ক্রিমিয়ার যুদ্ধের তাৎপর্য বা কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর অথবা, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা কর
ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ৷ ভিয়েনা সন্ধির দ্বারা ইউরোপের প্রায় 40 বছর যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ থাকার পর ১৮৫৩ সালে ইউরোপের বৃহৎ শক্তি গুলি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে লিপ্ত হয় ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
অতি সামান্য ও একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ৷ প্যালেস্টাইনের ধর্মস্থানগুলির উপর কর্তৃত্ব নিয়ে রোমান ক্যাথলিক ও গোড়া গ্রিক খ্রিস্টানদের মধ্যে বিরোধ বেধেছিল ৷ অনেককাল ধরে এই ধর্মস্থান গুলির ওপর গ্রিক খ্রিস্টানদের আধিপত্য ছিল ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ান তার ক্যাথলিক প্রজাদের খুশি করার জন্য এই ধর্মস্থান গুলির উপর কর্তৃত্ব দাবি করেন ৷ তুরস্কের সুলতান সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের অনুরোধ রক্ষা করে ধর্মস্থান গুলির ওপর অধিকার ক্যাথলিকদের হাতে সমর্পণ করেন ৷ এই ঘটনায় রাশিয়ার জার প্রথম নিকোলাস অত্যন্ত ক্ষুদ্র হন তিনি তুরস্কের সুলতানের কাছে ধর্মস্থান গুলির ওপর গ্রিক- খ্রিস্টানদের আধিপত্য ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান ৷ তুরস্কের সুলতান সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করলে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে ৷
ধর্মস্থানের পশ্চাৎ বৃহৎ শক্তি গুলির স্বার্থ সম্পর্কিত গভীর সমস্যা জড়িত ছিল এই স্বার্থের সংঘাতে যুদ্ধের সৃষ্টি ৷ রাশিয়ার জার নিকোলাস তার পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তুরস্কের অখণ্ড তার নীতি পরিত্যাগ করেছিলেন ৷ তিনি বলেন তুরস্ক ইউরোপের রোগগ্রস্ত ব্যক্তি তাই তুরস্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্তই জরুরী ৷ রাশিয়া দ্রুত মেনসিকফ ১৮৫৩ সালের মে মাসে তুরস্কের রাজধানী পরিত্যাগ করেন ৷ ১৮৫৩ সালের জুন মাসে রাশিয়ার সৈন্যবাহিনী দানিয়ুব অঞ্চলের ওয়ালচিয়া ও মোলডাভিয়া অধিকার করে, যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ৷ অস্ট্রিয়ার আগ্রহে ভিয়ানাতে একটি সম্মেলন আহত হয় ৷ কিন্তু তুরস্ক এবং রাশিয়া উভয়ী ভিয়েনা গৃহীত প্রস্তাব গ্রহণ করতে অস্বীকার করে ৷ 1853 সালে অক্টোবর মাসে তুরস্ক রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ।
জার নিকোলাস আশা করেছিল যে এই যুদ্ধ তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে তার সেই আশা নিষ্ফল হয় ৷ ব্রিটেন ও ফ্রান্স যুদ্ধের জন্য উদগ্রীব ছিল ৷ এই রকম পরিস্থিতিতে রাশিয়া তুরস্ক আক্রমণ করলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তুরস্কের সমর্থন করতে এগিয়ে আছে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে
প্যারিস সন্ধির শর্তাবলীঃ
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি ১৮৫৬ সালে প্যারিস সন্ধির দ্বারা ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটে প্যারিস সন্ধির শর্তাবলী গুলি হল,--
- প্রথমত, প্যারিসের শান্তি চুক্তিতে কৃষ্ণ সাগরকে নিরপেক্ষ অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয় তুরস্ক ও রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজের চলাচল বন্ধ করা হয়।
- দ্বিতীয়ত, রাশিয়া মোলডাভিয়া ওয়ালাচিয়া ও সার্বিয়ার উপর তার অভিভাবকত্ব ত্যাগ করেন ৷
- তৃতীয়তঃ দানিয়ুব নদীকে আন্তর্জাতিক নদীতে পরিণত করে সকলের ব্যবহারে সুযোগ করে দেয়
- চতুর্থত, বেসারভিয়া মোলডাভিয়াকে দান করা হয় ৷
- পঞ্চমত ,ইউরোপীয় রাষ্ট্রপুঞ্জ সমবেতভাবে তুরস্কের অখন্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় ৷
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের ফলাফল ও গুরুত্বঃ
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী সিনিয়র যুদ্ধের ফলাফল গুলি হল, -
- প্রথমত, ক্রিমিয়ার যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার অগ্রগতির সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়েছিল ৷
- দ্বিতীয়ত, তৃতীয় নেপোলিয়ান প্রিমিয়ার যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সামরিক ও কূটনৈতিক মর্যাদা লাভ করেছিল ৷
- তৃতীয়ত, যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড রাশিয়ার অগ্রগতিতে বাধা ধানের সমর্থ হয় রাশিয়া অস্ট্রিয়ার কাছে কোন সাহায্য পায়নি তাই পরবর্তীকালে অস্ট্রিয়া প্রার্শিয়া যুদ্ধের সময় রাশিয়া-অস্ট্রেলিয়া কে সাহায্য করেনি ৷
ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সম্ভবত ছিল অপ্রয়োজনীয় নিষ্ফল অর্থ ও সম্পদের অপচয় কারী ৷ তবে এর কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত ফল পাওয়া গিয়েছিল ৷ ভিয়েনা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যে ইউরোপীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল কিমিয়ার যুদ্ধ ও তার ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাত করেছিল ৷