কোরিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখোCauses and consequences of the Korean War

কোরিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো

 কোরিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো



কোরিয়ার উপর দীর্ঘদিন ধরে চীনের আধিপত্য ছিল ৷ ১৮৯৪ থেকে ৯৫ সালে চীন জাপান যুদ্ধে জাপান জয়লাভ করলে কোরিয়ার উপর জাপানের আধিপত্য কায়েম হয় । জাপান শক্তিশালী হয়ে সাম্রাজ্যবাদ নীতি গ্রহণ করলে সে কোরিয়াকে নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার সমস্ত রকম চেষ্টা করতে শুরু করে ৷ ১৯০৫ সালের রুশ জাপান যুদ্ধে জাপান জয়ী হলে কোরিয়াকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে । ১৯১০ সালে সুযোগ পাওয়া মাত্র কোরিয়াকে তার সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেয় ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্তও কোরিয়া জাপানের অধীনে ছিল ৷ 


১৯৪৩ সালের কায়রো সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও চীন স্থির করে যে কোরিয়াকে জাপানের প্রভাব মুক্ত করে তাকে স্বাধীন দেশে পরিণত করা হবে ৷ ১৯৪৫ সালে পটসডাম সম্মেলন ও সেই একই সিদ্ধান্ত বজায় থাকে এমনকি 1945 সালের সোভিয়েত সরকার যখন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তখন কায়েরো সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল ৷ তবে রাশিয়ার যুদ্ধ ঘোষণার সময় ঠিক হয়েছে কোরিয়ার ২৮° সমান্তরাল রেখার উত্তরে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রাধান্য ও দক্ষিণে আমেরিকার প্রাধান্য থাকবে । কারণ জাপানকে যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করানোর জন্য মার্কিন বাহিনী কোরিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল ৷ ১৯৪৫ সালে আগস্ট মাসের জাপানের আত্মসমর্পণের পর কোরিয়া জাপানের অধীনতা থেকে মুক্তি পায় বটে কিন্তু কোরিয়া দুই মহাশক্তিদার অর্থাৎ সোভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র পরিণত হয় ৷ কোরিয়াকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা যুদ্ধ এশিয়াতে চলতে থাকে ৷

সোভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে কোরিয়ার ব্যাপারে সমস্যা সমাধান না হলে কোরিয়ার সমস্যাকে আমেরিকা জাতিপুঞ্জ তে পেশ করেছিল ৷ জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা করিয়া সম্পর্কে একটি অস্থায়ী কমিটি গঠন করেন ৷ এই কমিটির ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কোরিয়াতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং কোরিয়া থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে হবে সোভিয়েত ইউনিয়ন এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে এবং রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃত্ব নিযুক্ত কোন কমিশনকে উত্তর কোরিয়াতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল ৷


১৯৪৮ সালের ১০ই মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে দক্ষিণ কোরিয়াতে নির্বাচন হয় ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানাই যে উত্তর কোরিয়াতে জাতিপুঞ্জের নিযুক্ত কমিশন প্রবেশ করতে না পারার জন্য বাধ্য হয় এই পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছিল ৷ অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার অভিযোগ ছিল মার্কিনার দক্ষিণ কোরিয়ার যে নির্বাচন করেছে তা ছিল লোক দেখানো ৷ আসলে দক্ষিণ কোরিয়াতে তাদের তাঁবেদার সরকার গঠনই হলো মার্কিনদের উদ্দেশ্য ৷ ১৯৪৮ সালের ১৫ই আগস্ট সিংম্যান রির নেতৃত্বে দক্ষিণ কোরিয়াতে সরকার গঠিত হয় ৷ দক্ষিণ কোরিয়া মার্কিন ঘাঁটিতে পরিণত হয় এবং দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী হয় সিওল ৷


অন্যদিকে সোভিয়েত সরকার উত্তর কোরিয়াতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিযুক্ত কমিশনের সদস্যদের প্রবেশের অনুমতি না দিলেও ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উত্তর কোরিয়াতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিলেন ৷ এখানে মস্কোর প্রভাবে দিনে জনগণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৷ এই সরকারের প্রাধান্য ছিল কমিউনিস্ট নেতা কিম উল সং ৷  এইভাবে দুই বৃহৎ শক্তির প্রভাবে করিয়া ঠান্ডা লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিণত হয় যার পরিণতিতে কোরিয়ার ঐক্য ধূলিসাৎ হয় ৷




মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কখনো কোরিয়ার ঐক্যবদ্ধ চাইনি ৷ কারণ মার্কিনরা দক্ষিণ কোরিয়াতে নিজ প্রভাব বজায় রাখতে চেয়েছিলেন ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থে দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নতি বিধানে প্রচেষ্ট হয়েছিলেন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়াকে পরিকল্পিতভাবে সাহায্য ও মদত দিয়ে কোরিয়া উপদ্বীপে এক উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন ৷ ফলস্বরূপ মার্কিন সাহায্যে স্পষ্ট দক্ষিণ কোরিয়ার  সাম্যবাদী উত্তর কোরিয়াকে যুদ্ধের হুমকি দিতে থাকে ৷ তাই কোরিয়া সংকটে মার্কিনদের ভূমিকা কে অস্বীকার করা যায় না ৷


১৯৫০ সালে ২৫ জুন উত্তর কোরিয়া ৩৮° সামান্তরাল রেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়াতে সৈন্য প্রেরণ করলে আনুষ্ঠানিকভাবে করিয়া যুদ্ধের সূচনা হয় । সোভিয়েত রাশিয়ার বক্তব্য ছিল এই যুদ্ধের পেছনে তাদের কোন ভূমিকা নেই ৷ কিন্তু সমস্ত বিষয়কে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সোভিয়েত সমর্থন ছাড়া উত্তর কোরিয়া কখনোই যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে সাহস করত না ৷

দক্ষিণ কোরিয়াকে উত্তর কোরিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে সোভিয়েত রাশিয়া দক্ষিণ কোরিয়া বন্দর ও উপকূল ভাগকে বাণিজ্যের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন ৷ তাই বলা যায় আমেরিকা যেমন কোরিয়া যুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেছিলেন তেমনি সোভিয়েত রাশিয়ারও ভূমিকা যুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল ৷


উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সংগ্রাম শুরু হলে আমেরিকার দাবিতে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক বসেছিল ৷ সোভিয়েত রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বয়কট করেছিলেন ৷ সোভিয়েত রাশিয়ার অনুপস্থিতিতে আমেরিকার প্রভাবে নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণ কারী ঘোষণা করে তাদের সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেয় ৷ মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান দক্ষিণ কোরিয়াকে সকল রকমের সাহায্যদানের প্রতিশ্রুতি দেয় এমনকি নিরাপত্তা পরিষদও সেই ঘোষণাই করেছিলেন ৷ ৭ই জুলাই নিরাপত্তা পরিষদের আরেকটি প্রস্তাবে কোরিয়াতে জাতিপুঞ্জের বাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ মার্কিন সেনাপতি ম্যাক আর্থারকে জাতিপুঞ্জের বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷

ফলস্বরূপ ম্যাক আর্থারের নেতৃত্বে নিরাপত্তা পরিষদের বাহিনী কোরিয়া যুদ্ধের অংশ নিয়েছিলেন ৷ এই বাহিনী উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের ৩৮ ° রেখার উত্তরে বিতাড়িত করেছিলেন এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে উত্তর কোরিয়া পদানত হয় ৷ দক্ষিণ চীন সীমান্ত সংলগ্ন ইয়োলো নদীর তীর পর্যন্ত জাতিপুঞ্জের সেনাবাহিনী অগ্রসর হয় ৷


এই সুযোগে সাম্যবাদী চীনকে আক্রমণ করা ছিল মার্কিনীদের আসল উদ্দেশ্য ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর উত্তর কোরিয়াকে সমর্থনের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন চীনের যোগদানের ফলে করিয়া যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক চরিত্র লাভ করে ৷ এই যুদ্ধ হয়ে পড়েছিল চীন মার্কিন যুদ্ধ ৷ তবে শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া চীন ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মধ্যে ৫৭৫ টি বৈঠকের পর এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে ৷


কোরিয়া যুদ্ধ ও ঠান্ডা লড়াইকে এশিয়া ভূখণ্ডে সম্প্রসারিত করেছিল ৷ এতদিন পর্যন্ত ঠান্ডা যুদ্ধ ইউরোপের সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ ছিল কিন্তু বৃহৎ শক্তিবর্গ নিজেদের স্বার্থের তাগিদে এই যুদ্ধকে এশিয়াতেও টেনে নিয়ে এসেছিল ৷ তাছাড়া এই যুদ্ধে মার্কিনিদের যোগদানের কারন ছিল সেখানে নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থকে কায়েম করা ৷ অর্থাৎ কোরিয়াকে তাদের সরাষ্ট্রে পরিণত করা ছিল মার্কিনীদের উদ্দেশ্য ৷ কিন্তু কোরিয়া যুদ্ধের ফলাফল মার্কিনীদের সেই আশাকে পূরণ করেনি ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩৮° রেখার বিভাজনকে মেনে নিতে বাধ্য হয় । যার ফলে আজও দুটি রাষ্ট্র বিভক্ত হয়ে আছে ৷


তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কোরিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখোCauses and consequences of the Korean War এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟