বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম বৃহৎ শক্তি হিসাবে রুশ বা রাশিয়ার উত্থান আলোচনা করো।
উত্তর:- বিশ্ব রাজনীতিতে বর্তমানে একক মহাশক্তি হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে সাবেক মহাশক্তি সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরী ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া দাপটের সাথে বিশ্ব রঙ্গমঞ্চে এখন নতুন মহাশক্তি হয়ে উঠতে মরীয়া।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
* সিরিয়াকে সহায়তা প্রদান সম্প্রতি সিরিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার কূটকৌশল ও শক্তিমত্তারই জয় হচ্ছে। সিরিয়ার বিপর্যস্ত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ও তার সরকারী বাহিনী রাশিয়া ইরানের সহায়তায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছরের যুদ্ধের পর সিরিয়ায় সরকারী বাহিনীরই জয় হচ্ছে। এর মূল কারণ বাশার বিরোধী বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর পক্ষে সমর্থন দানকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তহীনতা ও দুর্বল ভূমিকা এবং সরকারী বাহিনীর পক্ষে রাশিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও সহায়তা প্রদান।
ইউক্রেনে আধিপত্য সম্প্রতি ইউক্রেনে যেসব ঘটনা ঘটে চলেছে তাতেও রাশিয়ার আধিপত্যবাদী ভূমিকার প্রমাণ পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও প্রতিপত্তি ক্রমেই ম্লান হয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে এবং পশ্চিমী দেশগুলির বিভাজনের সুযোগ নিয়ে রাশিয়া নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের স্বপ্নে এখন বিভোর। এরই অংশ হিসেবে রাশিয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ডের অংশবিশেষ ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছে। পশ্চিমা জোটের ছোট দেশগুলোকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রেও রাশিয়া বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইউক্রেন হচ্ছে এর জ্বলন্ত উদাহরণ।
* নির্বাচনে রুশ প্রভাষ: অতি সম্প্রতি রাশিয়া সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্রের নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া লাটভিয়ার নির্বাচনেও রাশিয়াপন্থী একটি দলকে বিজয়ী করার জন্য নানা উপায়ে প্রভাব বিস্তা করে। এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোর নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়ও রুশ প্রভাব ও হস্তক্ষেপ এখন একটি আলোচিত বিষয়। কিছুদিন আগে বসনিয়া হারজেগোডিনায় যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানেও রুশ হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা গেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বলকানের এই দেশটি তাদের অভ্যন্তরীন সমস্যা কাটিয়ে উঠে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য এগিয়ে। যায়। কিন্তু রাশিয়ার হস্তক্ষেপে সেখানেও সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
রাশিয়ার আফগান নীতি সম্প্রতি আফগান সংকট সমাধানে রাশিয়া এগিয়ে এসেছে। রাশিয়ার নেতৃত্বে আফগানিস্তানের উচ্চ পর্যায়ের শান্তি পরিষদের (এইচপিসি) প্রতিনিধি এবং ডালেবানদের মধ্যে এক বৈঠক হয়। এই বৈঠকের আয়োজন করার মাধ্যমে রাশিয়া যে এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে চায় তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আফগানিস্তানে প্রায় চার দশকের চলমান যুদ্ধ ও সংঘাত বন্ধ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত অন্য দেশগুলো যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে রাশিয়ার এই তৎপরতা তাদের নতুন খেলা ও সড়যন্ত্রেরই অংশ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মূল্যায়ন: পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া নতুন সুপার পাওয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ক্রমেই সীমিত হয়ে উঠলে বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার আধিপত্যই প্রতিষ্ঠিত হবে। এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি ও ন্যাটোর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের কাছে রাশিয়া বড়ো কোনো শক্তি নয়। কিন্তু আমেরিকা ও পশ্চিমাদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে রাশিয়া আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাশিয়া ন্যাটোকে দুর্বল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে রাশিয়া আরো শক্তি প্রদর্শন দেখাবে এবং নিজেকে একক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে জাহির করবে তা একপ্রকার নিশ্চিত করে বলা যায়। প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ার সামরিক শক্তির বিপুলতা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের প্রচুখতা আর সেই সঙ্গে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব রাশিয়ার বিশ্ব রাজনীতিতে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছে।