প্রতিবাদী ধর্মান্দোলনে চার্বাকদের প্রভাব আলোচনা করো। The influence of the Charvakas on the protestant religious movement

প্রতিবাদী ধর্মান্দোলনে চার্বাকদের প্রভাব আলোচনা করো।

 প্রতিবাদী ধর্মান্দোলনে চার্বাকদের প্রভাব আলোচনা করো 

The influence of the Charvakas on the protestant religious movement

বৌদ্ধধর্ম তথা প্রতিবাদী ধর্মগুলির পাশাপাশি সমসাময়িক যুগে আর একটি ভিন্ন দার্শনিক চিন্তাধারার উন্মেষ ঘটেছিল যা পরে বস্তুবাদী বা চার্বাক দর্শন নামে পরিচিত। প্রসঙ্গত বলা যায় বুদ্ধদেব, মহাবীর, মকখলি গোশালা প্রমুখরা পুরোপুরি নাস্তিক বা বাস্তববাদী ছিলেন না কারণ একান্ত সীমাবন্ধ শক্তির অধিকারী অতিপ্রাকৃত এক সত্তার অস্তিত্ব তাঁরা স্বীকার করতেন। আত্মার দেহ থেকে দেহান্তরে যাত্রার বিষয়টিকে তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন। এর ঠিক বিপরীত কথা শুনিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ও মহাবীরের সমসাময়িক দার্শনিক অজিত কেশকম্বলী, যাঁকে পরিপূর্ণ বস্তুবাদের প্রথম প্রবক্তা বলে মনে করা হয়। 



অজিত কেশকম্বলীর চিন্তাধারার আভাস মেলে পরবর্তীকালে চার্বাক মতবাদের মধ্যে। চার্বাক মতবাদের উদ্ভাবক হিসেবে সাধারণত বৃহস্পতির নাম করা হয়। এই কারণে এই দর্শনের আর এক নাম বার্হস্পত্য দর্শন। চার্বাকরা ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধী ছিলেন কারণ তাদের মতবাদে ভত্তি, পুজো, পার্বণ ও আচার অনুষ্ঠানের স্থান ছিল না যা ব্রাহ্মণ্যবাদের একটি বিশেষ অঙ্গ ছিল।

  1. চার্বাকরা তাঁদের দর্শনে মূল পাঁচটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেন। এগুলি হল যথাক্রমে- স্বভাববাদের অর্থ হলোই স্বভাবতই জগত বৈচিত্র্যের কারণ , অর্থাৎ জগত স্রষ্টা বা ঈশ্বরের ধারণা ভ্রান্ত।
  2. পরলোক বিলোপবাদের অর্থ হল পরলোকগামী আত্মার অভাবে পরলোকের ধারণার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
  3. দেহাত্মবাদের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, দেহের অভ্যন্তরস্থ আত্মার কল্পনা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
  4. প্রত্যক্ষ প্রামাণ্যবাদ-অর্থাৎ, যা প্রত্যক্ষ হয় না তার কোনো অস্তিত্ব নেই। এই ধারণা অনুযায়ী ঈশ্বরকে যেহেতু প্রত্যক্ষ করা যায় না সেহেতু ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।
  5. ভূতবাদের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, সকল জাগতিক বস্তুর উৎপত্তি ঘটেছে ভূতচতুষ্টয় থেকে। সুতরাং, চার্বাক দর্শনের মূল কথা হল দেহাতিরিক্ত আত্মার অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেই। কেননা প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ। আত্মাবলে যা প্রচার করা হয় তা নিছকই অনুমান। বলা বাহুল্য যে, অনুমান কখনো প্রমাণ হতে পারে না।


এককথায় চার্বাকরা তৎকালীন সামাজিক কাঠামোর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। যেহেতু তৎকালীন সামাজিক কাঠামোর মধ্যে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের ভক্তি, আচার, অনুষ্ঠান, পুজো-পার্বণ প্রচলিত ছিল তাই এই সকল কিছুর বিরুদ্ধে যখন প্রতিবাদী ধর্মান্দোলন শুরু হয়েছিল চার্বাকরাও এই আন্দোলনের একটি অংশ ছিল। তারা ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে প্রচার চালায়। তাঁরা বলেন অনুমান যেহেতু অসিদ্ধ তাই অনুমান নির্ভর সকল জ্ঞান যথা-ঈশ্বর, আত্মা, পরলোক সবকিছুই ভ্রান্ত। এই মতবাদে জোর দেওয়া হয়েছে। যথার্থ সুখভোগের ওপর। তাঁদের মতে, যথার্থ সুখ ভোগ করে নেওয়াই হল পুরুষার্থ। বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচার থেকে তাঁরা যে দূরে বিরাজ করতেন তার প্রমাণ মেলে তাঁদের কথায়-


"যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ ঝনং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ।

ভস্মীভূতস্য দেহস্য পুনরাগমনং কুতঃ।।"

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟