মৌর্য যুগের শিল্পকলা বলতে কি বোঝো

মৌর্য যুগের শিল্পকলা বলতে কি বোঝো

মৌর্য যুগের শিল্পকলা বলতে কি বোঝো

মৌর্য যুগের শিল্পকলা বলতে কি বোঝো

মৌর্য যুগে মৌর্য রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় একাধিক শিল্পে নিদর্শন লক্ষ্য করা যায় ৷ মৌর্য রাজা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য,বিন্দুসার মহামতি অশোক সকলেই শিল্পের একান্ত অনুরাগী ছিলেন ৷ মৌর্য যুগের শিল্পের সম্পদ বলতে প্রধানত বোঝায় পাটলিপুত্রের রাজপ্রাসাদের ভগ্নাবশেষ । সারনাথের এক শিলাবেষ্ঠনি,বুদ্ধ গোয়ার, বোধিমন্ত,গোয়া জেলার বারাবার এবং নাগার্জুনের পাহাড়ের গুহাবাস গুলি, লেকযুক্ত এবং লেখরিক্ত স্তম্ভ গুলি ,স্তম্ভশীর্ষে জীবজন্তুর ভাস্কর এবং উড়িষ্যার ধোলি পাহাড়ে খোদাই করা হস্তি মূর্তির সম্মুখভাগ ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

শিল্প নিদর্শন গুলির কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য সহজেই চোখে পড়ে শিল্প গুলি নিদর্শন আয়তনে অতিবৃহৎ ৷ পাটলিপুত্রের প্রাসাদ বাদ দিলে অন্য শিল্পবস্তুগুলি সবই বৃহৎ আয়তন কঠিন ধূসর বর্ণশিলাখণ্ড দিয়ে তৈরি ৷ সবই সম্রাট অশোক এবং তার পৌত্র দশরথের ছত্রছায়াতলের রচিত হাওয়াই এই দুজন সম্রাট এ গুলির ওপর তাদের নিশ্চিত ছাপ রেখেছিলেন ৷

অশোক তার রাজ্য লাভের একত্রিশ তম বছরে এই স্তম্ভ গুলি স্থাপন করেন ৷ পূর্বের রাজগীর পশ্চিমে বৈশালী সাচি এবং উত্তরের দিল্লির মধ্যবর্তী ভূ ভাগে এই স্তম্ভ গুলি পাওয়া গেছে ৷ অশোকের আমলে স্তম্ভ গুলি মানুষের মনে যে সৌন্দর্য বোধ জাগ্রত করে , পরবর্তীকালের ভারতীয় শিল্পও তাকে অতিক্রম করতে পারেননি ৷ ডক্টর নীহারঞ্জন রায় বলেছেন যে," সমগ্র পৃথিবীর বৃহৎ আয়তন স্তম্ভের রাজ্যে মৌর্য যুগের এই স্তম্ভ গুলি একটি অতি গৌরবের স্থান অধিকার করে আছে ৷"

গ্রীক লেখক এ্যারিয়ান ও মেগাস্থিনিস তার লেখা 'ইন্ডিকা' গ্রন্থে মৌর্য শিল্পে নিদর্শন পাওয়া যায় ৷ মেগাস্থিনিস লিখেছেন যে ভারতের অধিবাসীরা শিল্পী অত্যন্ত দক্ষ ছিল ৷ মেগাস্থিনিস পাটলিপুত্র নগরীর প্রশংসা করেছে ৷ মৌর্য শিল্পকলার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে স্থাপত্যের কথাও উল্লেখ করে করা হয় ৷ বৌদ্ধ গ্রন্থ 'মহাবংশ' থেকে জানা যায় অশোক ৮৪ হাজার বৌদ্ধস্তূপ নির্মাণ করেছিলেন ৷ বর্তমান মধ্যপ্রদেশের সাচীর স্তুপটি মৌর্য শিল্পকলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ৷

স্তুপ ছাড়াও স্থাপত্যের পর্যায়ে পড়ে চৈত্রগৃহ ও গুহা গুলি ৷ অশোকের আমলে চৈত্র গৃহের ধ্বংসাবসা বিশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে সাচী ও সারনাতে ৷ এছাড়াও বিহারের গয়ার নিকটবর্তী চৈত্রগৃহ নির্মাণ করা হয়েছিল ৷ অধ্যাপক এস কে সরস্বতী মনে করেন যে চৈত গৃহগুলির পূর্ণাঙ্গ রূপের সঙ্গে খ্রিষ্টান চার্চের এক অদ্ভুত ধরনের সাদৃশ্য আছে , কেবল আকার গত ব্যবহার গত দিক থেকেও এই সাদৃশ্য বিদ্যমান ৷"

স্থাপত্য শিল্প ছাড়াও ভাস্কর্য অভাবনীয় বিকাশ ঘটেছিল মৌর্য যুগে ৷ ভাস্কর্যের অন্যতম নিদর্শন হল সম্রাট অশোকের আমলের স্তম্ভ গুলি ৷ প্রাপ্তির স্থানগুলি বিহারের চম্পারণ,এলাহাবাদ,উত্তর প্রদেশ প্রভৃতি জায়গায় পাওয়া গেছে ৷ অশোকের আমলে ভাস্কর্য শিল্প গুলি এক নতুনত্ব প্রদান করেছে ৷ ঐতিহাসিক নীরঞ্জন রায় বলেছেন যে,"অশোক স্তম্ভের পশু মূর্তিগুলিতে যে সূক্ষতম ও উচ্চাঙ্গের ভাস্কর্য শিল্প নিদর্শন ফুটে উঠেছে পৃথিবীর কোথাও পশু স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে তা লক্ষ্য করা যায় না ৷"

মৌর্য শিল্পকলার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পূর্বতন দীর্ঘ, অভ্যস্ত দুর্বল উপকরণের পরিবর্তে শিল্পসৃষ্টিতে স্থায়ী উপাদান হিসেবে পাথরের উল্লেখযোগ্য পরিমাণের ব্যবহার ৷ বশত মৌর্য যুগের শিল্পকলা নিঃসন্দেহে মৌর্য রাজ দরবারের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল ৷ মৌর্য সম্রাট অশোকের বিনয় নম্রতা তথা শান্ত মনোভাবের ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করেন ঐতিহাসিক নীরঞ্জন রায় ৷ ধোলিতে যে মূর্তিটি পাওয়া গেছে তা থেকে অশোকের অসাধারণ বাস্তববোধের লক্ষণ লক্ষ্য করা যায়, সারনাথের স্তম্ভ মঞ্চে হাতি,অশ্ব,বৃষ,সিংহ এই চারটি মূর্তির আবির্ভাবের ভঙ্গিমা থেকে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে এর মাধ্যমে অশোকের নমনীয়তা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে ৷ সুতরাং বুঝতে অসুবিধা হয় না যে অশোকের আমলে সৃষ্ট মৌর্য শিল্প ছিল দরবারী শিল্প ৷

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মৌর্য যুগের শিল্পকলা বলতে কি বোঝো এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟