প্রথম ইঙ্গোচীন যুদ্ধ কে কি আফিম যুদ্ধ বলা যায় Is the First Anglo-Chinese War the Opium War?

প্রথম ইঙ্গোচীন যুদ্ধ কে কি আফিম যুদ্ধ বলা যায় চীনের রাজনীতিঅর্থনীতি সমাজ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এই যুদ্ধের প্রভাব আলোচনা কর বা প্রথম ইঙ্গো চীন যুদ্ধের কা

 প্রথম ইঙ্গোচীন যুদ্ধ কে কি আফিম যুদ্ধ বলা যায় চীনের রাজনীতিঅর্থনীতি সমাজ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এই যুদ্ধের প্রভাব আলোচনা কর বা প্রথম ইঙ্গো চীন যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখ অথবা,আফিম যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখ

প্রথম ইঙ্গোচীন যুদ্ধ কে কি আফিম যুদ্ধ বলা যায় চীনের রাজনীতিঅর্থনীতি সমাজ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এই যুদ্ধের প্রভাব আলোচনা কর বা প্রথম ইঙ্গো চীন যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখ অথবা আফিম যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখ



১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ এডমিরাল ইলিয়ট কয়েকটি আধুনিক জাহাজ অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্যবাহিনী নিয়ে চীন আক্রমণ করলে শুরু হয় প্রথম আফিম যুদ্ধ ৷ ঈমানওয়েসু বলেছেন, চিনারা বেআইনি আফিম ব্যবসায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন ৷ " ঐতিহাসিক ভিনাক বলেছেন," আফিম কখনই এই যুদ্ধের কারণ ছিল না সাম্রাজ্যবাদী নীতির মধ্যে এবং বিদেশীদের কাছে অপমানজনক ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার শর্তাবলির মধ্যে রুদ্ধদ্বার চীনকে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ তাদের সম্প্রসারণশীল শক্তি বাণিজ্য ব্যবস্থার কাছে উন্মুক্ত করতে চেয়েছিলেন ৷ অন্যদিকে চীন তার প্রথাগত জীবন ও সংস্কৃতি বজায় রাখতে চেয়েছিলেন ৷ আসলে পশ্চিমী দেশগুলির নিজেদের স্বার্থে এর চীনের বিশাল বাজার উন্মুক্ত করতে আগ্রহী ছিল ৷ তাই প্রথম ইঙ্গোচীন যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে ৷



নিজেদের শিল্প পণ্যের জন্য চীনের বাজারের সন্ধান করা চীনের প্রথাগত আইন ও বিচার ব্যবস্থা তাদের একদম পছন্দ ছিল না ৷ তাই বলা যায় আফিম ছিল উপলক্ষ মাত্র ৷ দুই ভিন্ন ধর্মীয় সভ্যতার সংঘাত ছিল অনিবার্য এর প্রকাশ ঘটেছিল প্রথম ইঙ্গ-চীন যুদ্ধে ৷



প্রথম ইঙ্গ-চিন যুদ্ধের বিভিন্ন পর্বের দিকে দৃষ্টি দিলে বোঝা যাবে আফিম ছিল একটি অজুহাত মাত্র ,যুদ্ধটি ছিল অনিবার্য ৷ আফিম ছাড়াও অন্যান্য যেকোনো কারণ কে কেন্দ্র করে এই যুদ্ধ ঘটতে পারতো ৷ আসলে ত্রিশের দশক থেকে চীন ব্যবসা বৃদ্ধি পেলে একদিকে যেমন দেশ থেকে প্রচুর অর্থ চলে যায় অন্যদিকে নেশাগ্রস্ত ও চিনা জাতির উৎপাদন ক্ষমতা হারালে, দেশের আর্থিক ক্ষতি হতে থাকে চীনা কর্তৃপক্ষ বারবার ইংরেজদের আফিম ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে ব্যর্থ হয় । কারণ ব্রিটিশ সরকার তাদের বণিকদের এই ধরনের কার্যকলাপের সমর্থন করত ৷ উপরন্তু তারা জনগণকে চীনের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান নির্দেশ দেয় ৷ কিন্তু তার এই উদ্যোগ সফল হয়নি ৷ এরপর থেকেই চিনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্রিটিশ বণিকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটতে দেখা যায় । ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজের চীনের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয় ৷ এমনকি চেনা কর্তৃপক্ষ আফিম বাণিজ্য বন্ধ করতে উদ্যোগ নেয় ৷



১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে চীন সম্রাট লিন-সে-শুকে ক্যান্টনে বিশেষ কমিশনার নিযুক্ত করেন ৷ তিনি আফিম ব্যবসা বন্ধ করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে বিদেশি দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে ও বিদেশি বণিকদের মজুদ আফিম তার হাতে তুলে দিতে বলেন এবং ভবিষ্যতে তারা আফিম ব্যবসা করবে না বলে তাদের স্বাক্ষর করতে বলে ৷ তিনি একুশ হাজার পেটি আফিম পুড়িয়ে দেন তখন লন্ডন ম্যানচেস্টারের বণিক গোষ্ঠী ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন ৷ এমনকি এই ব্রিটিশ জনমত এবং চীনের হস্তক্ষেপ এর পক্ষে রায় দেয় ৷ ইতিমধ্যে এক জনৈক ইংরেজ নাবিক এক চীনা গ্রামবাসীকে হত্যা করলে লিন ইংরেজ কর্তৃপক্ষকে ওই ব্যক্তিকে তার হাতে তুলে দিতে বলেন এতে ইংরেজ কর্তৃপক্ষ রাজি না হওয়ায় ব্রিটিশদের ম্যাকাও থেকে বিতাড়িত করা হয় ৷


১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে জুন থেকে ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম পর্বে ইংরেজরা যে দাবিগুলি নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন সেগুলি হল -

(১). নষ্ট করা আফিমের দাম ফেরত ৷

(২). কোহং প্রথার অবসান ৷

(৩). ইংরেজ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য একটি দ্বীপ প্রধান ৷



প্রথম পর্বের লীনের নেতৃত্বে চীনারা বীরত্ব সঙ্গে যুদ্ধ করেও পরাস্ত হয় ৷ তাদের দাবি মত লিনকে অপসারিত করা হয় ৷ ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা চীনা সম্রাটের সঙ্গে চুয়ান-পি-কনভেনশন স্বাক্ষর করেন ৷ কিন্তু উভয়পক্ষ এই কনভেনশন অস্বীকার করলে আবার যুদ্ধ শুরু হয় ৷ ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৪২ খ্রিস্টাব্দ শেষ পর্বে যুদ্ধে চীনারা চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত হয় এবং উভয়পক্ষ নানকিং সন্ধি স্বাক্ষর করে ৷


সুতরাং এই চুক্তির শর্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আফিম এই যুদ্ধের একমাত্র কারণ ছিল না ৷ নজরানা প্রথা, ক্যান্টন বাণিজ্যের শর্ত চিনাদের নিজ সভ্যতার প্রতি উচ্চ ধারণা এই সব কয়টি পাশ্চাত্য বণিক গোষ্ঠীর কাছে অপমানজনক বলে মনে হয়েছিল ৷ তারা একাতো ভাবে চেয়েছিলেন চীনের বাজার নিজের দেশের পণ্যের জন্য উন্মুক্ত করতে ৷ আফিম ছিল উপলক্ষ মাত্র অন্য যেকোনো কারণেই এই যুদ্ধ অনিবার্য ছিল ৷


প্রথম ইঙ্গ-চীন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চীন ব্রিটিশ স্বার্থে নানকিং সন্ধি স্বাক্ষর করে ৷ নানকিং সন্ধি পরিপূরক হিসাবে ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে বোগের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ৷ এই দুটি চুক্তির মাধ্যমে ক্যান্টন বাণিজ্য ও নজরানা প্রথার অবসান ঘটে ৷ হংকং ব্রিটিশ অধিকারভুক্ত হয় ৷ পাঁচটি বন্দর ব্রিটিশ বণিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ৷ ব্রিটিশরা চিনে অতিরাষ্ট্রিক অধিকার লাভ করে ৷ ইংল্যান্ডকে চিনে সর্বাধিক অনুগৃহীত দেশের মর্যাদা দেওয়া হয় । এরপর ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে ৩রা জুলাই চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ওয়াংশিয়ার সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ৷ ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে অক্টোবর চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে হোয়াম্পায়ার সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ৷ তবে এগুলি একত্রে প্রথম সন্ধি ব্যবস্থা নামে পরিচিত ৷



প্রথম সন্ধি ব্যবস্থার মাধ্যমে চীন একটি আধা উপনিবেশিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় ৷ প্রথম ইঙ্গ-চীন যুদ্ধের পরাজয়ের পর চীনের আফিমের চোরা চালান ব্যাপক বৃদ্ধি পায় ৷ ১৮৪০ এর দশকে আমদানিকৃত বার্ষিক ৩৭ হাজার পেটি আফিম ১৮৫০ এর দশকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৭০ হাজার পেটিতে ৷ স্বাভাবিকভাবে এই অর্থনৈতিক ক্ষতির সাথে সাথে চীন জনগণ নৈতিক অধঃপতন ও প্রকট হয়ে ওঠে ৷ বিদেশি বণিকদের কাছে চীনের পাঁচটি বন্ধুর উন্মুক্ত করার ফলে এবং চীন বিদেশি পণ্যের উপর বাণিজ্য শুল্ক হ্রাস করতে বাধ্য হলে চীনের বিদেশী দ্রব্য ভরে যায় ৷ চীনের বস্ত্র সুতি ও হস্তশিল্প পুরোপুরি ধ্বংসের সম্মুখীন হয় অর্থাৎ রাজনৈতিক ও সার্বভৌমত্বের সাথে সাথে চিন তার অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব হারায় ৷



About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟