টমাস হবসের রাষ্ট্রচিন্তার পরিচয় দাও?
ইউরোপে রাজনৈতিক চিন্তার বিবর্তনে যেসব চিন্তাবিদদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় আধুনিক ধারার উদ্ভব ঘটেছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন টমাস হবস। তিনি ব্যক্তি জীবনে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসের গৃহ শিক্ষক হলেও আধুনিক যুক্তিবাদী ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজ ও রাজনীতি আলোচনা করেছেন। রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে তিনি সামাজিক চুক্তি মতবাদের অন্যতম সার্থক প্রবক্তা হিসাবে সুপরিচিত হন। তার রচিত 'লেভিয়াথান' গ্রন্থে রাষ্ট্রচিন্তার বিশদ বিবরন আছে।
হবস বলেন যে সমাজ গড়ে ওঠার আগে মানুষ প্রকৃতির কোলে জীবন কাটাতো। কিন্তু প্রকৃতিব রাজ্যে মানুষ স্বার্থপর লোভী, আত্মকেন্দ্রিক। প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকত। বলবন দুর্বলদের পরাজিত করত। এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় মানুষ চুক্তির দ্বারা সমাজ গঠন করে।
যাবতীয় প্রাকৃতিক অধিকার সার্বভৌম শাসকের হাতে অর্পণ করল। হবসের মতে, মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের হাতে নিঃশর্তভাবে তাদের ক্ষমতা অর্পণ করেছে যার ফলে বৃহদায়তন শক্তিশালী ও সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। তার ধারণায় সার্বভৌম ক্ষমতা হলো মানুষের এমন এক চূড়ান্ত ক্ষমতা যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রের এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষা করেন।
রাজতন্ত্র অভিজাততন্ত্র এবং গণতন্ত্র এই তিন ধরনের রাষ্ট্র বা সরকারের মধ্যে হবস রাজতন্ত্রকে শ্রেষ্ঠ শাসন ব্যবস্থা বলে মনে করেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি রাজার নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম ক্ষমতাকে সমর্থন করেছেন।
হবসের চিন্তায় ব্যক্তি তার নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সদা সচেষ্ট। রাষ্ট্র ব্যক্তির জন্য সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তি রাষ্ট্রের জন্য নয়। ব্যক্তির নিরাপত্তা ও মঙ্গল সাধনই রাষ্ট্রের অন্যতম উদ্দেশ্য।
হবসের চিন্তাধারার দ্বারা পরবর্তীকালে মিল ও বেন্থাম প্রভাবিত হয়ে উপযোগবাদ নামে নতুন এক দর্শনের সৃষ্টি করেন। তাঁর রাষ্ট্র দর্শনে রাষ্ট্রশক্তির উদ্যোক্তা হিসাবে ঈশ্বরের বদলে মানুষকে স্থান দিয়ে রাষ্ট্রচিন্তার জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন।