মেইজি পুনস্থাপনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ কর? বা, মেইজি পুনরুদ্ধারের প্রকৃতি কীরূপ ছিল?
মেইজি পুনস্থাপনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ কর?
মেইজি পুনরুদ্ধার জাপানের জাতীয় জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনয়ন করলেও মেইজি পুনরুদ্ধারের প্রকৃতি ছিল রক্ষণশীল। জাপানের সকল শ্রেণীর মানুষের সঙ্ঘবন্ধ আন্দোলনের ফলে সোগান শাসনের অবসান ঘটে।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
সোগান বিরোধী এই আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন ডাইমো, সামুরাই, বণিক, কৃষক প্রভৃতি সকল শ্রেণীর মানুষ। কিন্তু আন্দোলনের সুফল সকলের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হয়নি। ১৮৬৭ খ্রিঃ জাপানের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে সাওসুমা, চোসু, তোজা ও হিজেন সামন্তশ্রেণীর নেতৃবৃন্দ প্রশাসনিক ক্ষমতালাভের আশায় সোগান-বিরোধী আন্দোলন শুরু করে এবং আন্দোলনের সাফল্যের পর সুযোগ-সুবিধার সিংহভাগ তারা লাভ করে।
নিজেদের যোগ্যতার বলে সামুরাইগণও শাসনতান্ত্রিক ব্যাপারে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে। প্রাক্-মেইজি যুগের শেষের দিকে বণিক সম্প্রদায় জাপানের সমাজে নিজেদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান লাভ করতে সমর্থ হয়। মেইজি যুগের ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণের সাথে সাথে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটে এবং তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষকশ্রেণীর অবস্থার বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি।
রক্ষণশীল জাপানের পুনরুদ্ধার যে রক্ষণশীল ছিল তার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হল যে জাপানে শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন হলেও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
সাওসুমা, চোসু তোজা ও হিজেন সরকার প্রশাসনে জনগণের অংশগ্রহণ সমর্থন কর্তেী সাওসুমা চোর, তেবিদগণ দেশে গণতান্ত্রিক সরকার নেকি আর করলেও সরকার তা পছন্দ করেনি। পুলিশি নির্যাতনের দ্বারা এই আন্দোলন করলেও সরকার কোনো দ্বিধাবোধ করেনি।
নাও এমনকি পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির সংবিধান সম্পর্কে প্রছন শুদ জাপানের নেতৃবর্গ সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত তারা সম্রাটের ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখার উদ্দেশ্যে নিয়ে নিজেদের দেশের সংবিধান রচনা করেন। এই সংবিধানের মূল লক্ষ্য ছিল সাওসুমা, চোসু, তোজা ও হিজেন প্রভৃতি সামন্তগোষ্ঠীর মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা সীমিত করা। সংবিধানের রূপরেখা স্থির করার সময়েই বলা হয় যে, 'রেস্টোরেশন' অংশগ্রহণকারীগণ যাতে বিশেষ রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারে সেটিকে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া হবে। ফলে জাপানে 'অলিগার্কি' প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রকৃতপক্ষে মেইজি সম্রাট দেশের আধুনিকীকরণে আগ্রহী থাকলেও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন না। তাই তাঁর প্রদত্ত ১৮৮৯ খ্রিঃ সংবিধান জাপানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেনি, প্রতিষ্ঠা করেছিল 'অলিগার্কি' অর্থাৎ সম্রাট কর্তৃক মনোনীত অল্পসংখার ব্যক্তিদের দ্বারা দেশ শাসনের ব্যবস্থা। অপরদিকে মেইজি যুগে জাপান পাশ্চাত্য সমাজ ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হলেও প্রাচ্য জগতের নীতিবোধ ত্যাগ করেনি। জাতীয় ধর্ম হিসাবে শিল্টো ধর্মই তারা গ্রহণ করে। মেইজি জাপান পাশ্চাত্য সভ্যতার বাহা অংশটুকু গ্রহণ করে, কিন্তু স্বকীয় কোনো বৈশিষ্ট্য ত্যাগ করেনি। ফলে জাপানী সভাতার বাহ্য আবরণে পশ্চিমী ছাপ পড়লেও অন্তরের অন্তঃস্থলের আবরণ থেকে ছিল ঐতিহ্যমণ্ডিত। প্রয়োজনের তাগিদেই জাপানী জাতিদেশের অর্থনৈতিক ও সামরিক অবস্থা যাতে উন্নতমানের হয় সেই উদ্দেশ্যে পশ্চিমের দ্বারস্থ হতে দ্বিধা বোধ না করলেও জাপান তার রক্ষণশীল ঐতিহ্য বিসর্জন দেয়নি।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
মেইজি পুনরুত্থান সম্পর্কিত আপনার সব প্রশ্নের উত্তরঃ
মেইজি পুনরুত্থান কী?
মেইজি পুনরুত্থান বা মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছিল ১৮৬৮ সালে জাপানে সংঘটিত একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক বিপ্লব, যার মাধ্যমে টোকুগাওয়া শোগুনদের পতন ঘটে এবং সম্রাট মেইজি আবার ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
মেইজি পুনরুত্থান কাকে বলে?
জাপানে সামন্ততান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে সম্রাটের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে মেইজি পুনরুত্থান বলা হয়।
মেইজি পুনরুদ্ধার কী?
মেইজি পুনরুদ্ধার অর্থাৎ পুনরায় সম্রাটের ক্ষমতা পুনঃস্থাপন এবং পশ্চিমা ধাঁচে সংস্কার ও আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া গ্রহণ।
মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট কী ছিল?
১৮৫৩ সালে আমেরিকান নৌ-অধিনায়ক পেরি জাপানে প্রবেশের পর শোগুনদের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবে আধুনিকীকরণ ও সম্রাটকে পুনঃক্ষমতায় বসানোর দাবি উঠে, যা মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পটভূমি তৈরি করে।
মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রকৃতি কেমন ছিল?
এটি ছিল এক ধরণের রক্তপাতহীন বিপ্লব যা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে জাপানকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করে । এটি সামন্ততন্ত্রের বিলুপ্তি, কেন্দ্রীয়করণ, শিল্পায়ন ও শিক্ষার প্রসার ঘটে।
মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রকৃতি pdf
পিডিএফ নিতে নিজে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করে আমাদের জিমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন
