লেখ্যাগার বলতে কী বোঝো? বা লেখ্যাগারের শ্রেণীবিভাগ কর

লেখ্যাগার বলতে কী বোঝো? বা লেখ্যাগারের শ্রেণীবিভাগ কর

 লেখ্যাগার বলতে কী বোঝো? বা লেখ্যাগারের শ্রেণীবিভাগ কর 

লেখ্যাগার বলতে কী বোঝো? বা লেখ্যাগারের শ্রেণীবিভাগ কর

লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা বা আর্কাইভ হলো ঐতিহাসিক নথি সমূহ সংরক্ষিত করে রাখার স্থান ৷ লেখ্যাগার যে সব প্রাথমিক নতি তার দ্বারা কোন ব্যক্তি বা সংস্থার সারাজীবন কর্মমূলক ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় ৷ পরবর্তীতে, লেখ্যাগারের রক্ষিত রেকর্ডগুলি সামাজিক, বাণিজ্যিক এবং প্রশাসনিক নথি হিসাবে ব্যবহৃত হয় ৷ যে ব্যক্তি মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারের দায়িত্ব থাকেন তাকে বলা হয় লেখ্যাগার তত্ত্বাবধক ৷ যে বিদ্যার মাধ্যমে লেখ্যাগারের নথি সংরক্ষিত এবং তথ্য প্রদানের পদ্ধতিতে জানা যায় তাকে লেখ্যাগার বিজ্ঞান বলা হয় ৷

ব্যুৎপত্তিগতভাবে আর্কাইভ কথাটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ 'আর্কিওন' থেকে এসেছে ৷ যার অর্থ হলো 'জনগণের নথি' বা 'নগর গৃহ' অথবা 'মুখ্য শাসকের অফিস' কিংবা 'বাসস্থান'৷ 'আর্কিওন' কথাটি ল্যাটিনে 'আরকিঅন' অথবা 'আর্কি ভাস' ফরাসিতে 'আর্কাইভ' বহুবচন এবং ইংরেজিতে 'আর্কাইভ' হিসাবে প্রচলিত হয় ৷ তৎকালীন সময় আরাকানের গৃহ বা অফিস কে বুঝাতো ৷ যেখানে সরকারি নথি আর্কনের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষিত থাকত ৷ বর্তমানে আর্কাইভ বা লেখ্যাগার শুধুমাত্র ঐতিহাসিক নথির মজুদ কক্ষেই নয়,এগুলি কেউ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাগারও বলা হয় ৷

বিভিন্ন সরকারি নথি সংরক্ষিত করে রাখার ভাবনা অতি প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত ৷ পুরাতত্ত্ববিদেরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে যেমন সিরিয়া,এবলা , মারিট,মিশরের আমার নাম প্রভৃতি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকেও হাজারেরও বেশি মৃৎফলক উদ্ধার করেন ৷ এই মাটির ফলক এই সময়ে লেখার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো ৷ সুমেরিয়ানরা এটির আবিস্কারক বোঞ্জ যুগ এবং মৃত্তিকা ফলকের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় । এই মৃত্তিকা ফলকের সংরক্ষণ করে রাখার ভাবনা থেকেই লেখ্যাগারের ভাবনার উৎপত্তি ৷ প্রাচীন চীন, গ্রিক এবং রোমের লেখ্যাগার গুলি খুবই উন্নত ছিল ৷ মৃত্তিকা ফলকের পর প্রাচীন কালের লেখ্যাগারের উপাদান হিসেবে চামড়া ও কাঠের বোর্ড এর ব্যবহার করত ৷ তবে চীন থেকে এবং রোমে পাপিলাসের উপর লেখা হতো ।

লেখ্যাগারের শ্রেণীবিভাগ কর

সংগ্রহশালা যেমন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ক্ষেত্র লেখ্যাগার কিন্তু তেমন নয় ৷ লেখ্যাগারগুলি মূলত গবেষক ঐতিহাসিক আইনঅজ্ঞ,চিত্ত পরিচালক প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ব্যবহার করেন ৷ গবেষণার কাজে লেখ্যাগারের সংগ্রহ পরিচালনা প্রভৃতির উপর নির্ভর করে লেখ্যাগার গুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় নিম্নে সেগুলি আলোচনা করা হলো ---

কেতাবি লেখ্যাগারঃ বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারের সাথে লেখ্যাগার আলাদা করে গড়ে ওঠে ৷ এই ধরনের লেখ্যাগার মূলত প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস প্রশাসনিক নথি প্রাক্তন অধ্যাপক ও গবেষকদের ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠান গবেষণা পত্র পুস্তক দুষ্পাক্ষ পান্ডুলিপি প্রভৃতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন উদাহরণ হিসেবে বলা যায় "স্ট্যান ফোর্ট ইউনিভার্সিটি" ৷

সরকারি লেখ্যাগারঃ

পৃথিবীর বেশিরভাগ লেখ্যাগার সরকার সরকারী সাহায্য প্রাপ্ত সংস্থার দ্বারা পরিচালিত হয় সরকারি লেখ্যাগারে সাধারণত তিন প্রকারের হতে পারে, যথা (১). কেন্দ্রীয় সরকারের লেখ্যাগার (ভারতের জাতীয় লেখ্যাগার) (২). রাজ্য সরকারি লেখ্যাগার (পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য লেখ্যাগার) ও (৩).প্রশাসনিক লেখ্যাগার (কলকাতা কর্পোরেশন আর্কাইভ) ৷

সরকারি লেখ্যাগারগুলিতে মূলত দেশের ঐতিহাসিক নথিক প্রশাসনিক নথি আইনগত নথি মানচিত্র বিভিন্ন নকশা পান্ডুলিপি ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকে ৷

বাণিজ্যিক লেখ্যাগারঃ

বাণিজ্যিক লেখ্যাগার সাধারণত অলাভ জনক লেখ্যাগার ৷ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মূলত তাদের সংস্থার ইতিহাস নথি ও বাণিজ্যিক নীতি সংরক্ষিত রাখে ভারতের প্রথম বাণিজ্যিক লেখ্যাগার হল পুনেতে অবস্থিত টাটা সেন্ট্রাল আর্কাইভ এর লেখ্যাগারে ১৫ লক্ষের বেশি বিভিন্ন ছবি ডিজিটাল নথি রয়েছে যা,টাটা কোম্পানির ইতিহাস এবং এই দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে কোম্পানির ভূমিকা উল্লেখ করে ৷

অলাভজনক লেখ্যাগারঃ

কোন ব্যক্তি বা কোন ব্যক্তিগত অলাভজনক সংস্থার দ্বারা কোন লেখ্যাগার গড়ে উঠে তখন তাকে অলাভজনক লেখা কার বললে অভিহিত করা হয়ে থাকে ৷ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সংস্কৃতি সোসাইটি এবং অলাভজনক বাণিজ্যিক সংস্থা যেমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এনজিও প্রভৃতির দ্বারা এই ধরনের লেখা গড়ে ওঠে ৷ এই লেখ্যাগারগুলি ব্যক্তিগত অথবা সরকারি অনুদানে পরিচালিত হয় ৷ এখানে মূলত নিজস্ব সংস্থা এবং তার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিগণের ঐতিহাসিক নথি এবং বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মের তথ্য সংরক্ষিত থাকে ৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আমেরিকার উইসকনসিস ইন্সটিটিকাল সোসাইটির লেখ্যাগার ।

চলচ্চিত্র লেখ্যাগারঃ

যদিও লেখ্যাগার বলতে আমরা মূলত পাণ্ডুলিপি এবং নথি সংগ্রহ বা সংরক্ষণ বুঝি ৷ কিন্তু বিভিন্ন চলচ্চিত্র সম্পর্কিত ফিল্ম যে লেখাগারে মজুদ রাখা হয় তাকে চলচ্চিত্র লেখ্যাগার বলা হয় । যেমন ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত "ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অফ ইন্ডিয়া" ৷

সংগীত লেখ্যাগারঃ

চলচ্চিত্রের মত বিভিন্ন সংগীতের রেকর্ড ক্যাসেট সিডি এবং সংগীতের সঙ্গে সম্পর্কিত বিচ্ছিন্ন নথি যে লেখাগারে সংরক্ষিত রাখা হয় সেই লেখ্যাগার সংগীত লেখাকার বলা হয় । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আর্কাইভ অফ ইন্ডিয়ান মিউজিক এর কথা ৷

ধর্মীয় লেখ্যাগারঃ

বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধর্মের সঙ্গে যুক্ত পুস্তক পান্ডুলিপি, নথি প্রভৃতি যখন কোন লেখ্যাগারে সংরক্ষিত করে রাখা হয় তখন তাকে ধর্মীয় লেখাকার বলা হয় ৷ পশ্চিমবঙ্গের বরানগর পাট বাড়িতে বিভিন্ন পান্ডুলিপি নিয়ে ছোট একটি লেখা রয়েছে ।

উপরীয়ক্ত লেখ্যাগার গুলি ছাড়াও আরো কয়েকটি লেখ্যাগার রয়েছে। যেমন ওয়েব লেখ্যাগার,ব্যক্তিগত লেখ্যাগার,সংবাদপত্র লেখ্যাগার প্রকৃতি ওয়েব লেখ্যাগার মূলত কম্পিউটারের সাহায্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তৈরি ৷ অনেক সময় ব্যক্তির নিজ উদ্যোগকে তার পরিবার তার ও তার পরিবারের বিভিন্ন ছবি নথি ও দলিল নিয়ে ব্যক্তিগত লেখ্যাগার গড়ে তোলে ৷ আবার বিভিন্ন সংবাদপত্রে দপ্তরে লেখা প্রতিদিনের সংবাদপত্র রাখা হয় ভবিষ্যতে যা বৃহৎ লেখ্যাগার পরিণত হয় ।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ লেখ্যাগার বলতে কী বোঝো? বা লেখ্যাগারের শ্রেণীবিভাগ কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟