ভারত স্বাধীনতা আইন সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, ভারত স্বাধীনতা আইন টীকা লেখ India Independence Act

ভারত স্বাধীনতা আইন সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, ভারত স্বাধীনতা আইন টীকা লেখ

 ভারত স্বাধীনতা আইন সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, ভারত স্বাধীনতা আইন টীকা লেখ

ভারত স্বাধীনতা আইন সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, ভারত স্বাধীনতা আইন টীকা লেখ


১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পনেরোই আগস্ট ভারতে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটেছিল, ব্রিটিশ ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। যে দলিলের মাধ্যমে এই দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়, ঘটনাটি আইনসিদ্ধ হয়, তার নাম হল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ভারত স্বাধীনতা আইন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী অ্যাটলি আইনসভার নিম্নকক্ষে ভারত স্বাধীনতা বিলটি পেশ করেন। কোনো সংশোধনী ছাড়াই নিম্নকক্ষ ১৫ জুলাই বিলটি পাশ করেছিল, পরের দিন উচ্চকক্ষে তা পাশ হয়ে যায়। ১৮ জুলাই রাজা ষষ্ঠ জর্জ বিলটিতে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর দিলে এটি আইনে পরিণত হয়।



বড়োলাট মাউন্টব্যাটেন ভারত স্বাধীনতা বিলের খসড়া নিয়ে কংগ্রেস মুসলিম লিগ ও অন্যান্য ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেছিলেন। তাদের মতামত নিয়ে খসড়াটিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়। বলা যায় ব্রিটিশ সরকার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেছিল। উচ্চকক্ষে লর্ড স্যামুয়েল বিলটি সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে ‘এটি হল যুদ্ধ ছাড়াই একটি শান্তি চুক্তি' । এই আইনের প্রথমেই বলা হয়েছিল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পনেরোই আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র স্থাপিত হবে। সিন্ধু, ব্রিটিশ বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা নিয়ে গঠিত হবে পাকিস্তান। বাংলা ও পাঞ্জাবের সীমানা চিহ্নিতকরার জন্য দুটি কমিশন গঠন করা হবে। দুই ডোমিনিয়নে রাজা কর্তৃক নিযুক্ত দুজন গভর্নর-জেনারেল থাকবেন। যদি কোনো দেশের আইনসভা আপত্তি না করে দুদেশের জন্য একজন গভর্নর-জেনারেল থাকতে পারেন। দুই দেশের আইনসভা নিজ নিজ দেশের আইন প্রণয়ন করবে। পনেরোই আগস্টের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও মন্ত্রীসভার এই দুই দেশের ওপর কোনো এক্তিয়ার থাকবে না। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পনেরোই আগস্ট থেকে ব্রিটিশ সরকার ও দেশীয় রাজাদের মধ্যে যেসব চুক্তি, সন্ধি ইত্যাদি ছিল সেগুলি বাতিল হয়ে যাবে। দেশীয় রাজ্যগুলি তাদের সুবিধামতো যে-কোনো ডোমিনিয়নে যোগ দিতে পারবে। উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ব্রিটিশ সরকারের যে দায়-দায়িত্ব ছিল তা বাতিল হয়ে যাবে। 


ভারতের স্বাধীনতার প্রস্তুতি পর্বে লর্ড মাউন্টব্যাটেন বড়োলাট হিসেবে ছিলেন, ভারত স্বাধীন হবার পরও ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুন পর্যন্ত তিনি ঐ পদে ছিলেন। জিন্নাহ্ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর- জেনারেল হন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুনের পর চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারি ভারতের নতুন গভর্নর-জেনারেল হন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি নতুন প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান প্রবর্তিত হলে গভর্নর- জেনারেলের পদের অবলুপ্তি ঘটে, রাজেন্দ্রপ্রসাদ নতুন প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের রাজা ভারতের রাজা হিসেবে ছিলেন, ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ থেকে ঐ পদ উঠে যায়। ভারত প্রজাতন্ত্র বলে ঘোষিত হলেও কমনওয়েলথের সদস্য রয়ে যায়। ব্রিটিশ কমনওয়েলথের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শুধু কমনওয়েলথ।



১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাইয়ের ভারত স্বাধীনতা আইন হল দুশো বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের শেষ আইন। আইনানুগ শান্তিপূর্ণ পথে ভারত ইংল্যান্ডের হাত থেকে ক্ষমতা লাভ করেছিল। এজন্য একে যুদ্ধ ছাড়াই শান্তি চুক্তি বললে অত্যুক্তি হয় না।



About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟