আকবর প্রবর্তিত মনসবদারি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচন কর
![]() |
ভারতবর্ষে মুঘল শাসন ব্যবস্থার এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল মনসবদারি প্রথা, ১৫৭১ সালে মোঘল সম্রাট আকবর মনসবদারী প্রথা চালু করেন এবং জায়গিরদারি প্রথাকে বাতিল করে দেন। প্রায় ৬৬ রকমের মনসবদারদের পরিচয় পাওয়া যায় আকবর- ই-আকবরীতে । মনসব কথাটির অর্থ হল পদমর্যাদা, সাধারনত উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীগণকে মনসবদার বলে অভিহিত করা হত, সম্রাট আকবর মোঘল শাসনব্যবস্থার সংস্কার করে এই মনসবদারি প্রথা চালু করেন । এই প্রথা যেমন জটিল তেমনি অভিনব, তিনি মুঘল শাসন ব্যবস্থার সংস্কার করে । জায়গির প্রথা বহু অংশে লোপ করে এই মনসবদারি প্রথা চালু করেন । এই প্রথার বৈশিষ্ট্যগুলি হল
মনসবদারী প্রথার বৈশিষ্ট্য
- মনসবদারি ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক ছিলেন সম্রাট আকবর, মনসবদার নিয়োগ, পদোন্নতি, পদচ্যুতি সমস্ত কিছুই সম্রাটের ইচ্ছানুসারে হত । মনসবদারদের পদ বংশানুক্রমিক ছিল না, তবে মৃত মনসবদারের পুত্র অনেক সময় মনসবদারের পদ পেত, আবার সম্রাট ইচ্ছা করলে কোনো সাধারণ মানুকেও মনসবদার পদে নিয়োগ করতেন।
- তুর্কি বা আফগান নিম্নতর সেনাপতিরা উর্ধতর সৈনাপতির অধিনস্থ ছিল । জাট ও সওয়ার এই দুই ধরনের পদ ছিল ৷ মনসবদারি ব্যবস্থায় জাঠ ও শওয়ার এই দুটি দিক ছিল । জাঠ ছিল মনসবদারের অধিনত পদমর্যাদা, এবং শওয়ার শব্দটিত দ্বারা মনসবদারের অধীনে ঘোড়শওয়ার এবং সৈনিকের সংখ্যাকে বোঝায় ৷
- মনসবদারদের প্রধান দায়িত্ব ছিল তাঁর অধীনস্ত সৈনিকদের নিয়ে যুদ্ধ করা, আকবরের শাসন ব্যবস্থায় মনসর্বদাররা দশটি সৈন্যের অধিনায়ক থেকে দশ হাজার সৈন্যের অধিনায়ক পর্যন্ত মোট ৩৩টি শ্রেণিতে বিভক্ত হিল, পঞ্চাশ হাজারের উদে মনসব গুলি সাধারণত রাজপুতদের জন্য নির্দিষ্ট করা হত ৷ রাজপুতদের দশহাজারি, আট হাজারি এবং সাতহাজারি, এই তিনটি সর্বোচ্চ মনসবদারি পেতেন।
- মনসবদাররা সাধারনত জামগিরের মাধ্যমে বেতন পেতেন । তবে নগদ অর্থে মনসবদাররাও বেতন পেতেন । আকার জায়গিরের পরিবর্তে নগদে বেতন দেওয়া বেশি পছন্দ করতেন । তবে মনসবদাররা নিজ নিজ পদমর্যাদা অনুযায়ী বেতন পেতেন । এর সাথে ঘোড়া, হাতি, উট, পংতি পশুও পেতেন ৷
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার থেকে বোঝা যার সম্রাট আকবর 'মনসবদারি প্রথা প্রচলন করার জন্য কতগুলি গুরুত্ব পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলে, তিনি সামরিক পদমর্যাদার নিরিখে মনসবদারদের বিভিন্ন স্তরে ভিত করেন । জাঠ ও শওয়ার ভিত্তিতে এই পদমর্যাদা স্থীর করা হয়েছিল এবং সেনাদলের সংখ্যা অনুসারে তাদের বৈতন স্থির করা হত । সামরিক ব্যবস্থা ফলে আকবর উন্নত সামরিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল ।