গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর কৃতিত্ব আলোচনা কর অথবা,গৌতমী পুত্র সাতকর্ণী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর অথবা,গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর বিশেষ উল্লেখপূর্বক সাতবাহনদের কৃতিত্ব বিচার কর। অথবা,সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট কে ছিলেন? তাঁর কৃতিত্বগুলি আলোচনা কর?

ভারতবর্ষের ইতিহাসে আমরা বহুবার লক্ষ্য করেছি বহু রাজবংশ একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল শাসন করার পর হঠাৎ কোনো বিপর্যয় ওই বংশকে কালের অন্তরালে ডুবিয়ে দিয়েছে, তবে ওই বংশের কোন প্রতিভাবান শাসক পুনরায় রাজবংশের মর্যাদা সর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি করে ওই বংশকে আবার শাসন ক্ষমতায় পুনর প্রতিষ্ঠা করেছে । দাক্ষিণাত্যের সাতবাহন বংশের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটে ছিল, সিমুক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সাতবাহন, সাম্রাজ্য এবং প্রথম সাতকর্ণী দ্বারা সুসংগঠিত সাম্রাজ্যের একটা বড় অংশ পশ্চিমী শকদের অধীনে চলে গিয়েছিল । সাতবাহনদের গৌরব অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছিল, তবে এই লুপ্ত গৌরব দীর্ঘকাল একই অবস্থায় থাকেনি, এক্ষেত্রে গৌতমী পুত্র সাতকর্নি সেই হারিয়ে যাওয়া গৌরব পুনঃউদ্দার করেছিলেন, তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন এই সাতবাহন সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ শাসক ।
গৌতমীপুত্র সাতকর্নি সম্পর্কে জানতে আমাদেরকে নির্ভর করতে হয় জুনাগড় লিপি, হাতিগুঞ্জা লিপি পুরান এবং মাতা গৌতমী বলশ্রীর রচিত নাসিক প্রসস্তির উপর ৷ শক ক্ষএক নহপানের সঙ্গে যুদ্ধের সময়-কাল মাথায় রেখে মনে করা হয়, তিনি সিংহাসনে বসেন ১০৬ খ্রিঃ এবং রাজত্ব করেন ১৩০ খ্রী পর্যন্ত ৷
নাসিক প্রশস্তি থেকে জামা যায় গৌতমীপুত্র শকদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং হৃত রাজ্যে পুনঃ উদ্দার করেন, সম্ভবত শক শাসক নহপানকে পরাজিত করে সৌরাষ্ট্র, গুজরাট, মালব, আকর,অবন্তি, বিদর্ভ, সুরথ উদ্দার করেন । এছাড়াও উঃকঙ্কণ-নর্মদা উপত্যকা, পৈঠান কৃষ্ণ উপত্যকা জয় করেন, তাঁর রাজ্য সীমাছিল বিন্ধ পর্বত থেকে মালয় পর্বত এবং পূর্বঘাট পর্বত মালা থেকে পশ্চিমঘাট পর্বত মালা পর্যন্ত। দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে এত বড় রাজ্য এর আগে কখনো গড়ে ওঠেনি ৷ নাসিক প্রশস্তিতে গৌতমি পুত্রের অশ্ব বাহিনীকে "তিন সমুদ্রের জল পানকারী" বলে অভিহিত করা হয়েছে ৷ এছাড়া তাকে বলা হয়- সাতবাহন কূল-যশ প্রতিষ্ঠাপনকর । শত্রু রাজ্য পরাজিত করায় তিনি আক্ষাপান – 'শক – যবণ- পল্লব – নিসৃদন।'
গৌতমীপুত্র শকদের ক্ষহরত শাখার রাজ্য নহপান-কে পরাজিত করেন । পরবর্তীকালে শকদের কর্দমাক শাখার রাজা রুদ্র দামনের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন, জুনাগড় লিপি থেকে জানা যায় রুদ্রদামন সাতকর্ণি কে পরাজিত করেন । শেষে তিনি রুদ্রদামণের কণ্যার সহিত বশিষ্ঠ পুত্র সাতকর্মির বিবাহ দেন । যদিও এই পন্থা অবলম্বন করে সাতকর্নির বিশেষ কিছু লাভে হয়নি ৷ কারন দেখা গেছে আত্মিয়তা থাকার সত্ত্বেও রুদ্র দামণ সাতকর্নিকে একাধিক বার পরাজিত করেছেন ।
নাসিক প্রশস্তিতে গৌতমীপুত্রের বহুমুখী কার্যাবলীর পরিচয় পাওয়া যায় । ঐতিহাসিক গোপালাচারী বলেন-তিনি যোদ্ধা হিসাবে বড়ো ছিলেন । কিন্তু শান্তির কাজে আরও বড়ো ছিলেন । ক্ষত্রিয় শ্রেণীর দর্প চূর্ণ করেন । ব্রাহ্মন ও নিম্ন শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষণ করেন, মানবতাবাদের দ্বারা পরিচালিত হন । রাজস্থ্য ব্যবস্থা পূর্ণবিন্যাস করে কর লাঘব করেন, তার সময় শিল্প বাণিজ্যের বিস্তার ঘটে, বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তিনি ছিলেন উদার পর ধর্ম সহিষ্ণু । মূলত তিমি অধঃপতিত সাতবাহান শক্তিকে দক্ষিন ভারতের অন্যতম শক্তিতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
কিছু প্রশ্নঃ
সাতবাহণ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
সিমুক
কোন রাজা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণির দ্বারা পরাজিত হয়েছিলেন?
নহপন
নাসিক প্রশস্তি কার লেখা?
মাতা গৌতমী বলশ্রী।
নাসিক প্রশস্তি কার কাহিনী বর্ণিত আছে?
গৌতমীপুত্র সাতকর্নির
কাকে দক্ষিণ পথপতি বলে অভিহিত করা হয়?
গৌতমীপুত্র সাতকর্নিকে
গৌতমীপুত্র সাতকার্ণি কোন শক শাসককে পরাজিত করেন ?
শক শাসক রুদ্রদামন।
শক-যবন-পল্লব-নিসূদন' উপাধিটি কার?
গৌতমী পুত্র সাত কর্নির।
রুদ্রদামণের কন্যার সঙ্গে কোণ সাতবাহণ সম্রাটের সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল?
বশিষ্ঠ পুত্র পুলুমায়ীর সঙ্গে।
শকদের পরাজিত করে গৌতমীপুত্র কী উপাধি নিয়েছিল
রাজরাজ, মহারাজ।
সাত বাহন বংশের শেষ সম্রাট কে ছিলেন?
এটা তোমার কমেন্ট করবেন
সম্ভাব্য প্রশ্নগুলি হল :-
- সাতকর্ণী এর পরিচয় দাও।
- তার সম্রাজ্য বিস্তার সম্পর্কে যা জানো লেখ।
- গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী সঙ্গে নহপানের সংঘাতের পরিচয় দাও ৷