বিদেশি পর্যটকদের রচনা থেকে বিজয়নগর সম্পর্কে কি জানা যায়

বিদেশি পর্যটকদের রচনা থেকে বিজয়নগর সম্পর্কে কি জানা যায়

 বিদেশি পর্যটকদের রচনা থেকে বিজয়নগর সম্পর্কে কি জানা যায়

বিদেশি পর্যটকদের রচনা থেকে বিজয়নগর সম্পর্কে কি জানা যায়

যেকোনো রাষ্ট্রের উৎকর্ষতার বিকাশ পরিচালিত হয় সেই রাষ্ট্রের আর্থিক সমৃদ্ধি এবং স্থায়িত্বকে ভিত্তি করে ৷ বিজয়নগর রাজ্যের সামগ্রিক বিকাশ পরিলক্ষিত হয়েছিল ৷ এর শিল্প সংস্কৃতি সবদিক থেকেই যে বিকাশের গতি পরিলক্ষিত হয় যা বিজয়নগর রাজ্যকে সমৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ৷ বিজয়নগর সাম্রাজ্যে একাধিক বিদেশী পর্যটকদের বিবরণ যথা ইতালীয় পর্যটক নিকালোকান্টি,পারসিক পর্যটক আব্দুর রাজ্জাক,পর্তুগিজ বণিক পায়োজওনুনিজ ৷ সেই সঙ্গে নানাবিধ লিখিত উপাদান থেকে বিজয়নগরের সমৃদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায় ৷

আরও পড়ুন

বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ থেকে বিজয়নগর এর ঐশ্বর্য,চাকচিক্য এবং জনসাধারণের আর্থিক প্রাচুর্যের আভাস পাওয়া যায় । বিজয়নগরের অর্থনীতির ভিত্তি ছিল কৃষি ৷ কৃষি ব্যবস্থার দ্রুততম একক ছিল গ্রামগুলি যা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার অধীনস্থ ছিল । অপেক্ষাকৃত বৃহৎ গামগুলি উৎপাদন ব্যবস্থায় মন্দির মঠ বা করমুক্ত গ্রামগুলিকে ব্যবহার করা হতো ৷ কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে বৃহত্তম অংশে মন্দিরের ভূমিকা ছিল ৷ মন্দির গুলির বৃহৎ অঞ্চল কৃষির অন্তর্ভুক্ত অনেক ক্ষেত্রে মন্দিরগুলি ব্যাংকের ভূমিকা নিত ৷ পায়েজ লিখেছেন এদেশের প্রচুর ধান ও অন্যান্য শস্য, সিম জাতীয় ফসল এবং আমাদের দেশে হয় না এমন সব শস্য উৎপন্ন হতো ৷ বিজয়নগরের কৃষি অর্থনীতির বিকাশের পেছনে শেচ ব্যবস্থার বিশেষ ভূমিকা ছিল ৷

বিজয় নগরের আর্থিক সমৃদ্ধির মূলে কৃষির পরেই ছিল বাণিজ্যের স্থান ৷ অভ্যন্তরীণ ও বর্হিবাণিজ্য উভয় ক্ষেত্রে বিজয়নগর ছিল অগ্রণী একটি দেশ । সারা দেশে একাধিক ব্যস্ত বন্দর ছিল ৷ আব্দুল রাজ্জাক এখানে ৩০০ টি বন্দরের উল্লেখ করেছেন ৷ মালাবার উপকূলের এ যুগে ব্যস্ততম বন্দর ছিল কালিকট ৷ পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ব্রহ্মদেশ মালব উপদ্বীপ,চীন,আরব, পারস্য,দক্ষিণ আফ্রিকা,আবিসিনিয়া,পর্তুগাল প্রভৃতি দেশের সাথে বিজয়নগরের বহিরবাণিজ্য চলত ৷ প্রধান রপ্তানির মধ্যে ছিল নানা ধরনের বস্ত্র,সুগন্ধি, মসলা,চাল,চিনি, তোরা,লোহা ইত্যাদি ৷ বিদেশ থেকে আমদানি হতো ঘোড়া,হাতি, তামা,কয়লা, পারদ প্রবাল,ভেলসে,ভেলভেট ইত্যাদি ৷ স্থলপথে ও জলপথে অন্তর দেশীয় বাণিজ্য চলত ৷

কৃষি ও বাণিজ্য বিকাশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিল্প কলকারখানার গড়ে ওঠে ৷ বিভিন্ন ধরনের শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থা বিজয়নগরের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে ওঠে ৷ নানা ধরনের পণ্য সামগ্রী উৎপাদন ছাড়া বৃহৎ শিল্প কলকারখানা হিসাবে অস্ত্র নির্মাণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে ৷ শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে শহর ও নগর ৷ শহর ও নগর গুলির সমৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বিজয়নগরের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি ধারণা লাভ করা হয় ৷

বিজয়নগর রাজ্যের আর্থিক সমৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম ছিল ভূমি রাজস্ব ৷ পর্তুগিজ পর্যটক নুনিজের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে,"বিজয়নগরের রাজারা রাজস্ব ইজারা দিতেন কেবলমাত্র ইজারা নয়, বন্দর ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র,প্রোতাশ্রয়, বড় বড় শহর গুলিতে যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলতো সেগুলির ক্ষেত্রে রাজা সরাসরি শুল্ক আদায় না করে ইজারাদার নিযুক্ত করতেন ৷ একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় শীতকালে ধান উৎপন্নের এক তৃতীয়াংশই তিল রাগী ছোলা ইত্যাদির এক চতুর্থাংশ পেয়ারা ও শুকনো জমির উৎপন্নের এক শতাংশ রাজত্ব দিতেন ৷ ভূমি রাজস্ব ছাড়াও প্রজাদের সম্পদকর, বিক্রয় কর,যুদ্ধ কর, বিবাহ কর ইত্যাদি নানা ধরনের অতিরিক্ত কর দিতে হতো ৷

এই যুগে শিল্প ও বাণিজ্যে গিল্ড সংঘের বিশেষ গুরুত্ব ছিল ৷ একই ধরনের শিল্প বা ব্যবসা শহরের নির্দিষ্ট স্থানে গড়ে ওঠার প্রবণতা ছিল ৷ আব্দুর রাজ্জাক লিখেছেন," এক এক ধরনের শিল্প বা ব্যবসার জন্য এক একটি স্বতন্ত্র গিল্ড বা সংঘ গড়ে উঠতো৷" গিল্ডের তত্ত্বাবধানে এই ব্যবস্থা শহরের নির্দিষ্ট অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হতো ৷ প্রাইজের বর্ণনাতেও ব্যবসায়িক সংগ্রহ এবং কেন্দ্রীভূত বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠার কথা পাওয়া যায় । এই যুগে কিছু লোক অতি বিত্তবান হলেও সাধারণ প্রজাদের আর্থিক অবস্থা ভীষণ খারাপ ছিল ৷ ঐতিহাসিক নীলকন্ঠ শাস্ত্রী বিজয়নগর কে 'যুক্তরাষ্ট্র' হিসাবে গণ্য করেছেন ৷

বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ থেকে জানা যায় বিজয়নগর এর জাতিভেদ প্রথার বিদ্যমান ছিল ৷ সমাজে বাক্ষন,ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শূদ্রদের বিরাজ ছিল ৷ পর্যটক নুনিজ ব্রাহ্মণদের সদরক্ষক পরিশ্রমী তীক্ষ্ণ মেধা সম্পন্ন এবং হিসাব শাস্ত্রে পারদর্শী বলে অভিহিত করেছেন ৷ জাতিভেদ প্রথা থাকলেও বিভিন্ন জাতির মধ্যে মেলামেশা কঠোরতা ছিল না । সমাজের বাল্যবিবাহ,পুরুষদের বহু অভিভাবক এবং সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল ৷ সচ্ছল শ্রেণীর লোকের বিবাহের পণপ্রথার ব্যাপকতা ছিল ৷

বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ থেকে জানা যায় তারা উন্নত ও সুস্থ সংস্কৃতির অধিকারী ছিলেন ৷ রাজা কৃষ্ণদেব রায় ছিলেন পন্ডিত ও সাহিত্যের একান্ত অনুরাগী ৷ এই যুগে সংস্কৃত,তেলেগু,তামিল ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় ৷ কৃষ্ণদেব রায়ের আমলে অষ্টাদ্বিক গজ নামে সংস্কৃতি ধ্যান মানুষ রাজ্যসভা অলংকৃত করতেন ৷ এ যুগের শ্রেষ্ঠ দুটির স্থাপত্য হল হাজার রাম মন্দির ও বিঠল স্বামী মন্দির ৷ বিজয়নগর এর উন্নত সংস্কৃতি মনসিকতা প্রেক্ষিতে জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন "the emperor growth about a synthesis of South Indian culture"

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বিদেশি পর্যটকদের রচনা থেকে বিজয়নগর সম্পর্কে কি জানা যায় এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟