সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের ফলাফল লেখো
১৮৫৭ খ্রিঃ সিপাহী বিদ্রোহ ভারতের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য র যুগান্তকারী ঘটনা। যদিও এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল তবুও ভারতের ইতিহাসে বিদ্রোহ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। ঐতিহাসিক গ্রিফিনের মতে, ১৮৫৭ খ্রিঃ মহাবিদ্রোহ ভারতের আকাশ থেকে অনেক মেঘকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল।
শাসন-ব্যবস্থায় পরিবর্তন:
কোম্পানীর শাসনের অবসানের উদ্দেশো এবং ভারতের শাসনভার ইংল্যান্ডের রানির হাতে হস্তান্তর করার জন্য ইংল্যান্ডের পালামেন্ট ১৮৫৮ খ্রিঃ ২ আগস্ট একটি আইন পাশ করে। এই আইনের মাধ্যমে ভারতে কোম্পানীর শাসনের অবসান ঘটিয়ে ঘোষণা করা হয় রানির হয়ে ভারত শাসন করবেন ভারত সচিব। তাঁকে সাহায্য করবেন ১৫ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি পরামর্শ সভা। আর ভারতে বসে রানির হয়ে শাসন করবেন ভাইসরয়।
মহারানি ভারত শাসনের দায়িত্ব নিয়ে একটি ঘোষণা প্রকাশ করেন। এই ঘোষণাপত্রে তিনি ভারতীয়দের বিভিন্ন বিষয়ে কিছু আশ্বাস দেন। স্বত্ববিলোপ নীতি প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়। ভারতীয়দের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
সামরিক ক্ষেত্রে বেশকিছু সংস্কার সাধন করা হয়।সেনাবাহিনীকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অঙ্গীভূত করে নেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর সংস্কার করা হয়েছিল এমনভাবে যাতে ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ দেখা না দেয়। ইউরোপীয় সেনার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। ভারতীয়দের উচ্চপদে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়। জাতি ও গোষ্ঠীর ভিত্তিতে ভারতীয় সিপাহীদের পৃথক করে রাখা হয়।
১৮৬১ খ্রিঃ ভারতীয় কাউন্সিল আইন পাশ করে কিছু প্রশাসনিক পুনগঠন করা হয়। এই আইনে বড়োলাটের কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ছয় থেকে বারোর মধ্যে রাখার কথা বলা হয়। এর মধ্যে অর্ধেক সদস্য হবে বেসরকারী সদস্য। আইন পরিষদের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়।
শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন ও মহারানির ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ভারতবাসীর মনে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল কয়েক বছরের মধ্যেই তা নিরাশায় পরিণত হয়। ব্রিটিশরা বিভিন্নভাবে ভারতীয়দের মধ্যে বিভেদনীতির প্রচার করে তাদের স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করে ভারতীয় সমাজের অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে দেয়। যে শিক্ষিত সমাজ মহাবিদ্রোহে ইংরেজদের পক্ষে ছিল তারাও ইংরেজ বিরোধী মনোভাব পোষণ করতে থাকে। এভাবে ক্রমে ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাবের উন্মেষ ঘটতে থাকে। শুরু হয় ভারত ইতিহাসের এক নব-যুগের।