'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করো।

'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করো।

'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করো।


 ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সম্প্র ভারতবাসী বারংবার সোচ্চার হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশ শক্তির এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ ব্যাপক ও গভীর প্রভাব পড়ে ১৯৪২ সালে আগস্ট বিপ্লবীদের মধে পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য গান্ধিজীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সমগ্র ভারতবর্ষ ব্যাপী ১৯৪২ সালে আগস্ট মাসের এই আন্দোলন আগস্ট আন্দোলন বা ভারত ছাড়ো আন্দোলন নায়ে পরিচিত।


 ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন বা আগস্ট আন্দোলন বার্থ হলেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ভারতে ভারত শাসনের বিরুদ্ধে সংঘঠিত শেষ সর্বভারতীয় গণবিদ্রের ছিল ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের চূড়ান্ত পদক্ষেপ। জনগণের মনে কংগ্রেসের প্রভাব যে কতখানি ব্যাপক ও সর্বাত্মক তাহা ভারত ছাড়ো আন্দোলনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। জয়প্রকাশ নারায়ণের মতে, -কংগ্রেস একাই দেশের রক্ষাকর্ত।


 এই ভারত ছাড়ো আন্দোলন দেখিয়েছে জনগণের জাতীয় চেতনা কত গভীর, তারা দেশের স্বাধীনতার জন্য যে-কোনো অত্যাচার সহা করতে পারে। এমনকি চরম আত্মত্যাগ করতেও তারা পিছ পা হয় না। দেশের স্বাধীনতার জন্য তারা এক অজেয় সংকল্প ও মানসিকতা নিয়ে আন্দোলনে অংগ নিয়েছিলেন।


 এই ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল প্রকৃত অর্থে এক গণবিপ্লব। নিধির ভারত কংগ্রেস কমিটি এই আন্দোলনকে 'গণযুদ্ধ' বলে আখ্যায়িত করেছে। জওহরলা নেহরু একে স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেছেন। শ্রমিক, কৃষকার সমাজের সকল শ্রেণীর ব্যাপক, সর্বাত্মক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংগ্রহণ ইতিপূর্বে আর কথনে দেখা যায়নি অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনঃ এই আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক। হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এই আন্দোলনের সম্পদ ছিল। মুসলিম লিগের বিরোধীতা সত্ত্বেও দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সাধারণ মুসলিমরা বিশাল সংখ্যায় সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনের অংশগ্রহণ করেছিল।


 এই আন্দোলনের ফলে জাতীয় জাগরণ ও জাতিয় ঐক্যবোধের যে মনোভাব গড়ে উঠেছিল তাহা ভারতের স্বাধীনতার পথ সুগম করেছিল। এই আন্দোলন ব্যর্থ হলেও তাহা ১৯৪৭ সালের ভারতের স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন করে। এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে, ভারতের স্বাধীনতা আগ্রত প্রায়।


ব্রিটিশ সরকার ভারত ছাড়ো আন্দোলনের তীব্রতা দেখে বুঝতে পারে যে, ভারতে তাদের দিন শেষ হয়ে আসছে। লর্ড ওয়াভেল এজন্য ব্রিটিশ সরকারকে লেখেন-ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দিন শেষ হয়েছে। আয়ারল্যান্ড ও মিশরে যেভাবে ব্রিটিশ ক্ষমতা হস্তান্ত হয়েছে, ভারতে এখনই তা করা প্রয়োজন। ভারতের স্বাধীনতা লাভ একটি অবধারিত ব্যাপার। ফলে এভাবে এই আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল।


জাতীয় কংগ্রেসের প্রায় সমস্ত নেতাকেই ব্রিটিশ সরকার গ্রেপ্তার করলে আন্দোলন পরিচালনার জন্য নতুন নতুন নেতার আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- জয়প্রকাশ নারায়ণ, অরুণা আসফ আলি, অজয় মুখার্জী, রামমনোহর লোহিয়া প্রমুখ।


 ঐতিহাসিক বরুণ দে-র মতে, ভারত ছাড়ো আন্দোলন যেন ব্যর্থ হয়েও ব্যর্থ হয়নি। সাম্রাজ্যবাদের প্রতি ভারতীয়দের ক্ষোভ ও স্বাধীনতার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা এই আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হয়েছিল। জওহরলাল নেহরু লিখেছেন, -নেতা নেই, সংগঠন নেই, উদ্যোগ-আয়োজন নেই,, কোনো মন্ত্রবল নেই, অথচ একটা অসহায় জাতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেভাবে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তা প্রকৃতই বিস্ময়ের ব্যাপার।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করো। এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟