নেপোলিয়নের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের বিবরণ দাও? তিনি কি বিপ্লবের সন্তান ছিলেন? অথবা তুমি কি মনে কর নেপোলিয়ন একাধারে বিপ্লবের উত্তরাধিকারী ও বিপ্লবের ধ্বংসকারী ছিলেন?

নেপোলিয়নের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের বিবরণ দাও? তিনি কি বিপ্লবের সন্তান ছিলেন? অথবা তুমি কি মনে কর নেপোলিয়ন একাধারে বিপ্লবের উত্তরাধিকারী ও বিপ্লবের ধ্বংসক

 নেপোলিয়নের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের বিবরণ দাও? তিনি কি বিপ্লবের সন্তান ছিলেন? অথবা তুমি কি মনে কর নেপোলিয়ন একাধারে বিপ্লবের উত্তরাধিকারী ও বিপ্লবের ধ্বংসকারী ছিলেন?নেপোলিয়ানের অভ্যন্তরীন সংস্কারগুলির পরিচয় দাও। তিনি কি বিপ্লবের উত্তরাধিকারী


নেপোলিয়নের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের বিবরণ দাও? তিনি কি বিপ্লবের সন্তান ছিলেন? অথবা তুমি কি মনে কর নেপোলিয়ন একাধারে বিপ্লবের উত্তরাধিকারী ও বিপ্লবের ধ্বংসকারী ছিলেন?

বাপোলিয়ন বোনপাটের উত্থান ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের প্রথম কনসাল হিসেবে। এই সময় নেপোলিয়ান কয়েকটি যুদ্ধে জয়ী হয়ে ফ্রান্সের বিপ্লবী ও পর্বের অবসান ঘটিয়ে নতুন অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে সর্বময় কর্তৃত্ব লাভ করেন। ১৭৮৯-৯৯ পর্যন্ত ফ্রান্সে যে বিপ্লবী ও রাজনীতির এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো হয়েছিল তাই তাকে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল কারণ নেপোলিয়ন ছিলেন একজন সাধারণ সৈনিক বিপ্লব না হলে তিনি ফ্রান্সের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হতে পারতেন না। বিপ্লব তাকে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল। তিনি তাই নিজেকে বলেছেন বিপ্লবের সন্তান বা বিপ্লবের উত্তরাধিকারী কারণ বিপ্লব থেকেই তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। বিপ্লবের মূল আদর্শ- স্বাধীনতা, সাম্য, ও মৈত্রী। তিনি দার্শনিকদের রচনা পড়ে প্রজাতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন তবে তিনি স্বাধীনতা নীতিকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি। কারণ তিনি মনে করতেন" It was not the equality and libarty but Vanity of the middle class that produced the revolution" এই কারণে তিনি মন্তব্য করেছেন'। destroyed The revolution' সুতরাং নেপোলিয়নের এই উভয় বিধরুপ লক্ষ্য করা যায় তার সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। কারণ ১৭৯৯ সালে কনসালেটের পদে অধিষ্ঠিত হয়েই তিনি সম্ভবত তা সংস্কারের মধ্য দিয়ে গৌরবের শিখরে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। বিপ্লবী ঐতিহ্যের উপর দাঁড়িয়ে তিনি তার সংস্কার এবং পুনর্গঠন কাজ শুরু করেছিলেন। প্রথম কনসাল রূপে (১৮০০-১৮০৩) এর মধ্যে তিনি অনেকগুলো সংস্কার করেছিলেন। যাতে স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে বৈপ্লবিক মতাদর্শের সমন্বয় ঘটেছিল।

‎ ‎
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
‎ ‎

নেপোলিয়নের এই অভ্যন্তরীণ সংস্কার গুলোর মধ্যেই তাই খুঁজে পাওয়া যাবে বিপ্লবের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি। তার শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের মূলভিত্তি ছিল একনায়কতন্ত্র। নেপোলিয়ন এই একনায়কতন্ত্র বজায় রাখার জন্য একটি সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যার মাধ্যমে মন্ত্রীদের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হত। আবার নেপোলিয়নের প্রশাসনিক কাঠামোর কেন্দ্রে ছিল 'council of state' কিন্তু এদের কারোরই কোন স্বাধীনতা ছিল না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেপোলিয়ান নিজেই নিতেন স্থানীয় শাসনের ক্ষেত্রে নেপোলিয়ন বুরবো আমলের কেন্দ্রীকরণ নীতি কে ফিরিয়ে এনেছিলেন। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বিলোপ করে। পূর্বের মত সমগ্র ফ্রান্সকে ৮৩টি ডিপার্টমেন্টে ভাগ করেছিলেন প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে আবার জেলা কমিউনে বিভক্ত হয়েছিল। নেপোলিয়ন প্রিফেক্ট, সাব প্রিফেক্ট, মেয়র মনোনয়ন করে স্থানীয় শাসনের ওপর নজর রাখতেন। তাছাড়া নেপোলিয়ান সরকারি কর্মীদের দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ "লিজিয়ান অফ অনার" উপাধি দিয়ে একদল অনুগত অভিজাত সৃষ্টি করেন।

‎ ‎

ডেভিড টমসন মনেকরেন নেপোলিয়নের অভ্যন্তরীণ সংস্কারগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল আইন বিষয়ক সংস্কার। বিপ্লবকালীন ফ্রান্সে কোন সাধারণ আইন ছিল না। সারাদেশে প্রচলিত ছিল বহু আঞ্চলিক ও স্বতন্ত্র আইন। তাই আইনগত অধিকার নিয়ে স্পষ্ট ও স্থির ধারণা তৈরি করার জন্য বিশিষ্ট আইনবিদদের নিয়ে ১৮০০ সালে একটি কমিটি গঠন করে এই কমিটি দীর্ঘ পরিশ্রমের পর ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে' সিভিল কোর্ড' সম্পূর্ণ করে। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ফৌজদারি আইন, বাণিজ্যিক আইন, দন্ডবিধি রচনা সম্পূর্ণ হয় এটিকে বলা হয় 'কোর্ড অফ নেপোলিয়ন'। 'কোর্ড অফ নেপোলিয়নে' পারিবারিক আইন, পৈত্রিক আইন, সম্পত্তির অধিকার বিষয়ক আইন গুরুত্ব পেল। এই নতুন আইন বিধিতে স্ত্রীকে স্বামীর কর্তৃত্বাধীনে স্থাপন করা হল। অর্থাৎ ২২৮৭ ধারা সমন্বিত এই 'কোর্ড অফ নেপোলিয়ান' বিপ্লবের সামাজিক প্রত্যাশাকে কিছুটা পূরণ করল।

‎ ‎ ‎

নেপোলিয়ন ফ্রান্সে অর্থনীতিতেও বহুমুখী সংস্কার প্রবর্তন করেন। বিপ্লবী সরকার অ্যাসাইনেট নামক কাগজি মুদ্রা প্রচলন করেছিল। নেপোলিয়ন এর বদলে আবার সোনা ও রুপোর ধাতব মুদ্রা প্রচলন করলেন। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ব্যাংক অফ ফ্রান্স প্রতিষ্ঠা করে এই সংস্থার উপর মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের ভার দিলেন। বণিক ও শিল্পপতিদের ঋণ দানের ব্যবস্থা করলেন। প্রচলিত কর গুলো আদায়ের ব্যবস্থা করলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে দৃষ্টি দিলেন, পরিবহন ব্যবস্থা উন্নতির জন্য ৫০ হাজার মাইল সড়কপথ নির্মাণ করলেন। ডেভিড টমসন লিখেছেন নেপোলিয়নের এই আর্থিক সংস্কার ফ্রান্সকে স্বনির্ভর ও স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে গেল।

‎ ‎

তবে তিনি অবাধ বা বাণিজ্য নীতির পক্ষে ছিলেন না । মার্কিনটাইল মতবাদ অনুসরণ করে তিনি আমদানি কমিয়ে রপ্তানির ওপর জোর দিয়েছিলেন।

‎ ‎

নেপোলিয়নের শিক্ষা সংস্কারে কঠোর কেন্দীকরণের প্রবণতা দেখা যায়। ফ্রান্সের জাতীয় শিক্ষাকে তিনি সুগঠিত করেন প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে চারটি স্তরে বিন্যস্ত করেন। প্রতিটি কমিউনি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের পরিবর্তে নেপোলিয়ান 'লাইসি' নামক উচ্চবিদ্যালয় স্থাপন করেন সেখানে কঠোর শৃঙ্খলার সঙ্গে ভাষা তর্ক, নীতিশাস্ত্র, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ক পঠন পাঠানো হবে।

‎ ‎ ‎

এছাড়াও নেপোলিয়ন প্যারিস ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেন। নেপোলিয়ন জাতীয় গ্রন্থাগার, জাতীয় মহাফেজখানা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেন। তবে নারী শিক্ষার প্রতি তিনি ছিলেন উদাসীন। এমনকি নেপোলিয়নের বিপ্লবীও আদর্শবাদ বাস্তবরুপ পেয়েছিল তার ধর্ম সংস্কারের মধ্য দিয়ে। ধর্ম ছিল নেপোলিয়নের একটি রাজনৈতিক অস্ত্র। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে পোপ সপ্তম পায়াসের সঙ্গে নেপোলিয়ান একটি ধর্মীয় বন্দোবস্ত করলেন। এটিকে বলা হয় সিভিল কন্সটিউসন অফ দা ক্লার্জি। এর ফলে গোড়া ক্যাথলিকদের সঙ্গে বিপ্লবীদের বিচ্ছেদ ঘটলো রাজতন্ত্রীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেল।

‎ ‎ ‎

রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, ধর্ম, শিক্ষা সংস্কারের মধ্য দিয়ে নেপোলিয়ন বিপ্লবের উদারতন্ত্র এবং সাম্যকে নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। নেপোলিয়ন ক্ষমতা কেন্দ্রিকরণের পাশাপাশি জনগণের ইচ্ছা সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। অর্থাৎ নেপোলিয়ন তার সংস্কারের মাধ্যমে গণভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। বিপ্লবের আদর্শবাদ বাস্তব রূপ পেয়েছিল তার সাংগঠনিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন বিপ্লবের মুহূর্ত প্রতীক কারণ তিনি দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর জোর দিয়েছিলেন তার সংস্কারের মধ্য দিয়ে নাগরিকদের সম অধিকার, আইনের দৃষ্টিতে সমতা, জীবন বিকাশের অধিকার, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিপ্লবের ইতিবাচক সুফলকে স্থায়ী করতে চেয়েছিলেন। যা ছিল বিপ্লবের মূল লক্ষ্য।

‎ ‎

কিন্তু নেপোলিয়নের সংস্কার গুলো আলোচনা করে অনেকে তাকে বিপ্লবের ধ্বংসকার বলেছেন। ট্রটস্কি বলেন যে নেপোলিয়ন সামরিক বলপ্রয়োগ করে বিপ্লবকে ধ্বংস করেছেন। শুধু তাই নয় তার সংস্কারের প্রকৃতি বিশ্লেষন করলে স্বাধীনতার আদর্শে অনুপস্থিতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি সংবাদপত্রের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তাছাড়া তার শিক্ষানীতির লক্ষ্য ছিল অনুগত নাগরিক সৃষ্টি করা আর নির্বাচন ব্যবস্থা ছিল প্রহসন মাত্র। ঐতিহাসিক রাইকার বলেছেন নেপোলিয়ন বুর্জোয়াদের কাছে প্রাথমিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিলেন কারণ আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, ন্যায়ের শাসন, জীবন ও সম্পত্তির অধিকার, যোগ্যতার ভিত্তিতে সামাজিক মর্যাদা, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটিয়ে একদিকে যেমন বিপ্লবীও আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন অন্যদিকে স্বৈরতন্ত্রের প্রতি তার মোহ তাকে বিপ্লবের আদর্শ ভ্রষ্ট করেছিল। অনেক সময় তিনি বৈপ্লবিক ছিলেন না। ডেভিড টমসন মনে করেন নেপোলিয়নের মধ্যে পুরাতনতন্ত্র এবং বিপ্লবী ভাবাদর্শে সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। তাই একাধারে তাকে বিপ্লবের সন্তান অন্যদিকে বিপ্লবের ধ্বংসকর্তা দুইই বলা যেতে পারে।

‎ ‎
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟