প্রাচীন ভারতের চিত্রকলা সম্পর্কে আলোচনা করো।
প্রাচীন ভারতের চিত্রশিল্পের প্রকৃত নিদর্শন খুবই কম। কিন্তু সাহিত্যে ও উল্লেখ খুব কম নয়। এমনকী খ্রিস্টপূর্ব যুগের বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য সাহিত্যে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারতে রাজকুমারী ঊষার সখী চিত্রলেখাকে একজন নিপুণা প্রতিকৃত অঙ্কনশিল্পী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই গ্রন্থে একটি চিত্রিত গৃহের উল্লেখ আছে প্রসেনজিতের প্রমোদগৃহে চিত্রাগারের কথাও সেখানে আছে। প্রতিকৃতি অঙ্কন শিল্প এবং প্রাচীরের গাত্রে অঙ্কিত রঙিন চিত্র ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চিত্র যেমন লেখচিত্,ধূলিচিত্র, লেপ্যচিত্র ইত্যাদির উল্লেখ পাওয়া যায় ৷
লোচিত্র অনেকটা পরবর্তীকালে পটচিত্রের অনুরূপ। সে যুগের চিত্রশিল্প ধর্মীয় এবং এদিপেক্ষ দুই প্রকারেরই ছিল। অভিজাতগণ এবং সাধারণ মানুষ সকলেই এর চর্চা আন/সুরগুজা জেলার রামগড় পাহাড়ের গায়ে হলুদ এবং গৈরিক রঙে অঙ্কিত সারি মানুষের মূর্তিকে এই শিল্পের প্রাচীনতম নিদর্শন মনে করা হয়। প্রাচীরগাত্রে অঙ্কিত চরগুলি জীবন্ত এবং ছন্দময়, মূর্তিগুলি পরস্পরের সঙ্গে ছন্দময় এবং মূর্তিগুলি রপরো সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। রামগড় পাহাড়ের যোগীমারা গুহায় যে মনুষ্য চিত্রগুলি পাওয়া এই তাদের বৃতি এবং উত্তরীয়র সঙ্গে প্রথম যুগে সাঁচির রিলিফের পোশাকে বিশেষ লো আছে।
পরিণাত্যের অন্তর্গত কানহেরি, ঔরঙ্গাবাদ, বেদসা এবং পিতলখরার গুহাগুলিতে প্রেসিরের অস্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া গেছে, কিন্তু এই শিল্পের প্রকৃত নিদর্শন পাওয়া গেছে ৪. অজন্তা এবং বাদামির গুহাগুলিতে। এই গুহাগুলির দৃশ্যাবলির বিষয়বস্তু ধর্মীয় বা উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্যই রচিত হয়েছিল। কিন্তু তাদের অন্তনির্হিত অর্থ এবং ভাবগতি প্রকৃতি ধর্মনিরপেক্ষ তো বটেই এমনকী সৃষ্টাচারসম্মত এবং বাস্তবধর্মী। ধর্মীয় বিষয়বস্তু এয়ের মানসিক অবস্থার প্রকাশ এবং সৌন্দর্যের উৎঘাটনই এই শিল্পের প্রকৃত লক্ষ্য।
বৃত চিত্রকলার উল্লেখযোগ্য নিদর্শন অজন্তা গুহাচিত্র। অজন্তার মোট ৩০টি গুহাচিত্রের বাকী গুপ্তযুগের ও তার কিছু পরের চিত্রগুলির বিষয়বস্তু প্রধানত গৌতম বুদ্ধ, চিদয় ও জাতকের গল্প। এছাড়া গুহাচিত্রে স্থান পেয়েছে রাজপরিবারের সদস্যবর্গসহ তাসাদ, গোরু, অপ্সরা ইত্যাদির মতো পৌরাণিক ও কাল্পনিক বিষয়গুলি। এছাড়া শুপাখি, ফুল, কৃষক ও সন্ন্যাসীর চিত্র অজন্তার গুহাগাত্রে অঙ্কিত হয়েছে। অজন্তার প্রচিত্রের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বোধিসত্ত্ব অবলোতিকেশ্বরের চিত্রটি।
ধাঁর ডান হাতে শ্বেতপদ্ম ও মাথায় মণিমুক্তাখচিত মুকুট। তাঁর দৃষ্টি অবনত ও জেলে বেদনাহত। অজন্তার চিত্রে একটি ধর্মীয় ভাবনা পরিব্যাপ্ত থাকলেও পার্থিব ৩৬ মান করে নিয়েছে। শয়নের ভঙ্গিতে নারী, অশ্বপৃষ্ঠে রাজা, পরিত্যক্তা স্ত্রী, জিতের রাজপথে মগধরাজ ও গৌতমবুদ্ধ। পারসিক দূতের রাজদরবারে আগমন জন্য প্রভাব পড়েছিল। চিত্রগুলির অলংকরণ ও পরিকল্পনা ছিল উন্নতমানের। এক চিঠি চিত্র। এই এই দৃষ্টিভঙ্গির দৃষ্টান্ত মধ্যপ্রদেশের বাঘগুহার চিত্রাবলিতে অ অজন্তার শিল্প ইয়ে দিবে তরণীবৃন্দের নৃত্য, প্রেমিক-প্রেমিকা আলাপরত, কিছু পুরুষের অশ্বপৃষ্ঠে না। শরত্র, রন্দনরত রমণীদ্বয়। বাঘগুহায় এই চিত্রগুলি বাস্তব জীবনের সুখ-দুঃখের প্রতিবিম্ব।
গুহাচিত্র অঙ্কনের জন্য যে উপকরণ ব্যবহার করা হত তা হল কাদা-পাথরের গাঁয়ের ইত্যাদির সঙ্গে মেশানো ধানের তুষ। এগুলি দিয়ে গুহার দেওয়ালে এক পুরু আস্তরণ বানানো হত এবং তার ওপর দেওয়া হত পাতলা দুনের প্রলেপ। এটি ভিজে থাকতেই এর ওপর বিভিন্ন রং আলতোভাবে পালিশ করা হত। মোট ৬টি রং লক্ষ করা যায়-সাদ কালো, লাল, নীল, হলুদ ও সবুজ।
অজন্তার চিত্রশিল্পের চিহ্ন দাক্ষিণাত্যে বাদামি এবং ইলোরার গুহায় পাওয়া গেছে। আরও দক্ষিণে দেখা যায় তামিল অঞ্চলে সীতান্নবসালের জৈন মন্দিরের প্রাচীরগুলি। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাচীন চিত্রগাত্রেও এখানে পাওয়া গেছে। তবে গুপ্তযুগ সম্পর্কে বাদামির চিত্রশিল্পই প্রাসঙ্গিক। বাদামির চিত্রশিল্পকে ব্রাহ্মণ্য চিত্রের প্রথম নিদর্শন বলা চলে। এখানকার চিত্রসমূহের মধ্যে-শিব-পার্বতীর চিত্রটি উল্লেখযোগ্য এবং সুরক্ষিত। অজন্তার সঙ্গে প্রকরণগত মিল থাকলেও বাদামির চিত্র শিল্পরীতি অজন্তা থেকে ভিন্ন রকমের। বাদামির চিত্রের প্রকাশভঙ্গি অনেক বেশি স্পর্শযুক্ত। এর প্রান্তরেখা অনেক বেশি কোমল, সর্বোপরি এই চিত্রশিল্পে এমন একটি নিবিড় উন্নতা আছে যা অজন্তার শেষদিকের চিত্রগুলিতে পাওয়া যায় না।