১৯৩০ এবং ১৯৪০-এর দশকে জাপানে সমরবাদের উদ্ভবের ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করো। এই সমরনায়কদের শাসনের ফলাফল কী ছিল? Briefly discuss the history of the rise of militarism in Japan between 1930-40

১৯৩০ এবং ১৯৪০-এর দশকে জাপানে সমরবাদের উদ্ভবের ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করো। এই সমরনায়কদের শাসনের ফলাফল কী ছিল?

 ১৯৩০ এবং ১৯৪০-এর দশকে জাপানে সমরবাদের উদ্ভবের ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করো। এই সমরনায়কদের শাসনের ফলাফল কী ছিল?



সমরনায়কদের উত্থানের উপাদানঃ ১৯১২ খ্রিঃ চিনের প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে সমরনায়ক যুয়ান-শি-কাই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। প্রজাতন্ত্রের সমর্থনে শপথ গ্রহণ করলেও মুয়ান শি-কাই-এর প্রজাতন্ত্রী শাসনব্যবস্থার কোনো আস্থা ছিল না। সমরকুশল নায়ক হিসাবে মুয়ান-শি-কাই সুপরিচিত ছিলেন। স্বাভাবিক কারণেই একনায়কতন্ত্রের তাঁর প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং তিনি রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য তৎপর হন। ক্ষেত্র প্রস্তুতি হিসাবে তিনি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মচারীদের নিযুক্ত করতে শুরু করেন। প্রদেশ-সমূহের শাসনভার তাঁরই বংশবদ সামরিক নেতাদের উপর অর্পিত হয়। রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলেও য়ুয়ান শি-কাই এইভাবে দেশে সামরিক শাসন প্রবর্তনের ব্যবস্থা করেন।


পিকিং-এর কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা স্বয়ং সমরনায়ক য়ুয়ান শি-কাই দৃঢ় হস্তে পরিচালনা করতে শুরু করেন। প্রদেশগুলিও সমরনায়কদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। যতদিন ঘুয়ান শি-কাই জীবিত ছিলেন ততদিন তিনি প্রদেশগুলির সামরিক কর্তাদিগকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। ১৯১৬ খ্রিঃ তাঁর অকাল মৃত্যুর পর প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ পিকিং-এর প্রতি আনুগত্য অস্বীকার করে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ প্রদেশে শাসনকার্য পরিচালনা করতে শুরু করেন। এই সকল প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণই সকলেই সামরিক শ্রেণীভুক্ত হওয়ায় যুয়ান শি-কাই -এর মৃত্যুর পর দেশে সমর-শাসকদের যুগ প্রবর্তিত


হয়। এই যুগের স্থায়িত্বকাল সাধারণ হিসাবে ১৯১৬-২৮ খ্রিঃ পর্যন্ত। তবে একথা ঠিক যে সমর শাসনের যুগ শুরু হয় ১৯১২ খ্রিঃ থেকে। অর্থাৎ মুয়ান শি-কাই-এর রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকে। মুয়ান শি-কাই সমর শাসকদের জনক নামে পরিচিত। দেশে প্রাচীন ঐতিহ্যভিত্তিক শাসনব্যবস্থা ভেঙে গেলে তিনিই সর্বপ্রথম সামরিক পদ্ধতিতে দেশ শাসনের উপযুক্ত শাসক-সম্প্রদায় গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তাঁর পদ্ধতি ছিল সন্ত্রাস সৃষ্টির পদ্ধতি, উৎকোচকের মাধ্যমে শত্রুকে বশীভূত করার পদ্ধতি। তিনি এই মতের সমর্থক নন।


কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানুষ অস্ত্রশস্ত্রকে ভয় করে কিন্তু আর্থিক সম্পদকে ভালোবাসে। তিনি রাষ্ট্র পরিচালিত কোনো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি। তাঁর নিকট কনফুসীয় নীতিধর্মের বিশেষ কোনো মূল্য ছিল না। সরকারি চাকুরি থেকে তাঁর সাময়িক পদচ্যুতি রাষ্ট্রের প্রতি তাঁর আনুগত্য আরও শিথিল করে। দলগত শাসনব্যবস্থার উপরেও তাঁর কোনো আস্থা ছিল না। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রাচীন ব্যবস্থায় আস্থাহীনতা এবং আধুনিকতায় সন্দিগ্ধতা তাঁর মনে এক শূন্যতার সৃষ্টি করে।


ফলে তিনি নীতিধর্ম বিসর্জন দিয়ে কেবল মাত্র সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাসীন হওয়ার চেষ্টা করেন। পরিণামে দেশ সামরিক শ্রেণীর শাসনাধীন হয়ে পড়ে। ঘুয়ান শি-কাই-এর জীবিতকালে তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাবে বিশৃঙ্খলার মধ্যেও কিছুটা শৃঙ্খলা বজায় ছিল। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর দেশে সামরিক প্রশাসকদের পারস্পরিক স্বার্থ ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায়। যার ফলে রাষ্ট্রীয় জীবন বিশৃঙ্খলা হয়ে পড়ে।


সমরনায়কদের শাসনের ফলাফলঃ ১৯১২ খ্রিঃ য়ুয়ান শি-কাই রাষ্ট্রপতি পদে


নিযুক্ত হওয়ার পরেই চিনে সমরনায়কদের শাসনের সূচনা হয় এবং ১৯২৮ খ্রিঃ পর্যন্ত এই শাসনব্যবস্থা চালু ছিল। সমরনায়কদের ক্ষমতার উৎস ছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু সমরনায়কদের পশ্চাতে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। সেজন্য তাঁরা সুস্থ ও সুসংগঠিত প্রশাসন প্রবর্তনে ব্যর্থ হন। ফলে তাঁদের নেতৃত্বে চীনের প্রশাসনে অবনতি ঘটে, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বৃদ্ধি পায় এবং সমাজজীবন দূর্নীতিপরায়ণ হয়। লুণ্ঠন এবং অতিরিক্ত কর আদায়ের ফলে চিনের সাধারণ মানুষ উৎপীড়িত হয়। তাছাড়া মুদ্রার মূল্যহ্রাস, ব্যবসায়ে মন্দা, রেলপথ নির্মাণ, বন্যানিয়ন্ত্রণ, পূর্তকার্য প্রভৃতি জনকল্যানমূলক কর্মসূচী অবহেলিত হতে শুরু করলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিঘ্নিত হয়।


সমর শাসনের অপর একটি কুফল হল আফিম উৎপাদনের পুনরুজ্জীবন। চিং সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে ১৯১৭ খ্রিঃ শেষের দিকে আফিম আমদানি ও সেবন বন্ধ হয়। কিন্তু সমরশাসকগণ জাতীয় জীবনের অভিশাপ স্বরূপ আফিম উৎপাদন পুনরুজ্জীবিত করে তোলেন। আফিম গাছ চাষের উপযোগী জমির ওপর অতিরিক্ত কর ধার্য করে তাঁরা সুকৌশলে কৃষকগণকে এইসব জমিতে আফিম উৎপাদন করতে বাধ্য করেন। 


সমরশাসনের সুফল হিসাব উল্লেখযোগ্য যে, সে যুগের দুর্নীতি ও অত্যাচার দেশপ্রেমিক যুবকদের মনে গভীর রেখাপাত করে। ভবিষ্যতে অনুরূপ দূর্নীতি পরবর্তী যুগে যাতে পুনরাবির্ভাব না ঘটে সেজন্য এই সব তরুণগণ ব্যবস্থা হিসাবে বিপ্লবের পথ ধরতে বদ্ধপরিকর হন। অপরদিকে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শক্তির অভাবে দেশের ঐকা বিনষ্ট রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে তৎপর হন। সমরনায়কদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতার সর্বপ্রথম বলি হয় দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা। সমগ্র দেশ প্রকৃত অর্থেই অন্তর্দ্বন্দ্বের একটি সেনা শিবিরে পরিণত হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে সমরশাসকদের যুগকে চরম বিশৃঙ্খলার যুগ বলা চলে।


কিন্তু এই যুগের সৃজনশীল রূপটিকেও বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় এবং যুদ্ধোত্তরকালে পাশ্চাত্য দেশগুলি থেকে চিনে আমদানি হ্রাস পায়। ফলে শহরাঞ্চলে দেশীয় শিল্পোৎপাদনের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। নতুন নতুন বহু কলকারখানা গড়ে ওঠে এবং বেকার সমস্যাও বহুলাংশে দূর হয়। গ্রামাঞ্চলের বহু লোক শহরে এসে জীবিকা অর্জন করার নতুন পথ খুঁজে পায়।


বিদেশী বণিকদের সাথে জড়িত কম্পাডোর নামে চীনা প্রতিনিধিদের অভ্যুদয় ঘটে এবং তাদের প্রচেষ্টায় চীনের শিল্প ও বানিজ্য দ্রুত উন্নতি সাধন করতে সমর্থ হয়। আধুনিক ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা এই সময়েই চীনে প্রবর্তিত হয় এবং চীনা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ গ্রহণের পদ্ধতিও অনেক সহজতর হয়ে ওঠে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সমরশাসকদের আমল বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে।


About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟