আঁতাত কর্তিয়েল / ইঙ্গ-ফরাসি চুক্তি।
শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব উপনিবেশ বিস্তার করা। এই উপনিবেশ বিস্তার নিয়েই ফ্রান্স, রাশিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। কিন্তু জার্মান নৌশক্তি বৃদ্ধি ও কাইজারের সাম্রাজ্যবাদী নীতিতে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ভীত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় ঔপনিবেশিক বিবাদ মেটানোর জন্য ইংল্যান্ড ফ্রান্সের সঙ্গে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে যা ইঙ্গ-ফরাসি চুক্তি বা আঁতাত কর্ডিয়েল নামে পরিচিত।
আঁতাত কর্ডিয়েলের পটভূমি নিম্নরূপ-
প্রথমত, রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত রি-ইনস্যুরেন্স চুক্তি (১৮৮৭ খ্রি.)-কে কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম পুনর্নবীকরণ না করায় রাশিয়া নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে।
দ্বিতীয়ত, ফ্রান্স রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিশক্তি চুক্তি স্বাক্ষর করার (১৮৯৪ খ্রি.) পরে ব্রিটিশ অধিকৃত ফ্যাসোডো স্থান দখলের লক্ষ্যে যুদ্ধ শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ফ্রান্স এই যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় বিশ্ব রাজনীতিতে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। → তৃতীয়ত, অপরদিকে কাইজারের নেতৃত্বে উত্তরোত্তর জার্মানির নৌশক্তি বৃদ্ধি ও ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রসারের চেষ্টা ইংল্যান্ডকেও চিন্তিত করে তোলে। জার্মানি মহাদেশীয় শক্তির পরিবর্তে বিশ্বশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাইলে দুই বৃহৎ ঔপনিবেশিক শক্তি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স নিজেদের বিবাদ ভুলে পরস্পরের কাছাকাছি আসার তাগিদ অনুভব করে, যারই ফলশ্রুতি আঁতাত কর্ডিয়েল।
ফলাফল: আঁতাত কর্ডিয়েলের ফলাফল নিম্নরূপ-
(১) আধিপত্যের স্বীকৃতি: আঁতাত কর্ডিয়েল স্বাক্ষরের ফলে শ্যাম, মাদাগাস্কার,পশ্চিম আফ্রিকা ও মিশর নিয়ে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে বিরোধের মিমাংসা ঘটে। চুক্তির ফলে ফ্রান্স যেমন মিশরে ইংল্যান্ডের সার্বভৌম অধিকার মেনে নেয়, ইংল্যান্ডও তেমনি মরক্কোয় ফ্রান্সের আধিপত্য স্বীকার করে নেয়।
(২) ত্রিশক্তি আঁতাত গঠন: আঁতাত কর্ডিয়েল স্বাক্ষরের ফলে ইওরোপীয় রাজনীতিতে অতি দ্রুত পটপরিবর্তন ঘটে। রাশিয়াকেও এই চুক্তিতে আবদ্ধ করা হয় এবং পারস্য, আফগানিস্তান ও তিব্বতে রাশিয়ার 'বিশেষ অধিকার' ইংল্যান্ড স্বীকার করে নেয়। ফলে এই তিন শক্তির মধ্যে (ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া) ত্রিশক্তি মৈত্রী বা ত্রিশক্তি আঁতাত গড়ে ওঠে (১৯০৭ খ্রি.)। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ল্যাপডাউন বলেছেন-জার্মানিকে বাধা দিতে এইভাবে ব্রিটেন সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিল।
আঁতাত কর্ডিয়েলের গুরুত্ব নিম্নরূপ-
প্রথমত, আঁতাত কর্ডিয়েল কোনো সামরিক চুক্তি নয়। এটা ছিল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যেকার বিবাদের অবসানের লক্ষ্যে এক চুক্তিমাত্র। এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই রাষ্ট্রের মধ্যে বিবাদ অনেকটাই কমে আসে এবং উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে সৌহার্দ্র ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
দ্বিতীয়ত, এই আঁতাত কর্ডিয়েলের অন্যতম গুরুত্ব হল এই যে ইংল্যান্ডের নেতৃত্বে জার্মান বিরোধী রাষ্ট্রজোট (ত্রিশক্তি আঁতাত) গঠন। তাই ঐতিহাসিকদের মতে আঁতাত কর্ডিয়েল ছিল একটি কুটনৈতিক বিপ্লব।