মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের জন্য ঔরঙ্গজেবকে কীভাবে দায়ী করা যায়।
সম্রাট ঔরঙ্গজেবের হাত ধরে যেই মোগল সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তৃতি ঘটে, তেমনই তাঁর আমলেই মোগল সাম্রাজ্যের ভাঙন শুরু হয় । এই ভাঙন রোধ করার ক্ষমতা পরবর্তী মোগল সম্রাটদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে ।
ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে মোগল সাজাজ্যের সর্বাধিক বিস্তৃতি ঘটে । তাঁর মোট সুবায় সংখ্যা ছিল ২১ । এই বিশাল সাম্রাজ্যের শাসনভার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তাঁর থাকলেও পরবর্তী দুর্বলচেতা মোগল সম্রাটদের সেই ক্ষমতা ছিল না । এর ফলে প্রাদেশিক সুবেদারগণ স্বাধীন হয়ে পড়েন ।
দাক্ষিণাত্যে মারাঠা শক্তি ও অন্যান্য মুসলিম রাজ্যগুলিকে দমন করতে ঔরঙ্গজেব জীবনের শেষ ২৫টি বছর দাক্ষিণাতে অতিবাহিত করেন। কিন্তু তাতে সুফল কিছু হয়নি । এই নীতির ফলে ব্যয় হয় প্রস্তুত অর্থ ও সম্রাটের মূল্যবান সময় । এই সুযোগে উত্তর ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের আঞ্চলিক শক্তিগুলি বিদ্রোহ ঘোষণা করে ।
ঔরংজেব ছিলেন সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলমান । তিনি ভারতে ইসলামিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে গিয়ে অমুসলমান সম্প্রদায়ের ক্ষোভের সম্মুখীন হন । তিনি হিন্দুদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করেন ।বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেন হিন্দুকে জোর করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেন । শিয়াপন্থী মুসলমানরাও উরঙ্গজেবের কুনজরে পড়েছিল । তিনি তেগবাহাদুরকে হত্যা করে শিখজাতির বিভাগেভাজন হন ।
তিনি যেমন ছিলেন ধর্মাৎ, তেমনি ছিলেন সন্দেহপরায়ণ । তিনি জীবনে কাউকেই বিশ্বাস করেননি । নিজো পুজরাও ব্যাতিক্রম ছিলেন না। তাঁর চরিত্রের আর-এক দোষ ছিল নিষ্ঠুরতা । সেজন্য পিতা শাহজাহানকেও গৃহবন্ধি করে রাখতে তিনি পিছুপা হননি । আত্মহত্যা করাও তাঁর কাছে কোনো বাধাস্বরূপ ছিল না ।
ঔরঙ্গজেবের ব্যক্ষিগত যোগ্যতার দরুন তাঁর আমলে মোগল সাম্রাজ্যের ভাঙন সম্পূর্ণরূপে হয়নি ঠিকই কিন্তু এ কথা সত্য যে তাঁর জন্যই তাঁর রাজত্বকালে মোগল, সাম্রাজ্যের ভাঙনের বীজ রোপিত হয়।