ভক্তিবাদী আন্দোলনে শ্রীচৈতন্য দেবের ভূমিকা লেখ?
মধ্যযুগীয় ভারতের ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশে ভক্তি আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। তিনি তার অনুগামীদের কাছে বিষ্ণুর অবতার রূপে পূজিত হন। তার প্রচারিত ধর্মমত গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম নামে পরিচিত। তার নেতৃত্বে বৈষ্ণব ভক্তি আন্দোলন বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সুগভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল।
শ্রীচৈতন্য অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রেম ও ভক্তির বাণী বিতরণ করেছিলেন। তিনি সমাজে বিদ্যমান জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং সকলের সমতার উপর জোর দেন। চৈতন্যদেব নারীর ধর্মাচরণের সমানাধিকারের পক্ষে সওয়াল করেন। তার সময়ে সমাজে বাঙালি মেয়েদের সামাজিক এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়।
শ্রীচৈতন্যদেব কীর্তনকে ভুক্তি আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে প্রচার করেন। কীর্তন হলো ঈশ্বরের নাম গান ও নৃত্য। এই কীর্তনগানের মাধ্যমে ভক্তিবাদ প্রচারের ফলে বাংলায় কীর্তনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
শ্রীচৈতন্যদেব সহজ সরল বাংলা ভাষায় তাঁর ভক্তি বাদের প্রচার করেন। তাঁর ভাবধরার প্রভাবে'চৈতন্য চরিতামৃত 'এবং' চৈতন্য ভাগবত' ইত্যাদি বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়। ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটে।
সতরাং পরিশেষে বলা যায় যে মধ্যযুগে পূর্ব ভারত তথা বাংলার জনজীবনে শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব ভক্তিবাদী আন্দোলন সর্বক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছিল। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মতে" চৈতন্যদেব ছিলেন একজন অবতার, তিনি ভারতের ভক্তি আন্দোলনের নবজাগরণ ঘটিয়েছিলেন।"