ভক্তিবাদী আন্দোলন সম্পর্কে কি জানো ভারতের সমাজে এই আন্দোলনের প্রভাব পর্যালোচনা কর

ভক্তিবাদী আন্দোলন সম্পর্কে কি জানো ভারতের সমাজে এই আন্দোলনের প্রভাব পর্যালোচনা কর অথবা,মধ্যযুগীয় ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ভক্তি আন্দোলনের

ভক্তিবাদী আন্দোলন সম্পর্কে কি জানো ভারতের সমাজে এই আন্দোলনের প্রভাব পর্যালোচনা কর অথবা,মধ্যযুগীয় ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ভক্তি আন্দোলনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। বা,সুলতানিযুগে ভক্তি আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ আলোচনা কর। ইহা কি সামাজিক বিপ্লব ছিল?

ভক্তিবাদী আন্দোলন সম্পর্কে কি জানো ভারতের সমাজে এই আন্দোলনের প্রভাব পর্যালোচনা কর অথবা,মধ্যযুগীয় ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ভক্তি আন্দোলনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। বা,সুলতানিযুগে ভক্তি আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ আলোচনা কর। ইহা কি সামাজিক বিপ্লব ছিল?

ক্তি হল এক বিশেষ সামাজিক,ধর্মীয় এবং অন্তনিহিত ধারণা ৷ প্রকৃত অর্থে ভক্তি বলতে বোঝায় ঈশ্বরের নিকট নিজেকে পুরোপুরি সমর্পণ করা অর্থাৎ অন্তর পুরের বিশ্বসভার ও নিষ্ঠুর দ্বারা ভক্তের সঙ্গে ভগবানের সুদীর্ঘ প্রেমময় বন্ধন হল ভক্তিবাদের মূল কথা ৷ ভক্তি বলতে বোঝায় ধর্মীয় বিষয়ে আচার-আচরণ ও ধর্মীয় অনুশাসন জ্যাকযোগ্য কিংবা পূজাচার আরম্বরতা বর্জনের মাধ্যমে কেবলমাত্র নিষ্ঠার দ্বারা ভক্তের হৃদয়ের সঙ্গে ভগবানের এক সেতু নির্মাণ করা ৷ ভক্তিবাদী নীতি ছিল ঈশ্বরের নিকট প্রত্যেক মানুষ সমান অর্থাৎ ভক্তির মাধ্যমে সামাজিক সাম্যের আদর্শ ফুটে ওঠে ৷

ভারতবর্ষের প্রচলিত ধর্মপথে একদা ব্রাহ্মণবাদী ধর্ম মত অত্যন্ত স্বৈরীরূপ পরিগ্রহ করে ৷ব্রাহ্মণবাধি মতবাদ একদা সুপ্রাচীন মতবাদ এবং সমন্বয়বাদী আদর্শগুলিকে অব্যক্ত করে ধর্মকে পূজাচার যাগ-যঙ্গের ঘন ঘটায় মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলে ৷ বর্ণ ব্যবস্থা অস্পৃশ্যদের মধ্যে দিয়ে হিন্দু ধর্ম গতিহীন হয়ে পড়ে ‌৷ ব্রাহ্মণ্যবাদী অত্যাচারে হিন্দুধর্ম সততা বিভক্ত হয়ে যায় ৷ পরবর্তীকালে ব্রাহ্মণ্যবাদের এই প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে কবি লিখেছেন ----

"ভিন্ন জাত আর ভিন্ন বংশ এক জাতি তাই একশো অংশ হিন্দু রে তুই হবি ধ্বংস না ঘুচলে এই বালাই"

ব্রাহ্মণ্যবাদের এইরূপ স্বৈরাচারী হতে মানুষও সম্প্রদায়কে যুক্ত করার জন্য দক্ষিণ ভারত থেকে গঙ্গা প্রদেশ সহ প্রায় সমগ্র ভারতেই সঞ্চালিত হয় এক জনপ্রিয় ধর্মীয় সামাজিক আন্দোলন । যা ইতিহাসে ভক্তিবাদী আন্দোলন নামে পরিচিত ৷ এই আন্দোলনে ছিল পূজা চারের পরিবর্তে মানবতা, যাজযজ্ঞের পরিবর্তে প্রেম দ্বারা ভক্ত এবং ভগবানের সাথে অনিন্দ্য সুন্দর সম্পর্ক সৃষ্টি করা ৷ ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ধর্মচারণ প্রক্রিয়ার ভক্তিবাদ অবিকল্প পথের সন্ধান দিয়েছে অছিল একপ্রকার নিরব বিপ্লব ৷

ভক্তি আন্দোলনপ্রথম শুরু হয় পল্লব রাজাদের শাসনকালে দক্ষিণ ভারতে ৷ কালক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে বৃহত্তর ভারতে ভক্তি আন্দোলনের ৷ জনপ্রিয়তার পিছনে যে সকল সাধকদের নাম বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তারা হলেন রামানন্দ,সুরদাস রবিদাস,নানক, মীরাবাঈ,কোভিদ প্রমুখ কবিদের একান্ত কামনাই ছিল মানুষ সে মানুষের মৈত্রী ৷ মহারাষ্ট্রের রামদেবের ভক্তিবাদ প্রচার করে ঐশ্বর ও বিলাসের নিন্দা করেন এবং পরিশ্রম ও সততার জয়গান করেন ৷ বাংলার ভক্তিবাদী শাসক শ্রীচৈতন্যদেব ভক্তিবাদের নীতিগুলিকে কৃষ্ণ উপাসক, বৈষ্ণব ধর্মের পুঙ্গীভূত করে নতুন এক ধর্মমত প্রচার করেন ৷ শ্রীচৈতন্য রাধা কৃষ্ণের প্রেমকে ভগবানের প্রতি ভক্তের প্রেমের সাথে এক করে দেখিয়েছেন ৷ ডক্টর রমাকান্ত চক্রবর্তী বলেন শ্রী চৈতন্য ভক্তিবাদী আন্দোলনকে এক নবধারা প্রদান করেন ৷

ভক্তিবাদীরা ভক্তিযোগ এর উপর অধিক গুরুত্ব দেন ৷ তাদের মতে একমাত্র ভক্তি এবং আত্মনিবেদন এর মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ সম্ভব ৷ ঈশ্বরের কাছে নিঃস্বার্থ আত্ম সমর্পণের জন্য একজন গুরুর সান্নিধ্য প্রয়োজন ৷ অধিকাংশ ভক্তিবাদী সাধক জাতিভেদ বর্ণভেদ প্রকৃতি সামাজিক বিভেদ তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন ৷ ভারতবর্ষে ভক্তিবাদের প্রকাশ বহু পূর্বেই ঘটেছিল ৷ প্রেম ভক্তি নিয়ে ভারতে ভক্তিবাদী আন্দোলনের জন্ম হয় ৷

ভক্তিবাদের প্রভাব সম্পর্কে মার্কসবাদীর ঐতিহাসিক বাস্তুতান্ত্রিক ধারণা থেকে ব্যাখ্যা করেছেন ৷ ডি.ডি.কোশাম্বি ন্যায় পন্ডিতরা মনে করেন ভক্তি ধর্ম মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে উদ্ভিতম । ঐতিহাসিক রামচরণ শর্মা ভক্তিবাদের যে আনুগত্যের বিষয়টি রয়েছে তাকে সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা থেকে উদ্ভূত বলে মনে করেন ৷ ডঃ ইরফান হাবিব ভক্তি আন্দোলনের মধ্যে শ্রেণী দন্দের ও আভাস পেয়েছেন ৷ আবার রমেশ চন্দ্র মজুমদার মনে করেন এই আন্দোলন প্রচলিত সমাজের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে ৷

ভারতের ধর্ম ও সমাজ জীবনে ভক্তি আন্দোলন যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিল ৷ ভক্তিবাদের সামাজিক সাম্য ক্ষমতাসিনোদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুসলিম অধিপত্য ও হিন্দুদের জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ৷ এরা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে ভক্তিবাদের দ্বারা ভারতবর্ষের নতুন ধরনের জীবনকে সৃষ্টিতে যথেষ্ট সহায়ক হয়ে উঠেছে ৷

ভক্তিবাদী আন্দোলন সমার্কে কী জান? অথবা, ভক্তিবাদী আন্দোলন কি

ক্তিবাদ সংস্কৃত ‘ভজ্’ ধাতু থেকে ভক্তি শব্দের ব্যুৎপত্তি । ভক্তির মূল কথা ঈশ্বরের প্রতি অশেষ অনুরাগ বা ভক্তি হল এক বিশেষ সামাজিক এবং ধর্মীয় অন্তনির্হিত ধারণা, প্রকৃত অর্থে ভক্তি বলতে বোঝায়, ঈশ্বরের নিকট নিজেকে পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন করা অর্থাৎ অন্তরের বিশ্বাস, ভাব ও নিষ্ঠা ভরা ভক্তের দ্বারা ভগবানের সুদৃঢ় প্রেমময় বন্ধন হল ভক্তিবাদের মূলকথা, ভক্তি বলতে বোঝায় ধর্মীয় বিষয়ে আচার-আচরণ বাধর্মীয় অনুষ্ঠান যাগযজ্ঞে কিংবা পূজা আচরণের আড়ম্বরতা অর্জন করে কেবলমাত্র নিষ্ঠার দ্বারা ভক্তের হৃদয়ের সঙ্গে ভগবানের এক সেতু নির্মাণ করা । ভারতবর্ষে যখন ব্রাহ্মণ্যবাদী শৈরিকরূপ পরিগ্রহ করে ধর্মকে পূজা-আচার এবং যাগযজ্জের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলেছিল বর্ণব্যবস্থা অস্পৃশ্যতার মধ্য দিয়ে ধর্ম এক সংস্কৃতি গতিহীন হয়ে পড়েছিল, সেইসময় প্রেম এবং মানবতাকে সঙ্গে নিয়ে ভক্তিবাদী আন্দোলন ভারতবর্ষে বিরাট বিকাশলাভ করে ।

ভক্তিবাদী আন্দোলন ছিল পুজাচচার পরিবর্তে মানবতাবাদ, যাগযজ্ঞের পরিবর্তে প্রেম তারা ভক্ত এবং ভগবানের সঙ্গে অনিন্দ্যসুন্দর সমার্ক সৃষ্টি করা। ঐতিহাসিক এল শ্রীবাস্তব বলেন যে, বৌদ্ধধর্মের পতনের পর আমাদের ভক্তিবাদী আন্দোলনের মতো এত ব্যাপক ও জনপ্রিয় আন্দোলন আর সংঘটিত হয়নি, সে অর্থে ভক্তিবাদী আন্দোলন, ছিল এক নীরব বিপ্লব, ভুক্তিবাদ অনুসারে সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভক্তি হোকে গভীর ভালোবাসায় উত্তরণের কথা বলা হয় । এই ভালোবাসা হবে প্রভুর প্রতি অনুগত ভূত্যের, প্রেমিকার প্রতি প্রেমিকের, সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার মতো গভীর, একান্ত এবং প্রশ্নাতীত ৷

ভক্তিবাদীরা মূর্তিপূজার বিরোধীতা করে প্রচার করেন যে, ঈশ্বর নিরাকার ও বর্ণহীন, ঈশ্বরের অস্তিত্ব মনের গভীরে, এ প্রসঙ্গে কবীর বলেন, "পাথরের মূর্তির মধ্যেই যদি ঈশ্বরের অধিষ্ঠান, তাহলে আমি সুবিশাল পবর্তকেই দেবতা হিসাবে পূজা করার পক্ষপাতী, "ভক্তিবাদীরা প্রচার করেন, "ঈশ্বের অন্যকোনো ভাষা বোঝে না, তিনি কেবল বোঝেন ভক্তের অন্তরের ভাষা অর্থাৎ সকান্ত আহবান। ভক্তি আন্দোলন প্রথম শুরু হয় পল্লব রাজাদের আমলে দক্ষিন ভারতে, তামিল- ভাষী জনগণের মধ্যে, কালক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে বৃহত্তর ভারতে। ভক্তি আন্দোলনের জনপ্রিয়তার পিছনে যে সকল সাধকের নাম বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তারা হলেন শ্রীচৈতন্য, রামানুজ, রামানন্দ, সুরদাস, কবিদাস, মীরাবাঈ, সর্বোপরি কবীর ৷ ভুক্তিবাদী সাধক কবীরের একান্তই কামনা ছিল মানুষে মানুষে মৈত্রী । রবীন্দ্রনাথঠাকুর কবীরকে ভারতীয় জনগণের সঠিক কন্ঠস্বর বলে অ্যাখায়িত করেছেন।

পঞ্চদশ শতকে মহারাষ্ট্রে নামদেব ভক্তিবাদ প্রচার করে ঐশ্বর্যবিলাসের নিন্দা করেন এবং পরিশ্রম ও সত্যতার জয়গান করেন, অপর ভক্তিবাদী প্রচারক সুরদাস বলেন, মানুষের যন্ত্রণা, দুঃখ থেকে কৃষ্ণভক্তি মানুষকে অনেক আনন্দ দিতে পারে । ভক্তিবাদের ইতিহাসের শ্রীচৈতন্য ছিলেন অন্যতম, শ্রীচৈতন্য রাধা কৃষ্ণের প্রেমকে ভগবানের প্রতি ভক্তের প্রেমের সঙ্গে এক তুলনা করে দেখিয়েছেন, তিনি বলেন, ভাব সমাধির স্তরে উত্তীর্ণ হতে পারলে ভগবানের প্রতি ভক্তের ভালোবাসার চরম বিকাশ ঘটে এবং দিব্যদর্শন সম্ভব হয় । ড. রমাক্রান্ত চক্রবর্তী বলেন, শ্রীচৈতন্য ভক্তিবাদী আন্দোলনকে এক নবধারায় প্রদান করেন । ড. রমাক্রান্ত চক্রবর্তী' আরও বলেন, ভক্তি আন্দোলনের প্রভাব বঙ্গ তথা ভারতবর্ষের ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সর্বক্ষেত্রেই কমবেশি অনুভূত হয়েছিল ।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟