প্রথম কুমারগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করো।Kumaragupta I

প্রথম কুমারগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করো।

 প্রথম কুমারগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করো।

প্রথম কুমারগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করো।


৩০০-৬০০ খ্রিস্টাব্দ হল গুপ্ত শাসনব্যবস্থার উত্থান, বিকাশ অর্থাৎ, সামগ্রিক অস্তিত্বকরণের সময়কাল, যা ভারতের ইতিহাসে একাধিক কারণে উল্লেখ্য। একাধিক সুশাসকের পরিচালনায় গুপ্তসান্ডাজ্যের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। এই সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে বহু গুপ্তশাসকের নাম উঠে আসে। পূর্ববর্তী শাসক সমূদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মতো গুপ্তসাম্রাজ্য সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হয়েছি। প্রথম কুমারগুপ্তের রাজত্বকালে (৪১৫-৫৫ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি সুদক্ষভাবে শাসনভার পরিচালনা করেন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ও ধ্রুবাদেবীর পুত্র হলেন প্রথম কুমারগুপ্ত। সাম্রাজ্যরে সংহতিদানে প্রথম কুমারগুপ্তের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম কুমারগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করো।
কুমারগুপ্তের সোনার মুদ্রায় চিত্রিত সিংহের সাথে লড়াই


প্রথম কুমারগুপ্ত শাসনভার গ্রহণের পর থেকে গুপ্তসাম্রাজ্যের বিশাল ভূখণ্ডকে নিম্ন দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর আমলে (৪১৫-৫৫ খ্রিস্টাব্দ) একাধিক 'লেখমেলা' পাওয় গেছে, মতবিরোধে ১৪টি ধরা হয়। পূর্ববর্তী শাসকদের তুলনায় যা সর্বাধিক। প্রথম কুমারগুপ্ত 'অশ্বমেধ যজ্ঞ' আয়োজন করেন। তাঁর সম্পর্কে সম্যক অবহিত হওয়ার একটি উপাদান হল মুদ্রা। মূলত তাঁর আমলে স্বর্ণমুদ্রার মান পূর্বে জারি করা মুদ্রা মানের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত ছিল। মুদ্রায় ধনুর্বান হাতে 'রাজমূর্তি', 'দণ্ডায়মান রাজমূর্তি', 'পদ্মাসনে দেবীমূর্তি' স্থান পেয়েছে। এছাড়া রৌপ্যমুদ্রায় ময়ূর প্রতীকও লক্ষণীয়। মহারাষ্ট্রে রৌপ্যমুদ্র ভান্ডারের নিদর্শন পাওয়া গেছে। স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা ছাড়াও প্রথম কুমারগুপ্তের আমলে তাম্রমুদ্রা জারিরও কিছু নিদর্শন মিলেছে।

প্রথম কুমারগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করো।
গুপ্ত যুগের ৯৬ খ্রিস্টাব্দে (৪১৫-৪১৬ খ্রিস্টাব্দ) কুমারগুপ্তের বিলসাদ স্তম্ভের শিলালিপি।


গুপ্তযুগের বিশাল এই সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি অর্থাৎ, পূর্ণতা পেয়ে গিয়েছিল সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তর আমলেই আর এই বিশাল ভূখন্ডের দায়িত্ব গ্রহণ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে সফলতা অর্জনই হল প্রথম কুমারগুপ্তের সম্মান অর্জনের প্রথম শর্ত। শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে প্রথম কুমারগুপ্তের রাজত্বকাল গুরুত্বপূর্ণ। মূলত তাঁর আমলে সাম্রাজ্য আপেক্ষিক শান্তিপূর্ণ ছিল। 'দামোদরপুর লেখ', 'তমুইল লেখ'ই তাঁর রাজত্বের নিদর্শন মেলে।


পশ্চিম ভারতের কিছু অঞ্চল প্রথম কুমারগুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিলেন কিনা অর্থাৎ, পশ্চিম ভারতে তাঁর আমলে রাজ্যবিস্তার হয়েছিল কিনা এই নিয়ে তীব্র মতবিরোধ। পশ্চিম মালবের মান্দাসোর তাঁর আমলে সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল। এই বক্তব্য প্রসঙ্গে ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, পি. এল. গুপ্ত, বি. এন. মুখার্জি প্রমুখের মতামত লক্ষণীয়। কিছু কিছু লেখ এই তথ্যের সত্যতা নির্ধারণের অঙ্গীকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন-মালববর্ষ (৪১৭খ্রিস্টাব্দ), 'বিহারকোট্টা লেখ', 'মান্দাসোর লেখ' প্রভৃতি। মান্দাসোর অধিকার প্রসঙ্গে একাধিক মতামত উল্লেখ্য। মনে করা হয় মূলত ধীরে ধীরে মান্দাসোর ঔলিকর বংশের ওপর কর্তৃত্ব রেখেছিলেন প্রথম কুমারগুপ্ত। তবে এ বিষয়ে ঐতিহাসিক মতভেদ তো রয়েছে। এছাড়া, দাক্ষিণাত্যের কিছু অঞ্চল জয় করা নিয়েও মতভেদ লক্ষণীয়। প্রথম কুমারগুপ্তের আমলে এইচ. সি. রায়চৌধুরী, এস, আর, গয়াল প্রমুখ এ বিষয়ে মতপ্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন শিলালেখর পরিপ্রেক্ষিতে একটি তথ্য উল্লেখ প্রথম কুমারগুপ্ত নর্মদার দেখে 'বাঘ্রসংকল' অরণ্যভূমিতে আক্রমণ চালিয়েছিলেন এবং তাই তাঁকে একশ্রেণির র লক্ষণীয় 'ব্যাঘ্রবল পরাক্রম' অভিধায় অভিধাবিত করা হয়েছে।


প্রথম কুমারগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করো।
প্রথম কুমারগুপ্ত, "তীরন্দাজ ধরণের" মুদ্রা। রাজা কুমারগুপ্ত, নিম্বতে, গরুড় পতাকা পিছনে রেখে তীর ও ধনুক ধরে আছেন। ব্রাহ্মী কিংবদন্তি ডানদিকে উল্লম্বভাবে কু-মা-রা । বিপরীত: দেবী লক্ষ্মী , খোলা পদ্মের উপর মুখ করে বসে আছেন, মুকুট এবং পদ্ম ধারণ করেছেন। প্রায় ৪১৫-৪৫৫ খ্রিস্টাব্দ।



সুদক্ষভাবে শাসনকার্য পরিচালনার পাশাপাশি প্রথম কুমারগুপ্ত ধর্মীয় ও জনকল্যাণমূলক ফেরও ছিলেন। জনমখী ক্রিয়াকলাপে বিশেষ উদ্যোগী ছিলেন। 'লেখ' সম্মিলিত তথ্যগুলি এর চরিত্রের এই দিকটি সম্পর্কে চিত্র তুলে ধরে। তিনি বহু সত্র নির্মাণের মাধ্যমে অন্নদানের তথা করেন, তিনি 'পরমধর্মসহিয়' ছিলেন। তিনি দেবতা 'কার্তিকের' ভক্ত ছিলেন। তিনি নির্মাণেও ব্রতী হন যেমন-পার্শ্বনাথের মূর্তি, জৈনমূর্তি, মান্দাসোর 'সূর্যমন্দির' প্রভৃতি। পমালাগুলি এর সাক্ষ্য বহন করে।


এখম কুমারগুপ্ত রাজত্বের বিস্তারিত দিকগুলির পাশাপাশি রাজত্বের অন্তিম পর্যায়ে দর্ধর্ষ গোমিত্র জাতির দ্বারা একটি বৈদেশিক সংকটের সম্মুখীন হন। স্কন্দগুপ্তর 'ভিটারি লেখ'-তে এই তথ্য উল্লিখিত আছে। ড. রোমিলা থাপার ও এন. কে. শাস্ত্রীর মতে, এই জাতি ছিল দুন। পরবর্তীকালে স্কন্দগুপ্ত দ্বারা এই যুণ আক্রমণ নির্মূল হয়।


দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজত্বের শৃঙ্খলিত মর্যাদা ও শান্তিপূর্ণতা রক্ষার্থে প্রথম কুমারগুপ্ত সফল হয়েছিলেন। এটাই তাঁর রাজত্বের গুরুত্ব, যাকে অস্বীকার করার কোনো স্থান নেই । পূর্বসূরী নামকরা সাম্রাজ্যবিস্তার ও অনেক বেশি দক্ষ হলেও 'বাংলা'কে নিজেদের ছত্রছায়ায় জনলেও বলিষ্ঠ শাসন কাঠামোর ভিত গড়ে ওঠে প্রথম কুমারগুপ্তর আমলেই এবং বলাবাহুল্য বংশানুক্রমিক অর্জিত সৈন্যবলেই কিন্তু পুত্র স্কন্দগুপ্ত সন্ত্রাস দমনে সফল হয় । এই অবশেষে বলা যায় ব্যক্তিত্ব, প্রতিভার মাধ্যমে সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা রক্ষায় প্রথম কুমারগুপ্তের শাসনকাল কৃতিত্বের দাবি রাখে।

ছবির সূত্রঃ- উইকিপিডিয়া

ইতিহাসের কন্ঠস্বর /itihasherkonthoshor
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ প্রথম কুমারগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোচনা করো।Kumaragupta I এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟