ভারতীয় শিল্পকলায় নন্দলাল বসুর অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর
বিংশ শতকের বাঙালির চিত্রকলা চর্চার অন্যতম ছিলেন নন্দলাল বসু ৷ কলকাতা আর্ট স্কুলের কৃতি ছাত্র নন্দলাল শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ৷ শিক্ষা গ্রহণ পর্ব সমাপ্ত করার পর তিনি কিছুকাল 'ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট' বিচিত্র সংগ্রহ প্রভৃতির শিল্প বিদ্যালয় শিক্ষা কর্তা করেন ৷ এই সময়ে তার 'সতী' ছবিটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন ৷ অবশেষে ১৯২২ সালে তিনি রবি ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত 'কলাভবন' শিল্প বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দেন ৷ যেখানে শিক্ষা কর্তার পাশাপাশি চলে শিল্পচর্চা ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
নন্দলাল বসুর শিল্পচর্চার কয়েকটি বিশেষত লক্ষ্য করা যায় ৷ (১). অবনীন্দ্রনাথের শিল্পভাবনার দীক্ষিত হলেও নন্দলাল বসুর শিল্পকর্মের সক্রিয়তা ছিল ৷ (২). তার ছবিতে যেমন পুরানের প্রসঙ্গ এসেছে তেমনি উঠে এসেছে আশেপাশের মানুষ ও প্রকৃত ৷ (৩). স্বচ্ছ জলরঙের ওয়াশ পদ্ধতির পাশাপাশি টেম্পার কাজেও সিদ্ধহস্তও ছিলেন ৷ (৪). শিক্ষক হিসেবে তিনি প্রকৃত পর্যবেক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ৷
শিল্পগুরু নন্দলাল সারা জীবন ধরে অজস্র অসামান্য ছবি এঁকেছেন তার বিখ্যাত চিত্র গুলির মধ্যে 'সাবিত্রী ও যম',' হলাহাল পানরত শিব','গান্ধারী','সতী',' হরিপুরাটক' প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ৷ রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠের ছবিগুলি ও তার আঁকা ৷ ভারতীয় সংবিধানের সচিত্র অলংকরণ করেছিলেন নন্দলাল বসু । চিত্রশিল্প ছাড়া দেওয়াল চিত্র অঙ্কনের করেও তিনি যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ।
নন্দলাল বসুর শিল্পচর্চা অংকনে নানান প্রশংসা লাভ করেছিলেন ৷ নন্দলাল বসু আজীবন নানান পুরস্কার পেয়েছিলেন ৷ ভারতরত্ন ও পদ্মাবতী পুরস্কারের নকশা নন্দলাল বসুর অবগর অর্থ কৃতির ভগিনী নিবেদিতা ,রবীন্দ্রনাথ,অবনীন্দ্রনাথ এর গ্রন্থের অলংকরণ ছাড়াও তিনি 1909 খ্রিস্টাব্দে অজন্তা গুহাচিত্রের নকল করার উল্লেখযোগ্য কাজ করেন ৷ 'শিল্পচর্চা' ও 'রূপাবলি', তার দুটোই উল্লেখযোগ্য শিল্প গ্রন্থ ৷
শান্তিনিকেতনে যোগ দেওয়ার আগেই তিনি এঁকেছিলেন 'সিদ্ধিদাতা গণেশ',' সিদ্ধার্থ কর্ন',' জগাই মাধাই,নটরাজের তান্ডর,পার্থসারথি ইত্যাদি ছবি ৷ কলাভবনে যোগ দেওয়ার পরেও দিগন্ত বিস্তৃত পান্থর খেয়ায় মাঠে বিতরণ মোষ,নারী পুরুষ ,হাটযাত্রী ইত্যাদি ছিল তার ছবির বিষয় ৷ তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল 'গান্ধীজি ও রাঙ্গামাটির পথ অলংকরণ' ৷
পরিশেষে বলা যায় নন্দলাল বসুর শিল্পকর্মের প্রতিভার জন্য আমরা চোখ বন্ধ করে বলতে পারি চিত্রশিল্পী হিসাবে নন্দলাল বসুর অবদান বাঙালির মনে শ্রদ্ধার সঙ্গে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ৷ বিশ্ববরেণ্য চিত্রকর নন্দলাল বসু ১৯৬৬ সালের ১৬ এপ্রিল ৭৯ বছর বয়সে শান্তিনিকেতনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন ৷ বিংশ শতাব্দীর বাঙালির শিল্পকলা চর্চার অন্যতম পুরোধাপ্রসাদ প্রতীম চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসুর একজন কিংবদন্তী হিসাবে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে ।