বিংশ শতকের প্রথমদিকে সমরনায়কদের উত্থানের উপাদানগুলি বর্ণনা করো।
১৯১২ খ্রিঃ চিনের প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে সমরনায়ক হুয়ান-শি-কাই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। প্রজাতন্ত্রের সমর্থনে শপথ গ্রহণ করলেও মুয়ান শি-কাই-এর প্রজাতন্ত্রী শাসনব্যবস্থার কোনো আস্থা ছিল না। সমরকুশল নায়ক হিসাবে য়ুয়ান-শি-কাই সুপরিচিত ছিলেন। স্বাভাবিক কারণেই একনায়কতন্ত্রের তাঁর প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং তিনি রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য তৎপর হন। ক্ষেত্র প্রস্তুতি হিসাবে তিনি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মচারীদের নিযুক্ত করতে শুরু করেন। প্রদেশ-সমূহের শাসনভার তাঁরই বংশবদ সামরিক নেতাদের উপর অর্পিত হয়। রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলেও মুয়ান শি-কাই এইভাবে দেশে সামরিক শাসন প্রবর্তনের ব্যবস্থা করেন।
পিকিং-এর কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা স্বয়ং সমরনায়ক যুয়ান শি-কাই দৃঢ় হজে পরিচালনা করতে শুরু করেন। প্রদেশগুলিও সমরনায়কদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। যতদিন ঘুয়ান শি-কাই জীবিত ছিলেন ততদিন তিনি প্রদেশগুলির সামরিক কর্তাদিগকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। ১৯১৬ খ্রিঃ তাঁর অকাল মৃত্যুর পর প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ দিকিং-এর প্রতি আনুগত্য অস্বীকার করে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ প্রদেশে শাসনকার্য পরিচালনা করতে শুরু করেন। এই সকল প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণই সকলেই সামরিক শ্রেণীভুক্ত হওয়ায় ঘুয়ান শি-কাই -এর মৃত্যুর পর দেশে সমর-শাসকদের যুগ প্রবর্তিত হয়।
এই যুগের স্থায়িত্বকাল সাধারণ হিসাবে ১৯১৬-২৮ খ্রিঃ পর্যন্ত। তবে একথা ঠিক যে সমর শাসনের যুগ শুরু হয় ১৯১২ খ্রিঃ থেকে। অর্থাৎ যুয়ান শি-কাই-এর রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকে। মুয়ান শি-কাই সমর শাসকদের জনক নামে পরিচিত। দেশে প্রাচীন ঐতিহ্যভিত্তিক শাসনব্যবস্থা ভেঙে গেলে তিনিই সর্বপ্রথম গামরিক পদ্ধতিতে দেশ শাসনের উপযুক্ত শাসক-সম্প্রদায় গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তাঁর পদ্ধতি ছিল সন্ত্রাস সৃষ্টির পদ্ধতি, উৎকোচকের মাধ্যমে শত্রুকে বশীভূত করার পদ্ধতি। তিনি এই মতের সমর্থক নন।
কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানুষ অস্ত্রশস্ত্রকে ভয় করে কিন্তু আর্থিক সম্পদকে ভালোবাসে। তিনি রাষ্ট্র পরিচালিত কোনো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি। তাঁর নিকট কনফুসীয় নীতিধর্মের বিশেষ কোনো মূল্য ছিল না। সরকারি চাকুরি থেকে তাঁর সাময়িক পদচ্যুতি রাষ্ট্রের প্রতি তাঁর আনুগত্য আরও শিথিল করে। দলগত শাসনব্যবস্থার উপরেও তাঁর কোনো আস্থা ছিল না। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রাচীন বাবস্থায় আস্থাহীনতা এবং আধুনিকতায় সন্দিগ্ধতা তাঁর মনে এক শূন্যতার সৃষ্টি করে।
ফলে তিনি নীতিধর্ম বিসর্জন দিয়ে কেবল মাত্র সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাসীন হওয়ার চেষ্টা করেন। পরিণামে দেশ সামরিক শ্রেণীর শাসনাধীন হয়ে পড়ে। মুয়ান শি-কাই -এর জীবিতকালে তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রভাবে বিশৃঙ্খলার মধোও কিছুটা শৃঙ্খলা বজায় ছিল। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর দেশে সামরিক প্রশাসকদের পারস্পরিক স্বার্থ ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায়। যার ফলে রাষ্ট্রীয় জীবন বিশৃঙ্খলা হয়ে পড়ে।