গুপ্ত যুগের শিল্পকলা সম্পর্কে কি জানো

গুপ্ত যুগের শিল্পকলা সম্পর্কে কি জানো

 

 গুপ্ত যুগের শিল্পকলা সম্পর্কে কি জানো

গুপ্ত যুগের শিল্পকলা সম্পর্কে কি জানো

ভারতীয় শিল্পকলার ইতিহাসে গুপ্ত যুগকে ধ্রুপদী যুগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে ৷ খ্রিষ্ট্রীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত গুপ্তযুগের যে শিল্প নৈপুণ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তা থেকে এই ধারণা করা যায় যে ভারতীয় শিল্পকলার শৈশব অতিক্রম করেছে । এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা সমাপ্তির পর পরিপূর্ণতা বিকাশে লাভ করেছে ৷ এই পরিপূর্ণতা গুপ্ত যুগের শিল্পকলার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য স্থাপত্য ভাস্কর্য চিত্রকলা,ধাতু শিল্প প্রভৃতি কারুশিল্পে প্রতিটি ক্ষেত্রেই অপূর্ব সৌন্দর্য অচিন্তনীয় উৎকর্ষ এবং সজীবতা গুপ্ত শিল্পের সম্পদ ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

গুপ্ত স্থাপত্যের নিদর্শন বাহুল নয় । কারণ পরবর্তী মুসলমান আধিপত্যের সময়ে যথেষ্ট ভাবে ধ্বংসের ফলে স্থাপত্যের বহু আমুল সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে ৷ সামান্য নিদর্শন আছে তা থেকে গুপ্ত যুগের স্থাপত্য পদ্ধতি উৎকর্ষত প্রমাণিত হয় ৷ শিল্পীরা, শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট ধারার প্রবর্তন করেছিলেন এই যুগের ভাস্কর্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন দেব-মুর্তির গঠন ৷ বুদ্ধ এবং বিষ্ণু এবং শিব মূর্তিগুলো সুন্দর ও প্রাণবন্ত ৷ শুধু পাথরেই নয় ধাতু ও মূর্তি নির্মাণেরও শিল্পী নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন ভাস্কর্যের সঙ্গে সমভাবে উন্নতি লাভ করেছিল চিত্রকলা ৷

অজন্তার যে গুহাচিত্র গুলি আজও পৃথিবীর বিস্ময় তার অনেকগুলি সৃষ্টি গুপ্তযুগে স্থাপত্য শিল্পে এক নতুন যুগ আরম্ভ হয় ৷ অজন্তা ইলোরা বাঘগুহার নির্মাণের পাহাড় কেটে চৈত্র ও বিহারের তৈরীর কৌশল গুপ্ত যুগে আবিষ্কার হয় ৷ অজন্তার গুহাচিত্র গুলি আজও পৃথিবীর বিস্ময়রূপে স্থান দখল করে আছেন ৷

মধ্যপ্রদেশের বাঘ গুহার বিহারে নয়টি গ্রহ আছে এই বিহারে ভাস্কর্যমন্ডিত একটি বারান্দায় আছে । যা এই বিহারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ৷ বাঘ গুহার বারান্দার দেওয়ালে চিত্রসভা দেখা যায় । চিত্রশৈলী অনেকটা অজন্তা ধরনের এবং বিষয়বস্তু বুদ্ধের জীবন কাহিনী ৷ বাঘ হাতির শোভাযাত্রার দৃশ্য অতীব বিস্ময়কর ৷ গুহার ভেতরে ছাদ গুলিকে ধরে রাখার জন্য খোদাই করা থাম রাখা হয় ৷ উদাইগিরির রানী গুহাটি এখনো ভালো অবস্থায় আছে এবং এটি বৃহত্তম এই বিহারের স্থান যুক্ত বারান্দা আছে ।

গুপ্ত যুগের গুহা চিত্রের ন্যায় মন্দির স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন হিসেবে খ্যাতি লাভ করে ৷ মন্দির তৈরির জন্য পাহাড় ইট প্রভৃতির উপকরণের প্রথম ব্যবহার গুপ্ত মন্দির স্থাপত্য দেখা যায় ৷ মন্দির নির্মাণের জন্য স্থাপত্য শৈলী আবিষ্কৃত হয় মন্দিরের চত্বরে চতুর্দিকে প্রশস্ত উঠার ও প্রাচীর থাকত ৷ গুপ্ত যুগের সর্বপ্রথম মন্দিরের চূড়া উঁচু করে তৈরি করার চলন শুরু করা হয় । গুপ্তযুগের বিখ্যাত মন্দির ছিল দেওগড়ের দশাবতার মন্দির প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ৷ মন্দির স্থাপত্যের দ্রাবিড় রীতি ও নাগর রীতির প্রভাব লক্ষণীয় ৷

গুপ্তযুগের ভাস্কর্য ছিল অসাধারণ ৷ এই যুগের মথুরা ও অমরাবতীর ভাস্কর্যশৈলী একটি পরিণতিতে পৌঁছে যায় ৷ গুপ্ত শিল্পীদের সৃজনশক্তি মথুরা ও অমরাবতীকে এক অতীন্দীয় স্তরে পৌঁছে দেয় ৷ ডক্টর নিহারঞ্জন রায় গুপ্ত ভাস্কর্যের বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে দেখেছেন ৷ ডক্টর রায়ের মতে সারনাথের বুদ্ধমূর্তি অথবা গুপ্ত যুগের দেব দেবী মূর্তি গঠনের ভাস্কর্যের বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করা যায় ৷ গুপ্ত যুগের শিল্পীরা নানা ধরনের ভাস্কর্য শিল্পকে এক নতুন রূপ প্রদান করেন ৷

উপরিপ্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে গুপ্ত যুগের শিল্পকলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল স্থাপত্য,ভাস্কর্য, চিত্রকলা,ধাতব শিল্প প্রভৃতি ৷ অধুনা ডক্টর ভার্গর নামক প্রত্নতত্ত্ববিদ বলেছেন যে মেরোলির লৌহ স্তম্ভ ও কুতুব মিনার গুপ্তযুগেই তৈরি হয়েছিল ৷ এই মিনারটি মান মন্দির হিসাবে কাজ করতো । পরে সুলতানি যুগে কুতুব মিনার বলে নামকরণ করেন যদিও এই মত অধিকাংশ ঐতিহাসিক স্বীকার করেননি ৷ আলোচনা শেষে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে গুপ্ত যুগে শিল্প ছিল অভূতপূর্ব ৷ ঐতিহাসিক ভেনসন স্মিথ মন্তব্য করেছেন যে,"স্থাপত্য ভাস্কর্য ও শিল্পকলা এই তিনটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত শিল্প কলার অসাধারণ বিকাশ গুপ্ত যুগেই ঘটেছিল ৷"

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ গুপ্ত যুগের শিল্পকলা সম্পর্কে কি জানো এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟