অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে জাপানের উত্থান আলোচনা করো। The rise of Japan as an economic power

অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে জাপানের উত্থান আলোচনা করো।

 অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে জাপানের উত্থান আলোচনা করো।

অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে জাপানের উত্থান আলোচনা করো। The rise of Japan as an economic power


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলায় জাপানের অর্থনীতি মূলত পঙ্গু হয়ে পড়ে। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরবর্তী বছরগুলোয় দারুণ খাদ্যাভাব, অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি ও ব্যাপক চোরাকারবারি ব্যবসা প্রভৃতি কারণে অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হ্যা। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সহায়তায় জাপানি জনগণ তাদের অর্থনীতি পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান, কঠোর পরিশ্রমী ও আত্মমর্যাদা সম্পর্কে সচেতন জাপানি জনগণ শত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সাফল্যের সন্ধান পায়


যুদ্ধ শেষ হওয়ার নয় বছর পর ১৯৫৫ সালে জাপানি অর্থনীতি যুদ্ধ পূর্ববর্তী অবস্থায় আসাতে সক্ষম হয়। ১৯৫৬ সালে জাপান সরকার 'অর্থনৈতিক স্বেতপত্রে মোষণা দিতে সক্ষম হয়, 'যুদ্ধোত্তরকালের অবসান ঘটেছে, যুদ্ধ পূর্ববর্তীকালে অর্থনীতি যেখানে ছিল আমরা এখন সেখানে।'


ষাটের দশকে জাপান সরকার বিখ্যাত 'আয় দ্বিগুণ পরিকল্পনা'র মাধ্যমে দশ বছরের মধ্যে জাপানের সাধারণ জনগণের আয় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করে এবং এই পরিকল্পনা খুবই দ্রুত সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়। আর্থিক বৃদ্ধির ফলে এই সময় জাপানে খাবার এবং কাপড় চোপড়ের চাহিদা কমে, পরিবর্তে বিনোদন কিংবা অন্যান্য জিনিস যেমন আসবাবপত্র, ক্যামেরা, টিভি, বই, যোগাযোগ আর যাতায়াত ব্যবস্থার চাহিদা বেড়ে যায়। জাপান সরকার তখন জাপানের পরিকাঠামোর উন্নতির দিকে নজর দেয়। ফলস্বরূপ প্রচুর পরিমাণে হাইওয়ে, রেলওয়ে, সাবওয়ে, এয়ারপোর্ট, বন্দর আর বাঁধ গড়ে ওঠে। আর এই দলক পরিচয় পেল 'সোনালী যুগ' হিসেবে।


১৯৭৩ সালে হঠাৎ জাপানের অর্থনীতিতে ধস নামে। এই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে এক ব্যারেল তেলের দাম ৩ ডলার থেকে সরাসরি বেড়ে ১৩ ডলারে পৌঁছে যায়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে, এই প্রথম আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হয়, দেখা দেয় মূদ্রাস্ফীতি। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয়বার তেলের দাম বিশাল লাফ দিলেও জাপান সরকার তৎক্ষণাৎ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ফলে মুদ্রাস্ফীতি প্রকট আকার ধারণ করে। এই সময় বিশাল যন্ত্র তৈরির বদলে জাপান মনোযোগ দেয় টেলিকমিউনিকেশন আর কম্পিষ্টারের উপর। অটোমোবাইল শিল্পেও ব্যাপক উন্নতি দেখা গেল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির বাজারের এক-তৃতীয়াংশ চলে গেল জাপানি কোম্পনিগুলোর দখলে।


১৯৮০ সালের মধ্যেই জাপানের সেকারত্বের হার নেমে আসে ৫% এর নীচে। আশির দশকের পুরোটাই বেকারত্বের হার ছিল খুবই কম। জাপনের রেস্তোরাগুলোতে ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার ডলার খরচ করতে থাকল, গুচ্চি, আরমানি আর লুই ভু্যুটোনের মতো বিলাসী পোশাকদ্রব্যের দোকানগুলোতে দেখা গেল জাপানিদের ভিড়। জাপানি পর্যটকদের সংখ্যাও বেড়ে গেল। বিনোদন জগত দখল করে নিল অ্যানিমে আর মাঙ্গ। নিওটন্ডোর হাত ধরে সূচনা হল ভিডিও আর্কেড গেমসের।


বিশ্বের অন্যতম প্রধান ব্যাঙ্ক, বাণিজ্যিক সংস্থা, বীমা কোম্পানি আর বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শেয়ার বাজার টোকিও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড স্টক এক্সচেঞ্জের কারণে টোকিও হয়ে উঠল পৃথিবীর অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হল।


১৯৯০ এর দশকের মধ্যভাগে জাপান কিছুকালের জন্য অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু একুশ শতাব্দীর প্রথমভাগেই আবার জাপানে স্বাভাবিক আর্থিক দিলঙ্গ ঘটতে শুরু করে ২০১০ সালের হিসেব অনুসারে জাপানে বেকারত্বের হার বেশ কম প্রায় ৪% ২০০৯ সালে বিশ্বজনীন মন্দা এবং ২০১১ সালের মার্চেভূমিকম্প ও সুনামির ফলে যে বিশাল বাজেট ঘাটতি ও সরকারী ঋণ বৃদ্ধি পায় তার রেটিংয়ের হারকে কমিয়ে দেয়।


মূল্যায়ন: জাপান জাতিসংঘ, জি-৭, জি-৮ ও জি-২০ গোষ্ঠীগুলির সদস্য। জাপান একটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্র। মোট আভ্যন্তরীন উৎপাদন অনুযায়ী জাপান বিশ্বের তৃতীয়। বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ক্রয়ক্ষমতার সাম্য অনুযায়ী চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। এছাড়া জাপান বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম রফতানি ও আমদানিকারক রাষ্ট্র। সব মিলিয়ে জাপান আজ বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র। 

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟