বাণিজ্যবাদ বলতে কি বোঝ ও ইউরোপের অর্থনেতিক ইতিহাসে বাণিজ্যবাদের গুরুত্ব কি? (Mercantilisay)

বাণিজ্যবাদ বলতে কি বোঝ ও ইউরোপের অর্থনেতিক ইতিহাসে বাণিজ্যবাদের গুরুত্ব কি? (Mercantilisay)

 বাণিজ্যবাদ বলতে কি বোঝ ও ইউরোপের অর্থনেতিক ইতিহাসে বাণিজ্যবাদের গুরুত্ব কি? (Mercantilisay)

বাণিজ্যবাদ বলতে কি বোঝ ও ইউরোপের অর্থনেতিক ইতিহাসে বাণিজ্যবাদের গুরুত্ব কি? (Mercantilisay)

বাণিজ্যবাদ হল এমন একটি অর্থনৈতিক নীতি যা কোন দেশের অর্থনীতিতে রপ্তানী বাড়ানো এবং আমদানি কমানোর জন্য তৈরী করা হয় । এর দ্বারা ব্যবসায়িক পণ্যগুলির ওপর সাম্রাজ্যবাদ, শুল্ক ও ভর্তুকির গুরুত্ব আরোপ করা হয় । এই নীতি দ্বারা ব্যবসায়ের ইতিবাচক ভারসাম্য রক্ষা করে বিশেষত সমাপ্ত পন্যগুলির মাধ্যমে আর্থিক মজুদ সংগ্রন্থের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে।


খ্রিষ্টীয় ষোড়শ থেকে অষ্টদশ শতকে ইউরোপের আধুনিক অঞ্চল সমুহে বাণিজ্যবাদের প্রভাব দেখা গিয়েছিল । এর দ্বারা রাষ্ট্রীয় শক্তিকে বৃদ্ধি করার উদেশ্যে দেশের অর্থনীতের ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রনকে প্রচার করে । উৎপাদিত বস্তুর ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্কহার ছিল এই নীতির এক সাধারণ বৈশিষ্ট্য ।


বাণিজ্যবাদ শব্দটি বহু পূর্বেই ব্যবহার করলেও বাণিজ্য ব্যবস্থা কথাটির অ্যাডাম স্মিথ সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন । ইউরোপের অর্থনীতিকে এক রূপান্তরের সময়ে সৃষ্টি হয় । বিচ্ছিন্ন সামন্ততান্ত্রিক রাজ্যগুলি ধীরে ধীরে জাতীয় রাজ্যে পরিনত হতে থাকে । জাহাজ নির্মানে প্রযুক্তিগত পারিবর্তন ও নগর  গুলির বিকাশের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে । আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দ্বারা কিভাবে রাজ্যগুলিকে সর্বোত্তম সাহায্য প্রদান করা যায়, তাই ছিল বাণিজ্যবাদের মুখ্যলক্ষ্য । এর সাথে সাথে আধুনিক হিসাবরক্ষণ পদ্ধতির প্রচলনের ফলে ব্যবসায়ের ভারসাম্য রক্ষার্থে বাণিজ্যের অন্তঃ ও

বহিপ্রবাহের ওপর পুংখানুপুঙ্খ নজরদারি চালান হয় । বাণিজ্যবাদের আগে ইউরোপে অর্থনৈতিক কাজ পরিচালনা করত মধ্যযুগীয় শিক্ষাগত তত্ত্ববিদরা । এদের লক্ষ্য ছিল ধার্মিকতা ও ন্যায়বিচারের খ্রিষ্টীয় সতবাদের সাথে সামঞ্জস্যগুণ এব অর্থনেতিক ব্যবস্থা খুজে পাওয়া। 



বাণিজ্যবাদ  নবজাগরনের শেষ দিকে এবং আধুনিক সমমকালের প্ররাম্ভে (পঞ্চদশ থেকে অষ্টাদশ শতক) পুরো ইউরোগের অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনার প্রধান কেন্দ্র বিন্দু হয়ে ওঠে । বাণিজ্যবাদের নীতির দ্বারা প্রাক-আধুনিক ভেনিস, জেনোয়া ও পিসা শহরে  সোনা ও রুপার বাট (Cullion) দ্বারা ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্য নিমন্ত্রনের প্রমাণ মেলে । বাণিজ্যবাদ লেখকরা অর্থ মজুদ অপেক্ষা অর্থ সঞ্চালনে ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন । ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম এলিজাবেথের সময়কালে (১৫৫৮-১৬০৩) বাণিজ্যবাদের সংস্কৃতরূপ প্রকাশ পেয়েছিল । রানী-এলিজাবেথ পালামেন্টে বাণিজ্য ও নৌবহন আইন প্রচার করে ইংরেজ জাহাজের সুরক্ষার জন্য নৌবোহিনীকে আদেশ দেন । রানী স্পেনের সাথে বাণিজ্য লড়াই করার জন্য শক্তিশালী ব্রিটিশ নৌবহর  বাড়ানোর প্রস্তাব দেন । এর ফলে নির্মাণ ও গৃহে বুলিয়ান বাড়ানোর স্পেনের সাথে লড়াইয়ে ব্রিটেন সফল হয় ও ঊনবিংশ শতকে এক সর্বব্যাপী সাম্রাজ্য রুপে স্বক্ষম হয় । ফ্রান্সেও বাণিজ্যবাদ তত্ত্ব প্রয়োগ করা হযেছিল । রাজা চতুদশ লুই তাঁর অর্থ দপ্তরের নিয়ামক জিন ব্যাপটিস কালবার্ট-এর সাহায্যে ১৬৫৫ থেকে ১৬৮৩ পর্যন্ত এই নীতি প্রয়োগ করেন । বাণিজ্য কাজের অর্থনেতিক নীতিগুলিকে বিশেষত এক টানা যুদ্ধের সাথে রাজ্য গঠনের লক্ষে রাষ্ট্র অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ও বিদেশী বিরোধীদের দুর্বল করার উপায় অনুসন্ধান করার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল । অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ক্ষমতা লাভের পর থেকেই ইউরোপে বাণিজ্যবাদের ধারণা ধীরে ধীর মলিন হতে শুরু করে।



 ১৫০০ থেকে ১৭৫০ এর মধ্যে যেসব ইউরোপীয় অর্থনীতিবিদ ছিলেন তাদের বণিক হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়। তবে মূল ইংরাজী শব্দটি হল 'বণিক প্রথা' বা বাণিজ্য প্রথা'। বানিজ্য বাদ শরটি জার্মান থেকে ইংরাজীতে ব্যবহার হতে উনিশ শতকের প্রথমার্ধে। ষোড়শ শতক থেকেই বাণিজ্য বাদ কেন্দ্রীক সাহিত্যের বিকাশ লক্ষ্য করা যায় ব্রিটেন, ইতালী, ফ্রান্সও জার্মানীতে।




বাণিজ্যবাদ মূলত ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে কেন্দ্রে করেই গড়ে উঠে ছিল । এর প্রধান নীতিগুলি ছিল নিম্নরাণ

  1. উৎপাদিত পন্যের ওপর উচ্চ শুল্ক হার স্থাপন
  2. অন্য জাতির সাথে বাণিজ্য করতে উপনিবেশগুলিকে বাধা প্রদান।
  3. প্রধান কদরের সাথে সংযুক্ত বাজারের ওপর একচেটিয়া অধিকার কুক্ষিগত করা।
  4. সোনা ও রূপার রপ্তানি বন্ধ করা ।
  5. নৌ-আইন দ্বারা বিদেশী জাহাজের সাথে বাণিজ্য করা 
  6. রপ্তানি দ্রব্যের ওপর  ভতুর্কি আরোপ ৷
  7. গবেষণা ও ভর্তুকি দিয়ে উৎপাদন ও শিল্পের উন্নতিতে গুরুত্ব দেওয়া। 
  8.  মজুরী নিয়ন্ত্রন করা।
  9. গার্হস্থ্য সম্পদ ব্যবহারে গুরুত্ব প্রদান।
  10. ব্যবসায়ে নিঃশুল্ক বাধা মাধ্যমে গার্হস্থ্য খরচ সীমাবদ্ধ করা।




ফ্রান্সে রাজতন্ত্র প্রভাবশালী হয়ে ওঠার পরই ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে বাণিজ্যবাদের উদ্ভব হয় । তবে এ সর্বাধিক ব্যপ্তি সপ্তদশ শতকে অর্থমন্ত্রী জিন ব্যাপটিষ্ট কালবার্টের সকালে হয়েছিল । তার পরিচালনার ফরাসী সরকার সীমিত আমদানি ও বহুল রপ্তানীর ওপর নজর দেয় । শিল্পগুলিকে শসরায় সংঘ এবং একচেটিয়া প্রতিষ্ঠানে বিভক্ত করা হয় এবং বিভিন্ন পক্ষ কিভাবে উৎপাদিত হবে তা রাজ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয় । শিল্পকে উৎসাহিত

করার জন্য বিদেশী কারিগর আমদানি করা হয়  ৷ কলবার্টের নীতির-ফলে ফ্রান্সের অর্থনীতের উন্নতি হয় এবং ফ্রান্স ইউরোপের অন্যতম প্রভাশালী রাষ্ট্রে পরিনত হয় ৷



ইংল্যান্ডে লং পালামেন্ট সরকারের সময়ে (১৫৫০-৫০) বাণিজ্যবাদ শীর্ষে পৌছেছিল । বিশ্বব্যাপী অমদানি কমিয়ে রপ্তানি বারানোর লক্ষ্যে সরকার দেশীয় শিল্পে বাণিজ্য বাধা বিধিবিধান ও ভুতর্কির মাধ্যমে তাদের বণিকদের সুরক্ষিত করেছিল । ইংল্যান্ডের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বানিজ্য উদ্বৃত সৃষ্টি করা যাতে সোনা ও রূপা লন্ডনে জমা হয় । সরকার থেকে তার কর ও রাজস্ব আদায় করত। সরকার তার প্রাপ্ত রাজস্বের বেশিরভাগটাই রাজকীয় নৌবেহরের উন্নতিতে ব্যয় করত, যারা ব্রিটেনের উপনিশেব গুলিকে অন্য শত্রুর থেকে রক্ষা করত । রপ্তানীকে উৎসাহ প্রদান ও আমদানি সীমিত করার লক্ষ্যে প্রচুর নিয়ম করা হল এবং রপ্তানির ওপর শুল্ক এবং আমাদানির ওপর খসরাত লগু করা হল । কিছু কাঁচামালের রপ্তানী সম্পূর্ণ বন্ধ করা হল । নতুন আইনের দ্বারা ইংল্যান্ডের গৃহবাণিজ্য এ বিদেশী বণিকদের সমম্পূর্ণ বহিষ্কার করা হল । ব্রিটিশ উপনিবেশগুলির উৎপন্ন-কাঁচামাল শুধুমাত্র ব্রিটেনকেই রপ্তানী করা হবে বলে স্থির করা হল ।


ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড ব্যতিত ইউরোপের অন্যান্য দেশও বাণিজ্যবাদকে গ্রহণ করেছিল । ত্রিশ বছরের যুদ্ধের পর মধ্য ইউরোপ ও ক্যান্ডিনেভিয়াস বাণিজ্যবাদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে । সুইডেনের ক্রিস্টিয়ানা, করল্যান্ডের কেটলার এবং ডেনমার্কের চতুর্থ কিষ্টিমান বাণিজ্যবাদের  মূল প্রবক্তা ছিলেন । প্রাশিয়াতেও ফ্রেডরিকের সময়কালে এর বিকাশ হয় । স্পেন প্রথমদিকে বাণিজ্যবাদ থেকে উপকৃত হলেও দীর্ঘমেয়াজ এটি ধসে পড়ে । তাদের কোষাগারের স্বর্ণ ও রৌপ্যের স্ফীততার সাথে বিশাল মুদ্রাস্ফীতির সামঞ্জস্য রাখতে তারা অক্ষম হয় ।


বাণিজ্যবাদ যুদ্ধের অর্থনৈতিক সংস্কারন বলে অনেকে মনে করে থাকেন । অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধ। ফরাশী-ডাচ যুদ্ধ ইত্যাদিকে বাণিজ্যবাদের ফলাফল বলে মনে করা হয় । এই প্রতেটি যুদ্ধেই শত্রুপক্ষের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছিল । বাণিজ্যবাদ সাম্রাজ্যবাদকে ও পরিস্ফুট করে, তারা সোনা, রূপা, ও বাজার দখল করার লক্ষ্যে অনেক দেশেই তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগ দেন । সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা বিদেশী উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে বাণিজ্য তত্ত্ব এর লক্ষ্য ও আদর্শ উভয়ই জাতীয় ও সাম্রাজ্যবাদী হয়ে ওঠে । 


অষ্টাদশ শতক থেকে ব্রিটেনে বনিকদের বিধিনিষেধ কমতে শুরু করে এবং উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সরকার মুক্ত বাণিজ্য নীতি ঘোষণা করেন । ফ্রান্সে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ছিল রাজপরিবারের হাতে এবং ফরাসী বিপ্লব অবধি বানিজ্যবাদ অব্যাহত ছিল । জার্মানীতে ১৯ ও ২০ শতকের গোড়ার দিকে বাণিজ্যবাদ এক আদর্শ রূপে টিকে রইল ।


আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟