কনসার্ট অব ইউরোপ বা ইউরোপীয় শক্তি সমবায়।
ফরাসিবিপ্লব প্রসূত ভাবধারা যাতে পুনরায় ইউরোপের শাস্তিকে প্রভাবিত করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে ভিয়েনা সম্মেলনের চার বৃহৎ শক্তি নিজেদের মধ্যে একটি মৈত্রী চুক্তি স্থাপন করে। এই চার বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি হল ইংল্যান্ড, রাশিয়া, প্রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে যে মিত্র নীতি গড়ে ওঠে তাই ইউরোপীয় শক্তি সমবায় বা কনসার্ট অব ইউরোপ নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে এই শক্তি সমবায়ে ফ্রান্স যোগ দেয়।
কনসার্টের গৃহীত কর্তব্যে বলা হয়-
- যুদ্ধ পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ: যুদ্ধ বাঁধার সম্ভাবনা রয়েছে এমন ক্ষেত্রে যুদ্ধ বিরতির জন্য শক্তি সমবায় হস্তক্ষেপ করবে।
- হস্তক্ষেপ না করা: অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে শক্তি সমবায় হস্তক্ষেপ করবে না।
- শাস্তি রক্ষার্থে: ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে শক্তি সমবায় শান্তি রক্ষকের দায়িত্ব পালন করবে।
কনসার্ট অব ইউরোপ ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অর্থাৎ মোট দশ বছর টিকে ছিল। এই দশ বছরে শক্তি সমবায়ের মোট পাঁচটি অধিবেশন বসে।
দ্বিতীয় অধিবেশনঃ ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ট্রপো শহরে কনসার্টের দ্বিতীয় অধিবেশন বসে। এই সম্মেলনে রাশিয়া প্রস্তাব রাখে-কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সূচনা হলে কনসার্টের তাতে হস্তক্ষেপ করা উচিত। কিন্তু এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড।
তৃতীয় অধিবেশনঃ ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে লাইপেকে কনসার্টের তৃতীয় অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে অস্ট্রিয়াকে নেপল্স ও পিডমন্টের বিদ্রোহ দমনের অধিকার দেওয়া হয়।
চতুর্থ অধিবেশনঃ ভেরোনায় কনসার্টের চতুর্থ অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে স্পেনের ওপর হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পঞ্চম অধিবেশনঃ ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট পিটার্সবার্গে কনসার্টের পঞ্চম অধিবেশন বসে। এ অধিবেশনে গ্রিসের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা হয়েছল।
কনসার্টের ব্যর্থতার কারণগুলি হল-
- মতাদর্শগত বিরোধ: ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড ছিল গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী কিন্তু প্রাশিয়া, রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া ছিল রক্ষণশীল স্বৈরতন্ত্রের ধধ্বজাধারী। ফলে এদের মধ্যে মতাদর্শগত বিরোধ ঘটা ছিল স্বাভাবিক।
- পৃথক জাতীয় স্বার্থ: পৃথক পৃথক জাতীয় স্বার্থ কনসার্টের উদ্দেশ্যকে সফল হতে দেয়নি।
- পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস: পারস্পরিক সম্মেহ ও অবিশ্বাস কনসার্টের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল।
ব্যর্থ হলেও কনসার্টের কৃতিত্বকে পুরোপুরি অর্থাপার করা যায় না। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সমস্যার সমাধানে এর যৌথ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আমরা এলা সদিচ্ছার প্রতিফলনই দেখতে পাই।