নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সংস্কার।
নেপোলিয়ন একজন সাধারণ সৈনিক রূপে জীবন শুরু করেছিলেন। নানা গুণের অধিকারী নেপোলিয়নের জীবন শেষ হয় ফ্রান্সের সম্রাট হিসেবে। নেপোলিয়ন নিজের ক্ষমতাকে সংহত করার পর নিজের ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রান্সের অভ্যন্তরে নানা সংস্কারে মন দেন।
নেপোলিয়নের প্রশাসনিক সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য ছিল কেন্দ্রীভূত স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করা। তিনি সমগ্র দেশকে ৮৩টি প্রদেশে বিভক্ত করে সেগুলিতে আলাদা আলাদা শাসনকর্তা নিয়োগ করেন।
নেপোলিয়ন অর্থনৈতিক সংস্কারের ওপর বিশেষ নজর দিয়েছিলেন। তিনি মুদ্রানীতির সংস্কার করেন। তিনি নতুন কোনো কর না চাপিয়ে বকেয়া ও ভবিষ্যৎ কর আদায়ের ওপর জোর দেন। তিনি ব্যবসায়ী ও কৃষকদের জন্য স্বল্প সুদে আর্থিক ঋণদানের ব্যবস্থা করেন ৷
ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রদেশে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের পরস্পর বিরোধী আইনগুলির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য এবং এই বিভিন্ন ধরনের আইনগুলিকে মালার ন্যায় একসূত্রে গ্রথিত করার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন এক 'আইন সংহিতা' রচনা করেন।
নেপোলিয়ন ধর্ম সংস্কারের উপর জোর দিয়েছিলেন। নেপোলিয়নের মধ্যে ধর্মের কোন রূপ গোঁড়ামি ছিল না। তিনি পোপের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিলেন। কারণ তখন খ্রিস্টান জগতে পোপের যথেষ্ট নৈতিক প্রভাব ও প্রতিপত্তি ছিল। নিজেকে শক্তিশালী করে তোলার জন্ম নেপোলিয়ন যাজক সম্প্রদায়ের সমর্থন লাভে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন। বিপ্লবের সময় রচিত 'যাজক সম্প্রদায়ের সংবিধান' বহু লোককে অসন্তুষ্ট করেছিল। এই অসন্তোষ দূর করার জন্য নেপোলিয়ন ১৮০১ সালে পোপের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন, যা 'কনক্যাট' বা 'মিমাংসা নীতি' নামে অভিহিত।
নেপোলিয়ন শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেছিলেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করতে প্রতিটি কমিউনে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য উদ্যোগী হন। তিনি চিকিৎসাবিদ্যা শেখানোর জন্য মেডিকেল স্কুল গড়ে তুলেছিলেন। এছাড়া তিনি সামরিক শিক্ষা দেবার জন্য ৩৪টি 'লিসে' বা আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে ভুলেছিলেন।
নেপোলিয়ন আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেছিলেন। যেমন- (১) নেপোলিয়ন সেচ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেছিলেন। (২) নেপোলিয়ন অসংখ্য রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছিলেন। (৩) নেপোলিয়ন প্রাচীন অট্টালিকাগুলি সংস্কার করেছিলেন এবং বহু নতুন সৌধ নির্মাণ করেছিলেন। (৪) নেপোলিয়ন বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রেষ্ঠ শিল্পকলা সংগ্রহ করে প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাদুঘরে পরিণত করেন।
সুতরাং বলা যায় যে, নেপোলিয়ন সংস্কারের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করেন। সেখানে তিনি আইনের শাসন ফিরিয়ে আনেন। সংস্কারক নেপোলিয়ন পূর্বতন ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। নেপোলিয়নের সংস্কারগুলি শুধু ফ্রান্সকে নয়, গোটা ইউরোপকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল।