মুঘল যুগে ভারতের জমিদার কারা ছিলেন আলোচনা কর Who were the landlords of India during the Mughal era?

মুঘল যুগে এ ভারতের জমিদার কারা ছিলেন আলোচনা কর

 মুঘল যুগে ভারতের জমিদার কারা ছিলেন আলোচনা কর

মুঘল যুগে এ ভারতের জমিদার কারা ছিলেন আলোচনা কর

মুঘল যুগে রাজস্ব ব্যবস্থার মূল ভিত্তি ছিল জমিদারি সংগঠন । যে ব্যাক্তি নির্দিষ্ট হারে পেসকাশ বা রাজস্ব প্রদান করে জমি ভোগ করতেন তাদের জমিদার বলা হতো ৷ তেমনি যে ব্যক্তি তার সরকারি পদমর্যাদা ও কর্তব্যের বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসাবে জায়গির জমি ভোগ করত তাকেও জমিদার বলা হত । আবার রাজার আদেশে যে ব্যক্তি পদমর্যাদার পাশাপাশি কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের জমিত্ব পেতেন তাকেও জমিদারি বলা হত । এমনকি তালুকদার শ্রেণীভুক্ত ব্যক্তিরা ও জমিদার শ্রেণীভুক্ত ছিল ৷ নির্দিষ্ট রাজস্ব প্রদানের সত্বেও এক বা একাধিক গ্রামের সমন্বয়ে একটি জমিদারি এলাকা সংঘটিত হতে পারতো ৷ আবার একাধিক গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত কোনো জমিদারের উপর এক বা একাধিক ব্যক্তি মালিকানার শর্ত থাকতো ৷ গবেষক মুখলিস লিখেছেন," আক্ষরিক অর্থে জমিদার হলেন সেই ব্যক্তি যিনি জমির অধিকারী ৷"



জমিদার সেই ব্যক্তি যিনি একই সাথে জমির মালিক আবার অন্যের স্বত্তাধীন জমির উপর কিছু কিছু অধিকার ভোগ করত ৷ জমিদার হলেন কৃষকদের থেকে স্বতন্ত্র একটি শ্রেণী যারা কৃষকের উপর তাদের অবস্থান এবং কৃষকদের কাছে তাদের বিশেষ দাবিগুলি আদায় করেন ৷ ডক্টর এ.এন.এ.সিদ্দিকী লিখেছেন সরকার জমিদার সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হত জমিদারদের দ্বিবিধ সত্তার ভিত্তিতে ৷ একদিকে তিনি লিখেছেন ভূমি সত্বভোগী প্রজা এবং অন্যদিকে তিনি লিখেছেন মধ্যস্বত্তভোগী ৷ এই দ্বিতীয় ভূমিকাই তাদের দায়িত্ব ছিল সরকারি কর্মচারীর রাজস্ব নির্ধারিত রাজস্ব সংগ্রহ এবং জমিতে যথাযথভাবে উৎপাদন কার্য যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা । প্রবল প্রতাপশালী স্বাধীন সামন্ত সত্বার থেকে শুরু করে অত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে মধ্যসত্বাগুলি নানাস্তরে মানুষ জমিদার নামে অভিহিত হতো । রাজকীয় প্রশাসনের সাথে জায়গিরদারদের মতই জমিদারদের সম্পর্কে স্বার্থ যোগ ছিল ৷ জমিদারি ব্যবস্থা সংঘটিত হবার সঙ্গে সঙ্গে সরকার এই গ্রামীণ অভিজাত শ্রেণীর মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন ।


জমিদারদের অধিকৃত এলাকার জায়গির বা খালিশা জমি থেকে একেবারে আলাদা কিছু ছিল না । জায়গির ও খালিসা জমির মধ্যে প্রভেদ ছিল রাজস্ব বন্টন ব্যবস্থার ৷ কোন কর্মচারী তার বেতনের পরিবর্তে যে জমি ভোগ করতো তাকে বলা হতো জায়গির জমি আর যে জমি রাজস্ব সম্রাটের কোষাগারে জমা পরতো তাকে বলা হতো খালিসা ৷ উভয় ক্ষেত্রেই জমির অধিকারভুক্ত থাকত জমিদার বংশানুক্রমিকভাবে জমি ভোগ করতে পারত ইচ্ছা করলেই জমিদারি বিক্রি বা হস্তান্তরিত করতে পারতো । কিন্তু জায়গীর জমির উপর জায়গীরদারদের কোন বংশানুক্রমিক ছিল না কিংবা সে জায়গীর হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারত না ৷ জমিদার কোন নির্দিষ্ট অপরাধ বা ব্যর্থতা যেমন রাজস্বের প্রদানের ব্যর্থ হওয়া, অপরাধমূলক কর্মে জড়িয়ে পড়া বা বিদ্রোহ ঘোষণা না করলেই তার জমিদারির অধিকার কেড়ে নেওয়া যেত না ৷ মুঘল আমলে জমিদারি ব্যবস্থার উপর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল জমিদারদের বিশেষ শক্তি অর্জন ৷ জমিদারদের এই শক্তির উৎস ছিল তাদের অধীনস্থ সশস্ত্র সৈন্য এবং দুর্গ ৷ জমিদার শ্রেণি বিশেষ প্রতিপত্তিশালী ছিলেন ৷ অধ্যাপক নুরুল হাসান লিখেছেন মুঘল সাম্রাজ্য কে যে সকল প্রশাসনিক সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়েছিল তার অধিকাংশই ছিল জমিদারদের সৃষ্ট ৷ কিন্তু একই সঙ্গে তাদের সমর্থনের উপরের প্রশাসনকে বেশি নির্ভর করতে হতো ।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟