আধুনিকতার জনক হিসেবে রামমোহন রায়ের ভূমিকা মূল্যায়ন কর Rammohan Roy as the Father of Modernity

 আধুনিকতার জনক হিসেবে রামমোহন রায়ের ভূমিকা মূল্যায়ন কর

আধুনিকতার জনক হিসেবে রামমোহন রায়ের ভূমিকা মূল্যায়ন কর

ভারতবর্ষে অন্ধকারাচ্ছন্ন কুসংস্কার ও সামাজিক স্তববিরতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রহেলিকাময় ভারতবর্ষে আধুনিকতা এবং যুক্তিবাদের প্রচার ঘটানোর ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজা রামমোহন রায় ৷ তার সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য আমরা যে সকল গ্রন্থাগুলির উপর নির্ভর করে থাকি তার মধ্যে অন্যতম হলো,'- রাজনারায়ণ বসুর সেকালে এ কাল এম এস বসু রচিত "ইন্ডিয়ান ওয়ার্কিং এন্ড বেঙ্গল", বিনয় ঘোষ প্রণীত বাংলার নব জাগ্রীত ৷





তামাশাচ্ছন্য ভারতকে নবভারতের দৃশ্যমান করে তোলে রামমোহন রায় ৷ তাই এই প্রসঙ্গে কবি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন," the first man of new reformable india." আচার্য ও রাজেন্দ্র নাথ রায়ের মতে রামমোহন রায় ছিলেন প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের শ্রেষ্ঠ গুণাবলীর সঠিক সমন্বয় সাধক ৷ রামমোহন রায় ভারতের প্রমিজউস নামে আখ্যায়িত হয়ে আছেন ৷ ধর্ম,শিক্ষা,সমাজ সংস্কারসহ একাধিক ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন কারী রামমোহন রায় ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণ বা বেঙ্গল রেনেসাঁস এর অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ৷ সেই কারণেই তিনি আধুনিক ভারতের জনক হিসাবে আখ্যায়িত হয়ে আছেন ৷ ঐতিহাসিক গোয়েল রামমোহন প্রসঙ্গে বলেন,"রামমোহন রায় লেট দা ফাউন্ডেশন অফ অল দ্যা প্রিন্সিপাল।"



তিনি ভারতে প্রচলিত ধর্ম,সমাজ, শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি সহ একাধিক ক্ষেত্রে নবায়নের সূত্রপাত করেন ৷ তিনি যে সময়ই আবিভূত হন তখন ধর্ম সামাজিক অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় হয়ে ওঠে ৷ ১৮২৮ সালে তার এক বন্ধুকে লিখেন রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে এবং সামাজিক অগ্রগতির জন্য ধর্মীয় ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আবশ্যক ৷ সেই কারণেই তিনি বলেন সামাজিক দিক দিয়ে পরিবর্তন আনতে গেলে ধর্মীয় দিক দিয়ে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন ৷ তাই ডক্টর অমিতাভ মুখোপাধ্যায় বলেন রামমোহন রায় ধর্মীয় সংস্কারের পেছনে প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক সংস্কার । "তুন্দফাৎ-উল মুহারিহিম নামক গ্রন্থে রামমোহন রায় লিখেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কথা অর্থাৎ একেশ্বরবাদ এর কথা ৷ সেই সঙ্গে তিনি একথাও উপলব্ধি করেন হিন্দু ধর্মের পুরোহিত সম্প্রদায় প্রকৃত সত্য করে আচার অনুষ্ঠানের বৈভবে ধর্মকে কুসংস্কারচ্ছন্ন করে তুলেছে ৷


প্রকৃত ধর্মকে জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থ গুলিকে সহজ সরল ভাষায় অনুবাদ করেন জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন । রামমোহন রায় ধর্মীয় উদারতা জনিত কারণে Religious penthanism"  বলে অভিহিত হয়ে আছেন । আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা ব্যতীত সামাজিক অগ্রগতি কোনোভাবেই সম্ভব নয় তাই লর্ড আর্মহাস্টকে সংস্কৃতের পরিবর্তনে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে সরকারি অর্থ ব্যয় এর অনুরোধ করে ৷ আধুনিক শিক্ষার প্রসারে তিনি একাধিক স্কুল কলেজ সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠন করে ডেভিড হেয়ারের সাহায্যে হিন্দু কলেজ, আলেকজান্ডার গ্রাফের সাহায্যে কটিজ চার্জ কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় ৷




রাজনৈতিক দর্শনে তিনি ছিলেন উদার এবং প্রকৃতিশীল ৷ সরকারি একাধিক জনবিরোধী নীতির তিনি ছিলেন তীব্র সমালোচক ৷ যুক্তির আলোকে তিনি দেখান ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেশের কৃষক কুলকে কতটা বিপদগ্রস্ত করছে ৷ ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে জুরি আইনের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেন ভারতীয়দের উচ্চপদে নিয়োগের দাবি জানিয়ে বিলেতে গিয়ে সরকারের এক স্কারক লিপি দেন । আধুনিকতার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো সংবাদপত্র , এক্ষেত্রে তার অবদান ছিল প্রশংসনীয় ৷ সংবাদ কৌমুদী সহ অন্যান্য সংবাদপত্রের মাধ্যমে তিনি সতী বিষয়ক বিষয়ের উপস্থাপন করেন ৷ পুরুষদের আর্থিক দুরবস্থার দূর করার জন্য তিনি রাজস্বের পরিমাণ হ্রাসের দাবি জানান ।



তবে যে ভূমিকাটির জন্য রামমোহন রায়ের বাংলা তথা ভারতবাসীর মননে রত্নমোচিত দেবালয়ে অক্ষয় হয়ে থাকবেন সেটি হলো সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ ৷ এই বর্বর প্রথাটি রামমোহন রায়কে ভীষণভাবে ব্যতীত করেছিল অশিক্ষিত গোড়া সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাকে অসাম লড়াই লড়তে হয়েছিল ৷ কিন্তু তার একান্ত প্রচেষ্টায় গর্ভনর জেনারেল ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ৪ঠা ডিসেম্বর ১৭ নম্বর রিগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথা কে বেআইনি ও ফৌজদারি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করেন ৷ অগণিত অসহায় নারী মুক্তি পাই ৷ ১৮২২ এ এক পুস্তক রচনা করে স্ত্রীজাতীর সামাজিক অধিকার, হিন্দু বিধবাদের সম্পত্তির অধিকার, নারী পুরুষের সমান অধিকার, বহুবিবাহের অবসান, জাতিভেদ প্রথার অবসান কল্পে তিনি আমরণ কাজ করে যান ৷ তবে সমালোচকরা বলেন রামমোহন রায় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই চালালে  পুরোপুরি সংস্কার মুক্ত ছিলেন না ৷ কারণ তিনি সারাজীবন উপবিত গ্রহণ করেছিলেন ৷ কিন্তু আসল ঘটনা হলো সমাজের মধ্যে থেকে তিনি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই চেয়েছিলেন ৷ তাই রামমোহন রায় প্রসঙ্গে আলোচনা শেষ করা যায় ডঃ বিপিন চন্দ্রের মন্তব্য দিয়ে,"রামমোহন রায় ওয়াজ দা ব্রাইটেজ টার ইন ইন্ডিয়ান স্কাই ডিউরিং ফাস্ট ১৯ সেঞ্চুরি হাফ ৷"


About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟