টমাস ক্রমওয়েল টীকা লেখ।
ইংরেজ কূটনীতিবিদ সংস্কারক ও রাষ্ট্রচিন্তা বিশারদ টমাস ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম জীবনে সৈনিকের কাজ করলেও পরবর্তীতে আইন ও ব্যবসা করে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে রাজা অষ্টম হেনরি তাকে প্রিভি কাউন্সিলে নিযুক্ত করেন। পরে প্রধান সচিব ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। টমাস ক্রমওয়েলের পরামর্শে রাজা অষ্টম হেনরি ইংল্যান্ডে ধর্মীয় ক্ষেত্রে সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং পোপের অধীনতা থেকে মুক্ত করে ইংল্যান্ডে 'জাতীয় চার্চ 'প্রতিষ্ঠা করেন।
চার্চে রাজার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা-টমাস ক্রমওয়েল পার্লামেন্টের আইনের সহায়তায় ইংল্যান্ডের চার্চে পোপের প্রাধান্য বাতিল করে রাজার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেন। এর ফলে রাজা সর্বাধিক ক্ষমতার অধিকারী হন। চার্চের যাবতীয় সম্পত্তি রাজার হস্তগত হলে তার আর্থিক শক্তিও বৃদ্ধি পায়।
টমাস ক্রমওয়েল মুখ্য ধর্মীয় আধিকারিকের পদে নিযুক্ত হয়ে পার্লামেন্টে 1534 খ্রিস্টাব্দে"অ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসি" নামে একটি আইন পাস করেন। এর দ্বারা তিনি ইংল্যান্ডের সমস্ত চার্চকে রাজার নিয়ন্ত্রনে আনার উদ্যোগ নেন এবং ইংল্যান্ডের বড়ো মঠগুলির ওপর রাষ্ট্রীয় আধিপত্য কায়েম করেন তার সাথে সাথে ছোটো মঠগুলি বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
ইংল্যান্ডে চার্চের মত মঠগুলিরও বেশ আধিপত্য ছিল। অনেক ক্ষেত্রে তারা রাজার শাসন অগ্রাহ্য করত যা একটি জাতীয় রাষ্ট্রের পক্ষে ছিল ক্ষতিকারক এই চরম সত্য উপলব্ধি করে টমাস ক্রমওয়েল মঠগুলি ধ্বংসসাধনে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। এরফলে মঠগুলি রাজার নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ইংল্যান্ডের রাজার ক্ষমতা মর্যাদা ও আর্থিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়।
ক্রমওয়েল রাজতন্ত্রের সম্মান ও রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টকেও শক্তিশালী করে তোলেন। অর্থাৎ রাজা ও পার্লামেন্ট যে যুগ্মভাবে শাসন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে তিনিই প্রথম সেই ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন। এই পথ ধরেই অবশেষে ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দে গৌরবময় বিপ্লবের মাধ্যমে রাজতন্ত্র সেখানে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রে পরিণত হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক ইংল্যান্ডের শাসন কাঠামোর বিকাশে টমাস ক্রমওয়েল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার গৃহীত পদক্ষেপগুলি দ্বারাই ইংল্যান্ডে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।