শাহজাহানের রাজত্বকালকে মোগল স্থাপত্য শিল্পের স্বর্ণযুগ বলা হয় কেন?
স্থাপত্য ক্ষেত্রে মোগল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকাল ছিল চরম উৎকর্ষর পরিচায়ক । শাহজাহানের স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এই যে, তিনি স্থাপত্যশিল্পের ক্ষেত্রে তাঁর পূর্বসূরীদের মতো লাল পাথর ব্যবহার না-করে শ্বেত পাথরের ব্যবহার শুরু করেন।
পত্নী মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তিনি সৃষ্টি করেন তাজমহল নামক স্মৃতিসৌধটি । শ্বেতপাথরের তৈরি এই মর্মর সৌধটি আজও বিশ্ববাসীকে বিমুখ করে। তাই পণ্ডিতগণ একে 'শ্বেতপাথরের স্বপ্ন' বলে অভিহিত করেন । এর রূপকার ছিলেন পারস্যের শিল্পী ইশা খাঁ।
শাহজাহানের স্থাপত্য-ভাস্কর্যের অনবদ্য নমুনা হল ময়ূর সিংহাসন। ময়ূর সিংহাসন নির্মাণে মোগল সম্রাট শাহজাহানের কল্পনার যে প্রতিফলন ঘটেছে তাতে তার দুর্নিবার শিল্পানুরাগেরই প্রমাণ পাওয়া যায় । মণি, মুক্তা, হিরে, জহরত-খচিত এই সিংহাসনটি নির্মাণ করতে সেযুগে ব্যয় হয় প্রায় এক কোটি টাকা এবং তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় সাত বছর। এটি তৈরি করেন পারস্যের শিল্পী বেবাদল খাঁ। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, ময়ূর সিংহাসন এখন আর ভারতে নেই। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে নাদির শাহ ভারত লুঠ করে অন্যান্য ধনরত্নের সঙ্গে ময়ূর সিংহাসনটি নিয়ে যান।
শাহজাহানের জাঁকজমকতা ও শিল্পবোধের অপর একটি পরিচয় হল তাঁর কোহিনুর মণি ৷ এই বহুমূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য হিরেটি সম্রাটের মুকুটে শোভা পেত ৷ তাঁর আমলে সৃষ্ট অন্যান্য স্থাপত্যকর্মগুলির তালিকায় ছিল লালকেল্লা, মোতি মসজিদ, খাসমহল, শিশমহল, জামা মসজিদ, দেওয়ান-ই-খাস, দেওয়ান-ই-আম ইত্যাদি
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলা যায় যে, বাবর মোগল সাম্রাজের প্রতিষ্ঠা করলেও শাহজাহান স্থাপত্যশিল্পের প্রতিষ্ঠা করে তার রাজত্বকালকে স্বর্ণযুগে পরিণত করে।