তথ্য যেমন নাকোচ করেছেন তেমনি পোস্টান লাদুরির জনসংখ্যা তত্ত্ব অস্বীকার করেছেন ৷ পরবর্তী মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের উষালগ্নে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যে উত্তরণ দেখা দিয়েছিল ব্রেনার তার ব্যাখ্যা করেছেন ৷ শ্রেণি সংখ্যার নিরিখে মাক্স যাকে "force of production" বলে অভিহিত করেছেন ৷
পুঁজিবাদের বিকাশ সংক্রান্ত ব্রেনার তার বিশ্লেষণের ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের কথা উল্লেখ করেছেন ৷ তার মধ্যে ইংল্যান্ড ভূ স্বামীরা পরিত্যক্ত জমিতে ভাড়াটিয়া প্রজাদের নিযুক্ত করে কৃষিতে পুঁজির বিকাশ ঘটায় ৷ এর ফলে সেখানে অর্থনৈতিক প্রগতি সূচিত হয় ৷ কিন্তু ফ্রান্সে এর বিপরীত ধর্মী অবস্থান পুঁজিবিকাশের পথে বাধা প্রাপ্ত হয় ৷